ভস্মীভূত সিপিএম কর্মীর বাড়ি। (ডান দিকে) তৃণমূলের হামলায় জখম সিপিএম-এর বুথকর্মী। জামুড়িয়ায় সোমবার। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
ভোট দিতে বেরোলে ফল ভাল হবে না, বিরোধীদের জন্য সে চোখরাঙানির খবর আসছিল দিন দু’য়েক আগে থেকেই। চলছিল পাল্টা রুখে দাঁড়ানোর প্রস্তুতিও। মালুম হচ্ছিল, ভোটের দিন গোলমাল পাকাতেই পারে। বর্ধমানের জামুড়িয়া নিয়ে সে আশঙ্কা সোমবার শেষ পর্যন্ত সত্যিই হল।
এ দিন দুপুরে সত্তর গ্রামে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিন তৃণমূল কর্মী। সিপিএম কর্মীদের সন্দেহ হয়, বাইরে থেকে লোক ঢুকেছে। লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় ওই তিন জনকে। খবর পেয়ে গ্রাম থেকে তৃণমূলের কর্মীরা পৌঁছনোর আগেই পালিয়ে যায় সিপিএমের লোকজন।
ক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা গ্রামে সিপিএমের পোলিং এজেন্ট দুর্গাদাস বাউড়ির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ। তাঁদের আবার পাল্টা তাড়া করেন সিপিএম কর্মীরা। যে-যে দিকে পারে পালায়।
সত্তর গ্রামে এ দিন সন্ধ্যার মুখে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় তৃণমূলের লোকজন। যাঁরা আটকাচ্ছিলেন, তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের ছেলেরা মার খেয়েছে, আগে তাদের দেখে আসুন।’’
পুলিশ-বাহিনী পৌঁছনোর পরে অবশ্য ঢোকা গেল গ্রামে। তখনও ধোঁয়া উঠছে দুর্গাদাস বাউড়ির বাড়ির ছাই থেকে। দুর্গাদাসের মা আদরা বাউড়ির অভিযোগ, ‘‘ওরা হুমকি দিয়েছিল, ভোট দিতে বেরোলে গুলি করে দেবে। কিন্তু, তা না মেনে সবাই বুথে গিয়েছে। সেটা সহ্য হয়নি। তাই আমাদের বাড়িতে লুঠ করল, আগুন ধরিয়ে দিল! কিন্তু এ সব করে মুখ বন্ধ রাখতে পারবে না।’’
এটাই অবশ্য একমাত্র ঘটনা নয়।
দিনটা শুরু হয়েছিল বুথের পথে সিপিএমের এজেন্টকে মেরে মাথা ফাটানো দিয়ে। তার পরে কোথাও বুথ দখলে বাধা পেয়ে বিজেপি কর্মীদের মারধর, কোথাও আবার সিপিএমের গাড়ি ভাঙচুর, বাড়িতে আগুন— অশান্তি পাকিয়েছে দফায়-দফায়। আর সত্তরের ঘটনাই বলে দিচ্ছে, শেষ বেলায় পাল্টা মার দিয়েছে সিপিএম-ও।
আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে জামুড়িয়া বরাবরই সিপিএমের গড় বলে পরিচিত। পরিবর্তনের হাওয়ার মাঝেও গত বিধানসভা ভোটে জামুড়িয়া দখলে ছিল বামেদের। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে গেরুয়া-ঝড় বইলেও এখানে বিজেপি ও তৃণমূলকে টপকে বেশি ভোট পায় বামেরাই। তৃণমূল যেমন এ বার এই কেন্দ্র দখলে মরিয়া, সিপিএম আবার তা ধরে রাখতে এককাট্টা। তাই গোড়া থেকেই তেতে ছিল এলাকা।
এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বুথে যাচ্ছিলেন সিপিএমের এজেন্ট জীবন রুইদাস। জামুড়িয়ার হেভি মোড়ে এক দল লোক তাঁকে বেধড়ক মারধরের পরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় তৃণমূলের এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আশপাশের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে আধ ঘণ্টা পরেই ফিরে এসে বুথে বসেন জীবনবাবু।
পরের গোলমাল বাগানধাওড়ায়। একটি ঝোপে ব্যাগ ভর্তি বোমা পড়ে থাকতে দেখে চেঁচামেচি শুরু করেন সিপিএম কর্মীরা। সেগুলি কারা রেখেছে, সে নিয়ে ঘটনাস্থলেই তর্কে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসন ও সিপিএমের জামুড়িয়া জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্ত। বোমা উদ্ধারের পাশাপাশি তাঁদেরও নিরস্ত করতে হয় পুলিশকে।
দুপুরে নন্ডী গ্রামে বুথের সামনে জড়ো হয় কিছু তৃণমূল কর্মী। কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথ থেকে সরিয়ে দিলেও খানিক দূরেই বিজেপি-র সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তৃণমূলের। লাঠি চালিয়ে বাহিনী থামায় দু’পক্ষকে। এর খানিক পরেই আবার জামুড়িয়া বাজারে বুথ থেকে বাইরে ডেকে বিজেপির এজেন্ট রাজেশ শর্মাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেখানেও অভিযুক্ত তৃণমূল।
তৃণমূল কর্মী গৌরাঙ্গ গড়াই, পুতুল পালদের বক্তব্য, ‘‘হামলার আশঙ্কা করেছিলাম। সেটাই সত্যি হল। পুলিশের সামনেই সব হল, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিল না!’’ এমনকী, জামুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী ভি শিবদাসনের অভিযোগ, ‘‘আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হলে বাহিনীর দেখা মেলেনি। অথচ, বিরোধীরা ডাকলেই ওরা এসেছে!’’
গ্রামবাসীদের দাবি, গত বছর পুরভোটে যেমন বাইরে থেকে লোক এনেছিল শাসক দল, এ বারও তেমনটা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তাই পাল্টা কোমর বাঁধতে শুরু করে সিপিএম। ‘প্রতিরোধ মানুষ করেছে’, দাবি সিপিএমের। দলের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘শাসক দল ভোট লুঠ করতে পারেনি। তাতেই খেপে গিয়ে প্রশাসনকে দাবড়াচ্ছে।’’
জামুড়িয়ার আসানসোলের রিটার্নিং অফিসার প্রলয় রায়চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, সারা দিনে যত অভিযোগ মিলেছে, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। মারধর বা আগুন লাগানোর ঘটনায় কোনও পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ না পেলেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy