ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরই ভয়টা চেপে বসেছিল! যদি ফের ডাক আসে! ভয় সত্যিই করেই শেষমেশ এল চিঠিটা। যা দেখে জানতে পারলাম, এ বার ভোটেও যেতে হবে বিনপুর। ভয় বাড়ল।
প্রথম ভোটের কাজে যাই ২০১১ সালে। সে বারও যেতে হয়েছিল বিনপুর। তখন জঙ্গলমহল অশান্ত। আমাকে যেতে হয়েছিল সানকিশোলের বুথে। পাশেই ঝাড়খণ্ড সীমানা। বুথে যাওয়া, সেখান থেকে ফিরে আসা, ভয় তাড়া করেছিল সব সময়। যদি কিছু হয়! ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময়ই পুলিশ কর্মীদের কাছে শুনেছিলাম, সে দিন সকালে যাতায়াতের রাস্তা থেকে ল্যান্ডমাইন উদ্ধার হয়েছে। আমাদের সে বার কড়া নিরাপত্তায় বুথে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাসের সামনে-পিছনে ছিল পুলিশের গাড়ি। জঙ্গল-রাস্তায় সব সময় যৌথ বাহিনীর টহল চলেছে। প্রাথমিক স্কুলের বুথে পৌঁছে দেখেছিলাম, সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যা নামতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। সঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ পোকার রহস্যময় ডাক। রাতে মোমবাতি জ্বেলে কাজ করতে হয়েছিল। বেশিক্ষণ তা-ও পারা যায়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা মোমবাতি নিভিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওঁদের বক্তব্য ছিল, ঘরের মধ্যে থেকে জঙ্গলের দিকের কিছু দেখা যাবে না। তবে মোমবাতি জ্বললে জঙ্গলের মধ্যে থেকে ঘরটা দেখা যাবে। চাইলে যে কেউ এই আলো লক্ষ করে গুলি ছুড়তে পারে।
বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। তবে জঙ্গলমহলের পরিবেশ-পরিস্থিতি তো আর শহরের মতো নয়। তাই ভয়টা ছিলই। এ বারও দুরুদরু বুকে ভোটের আগের দিন সকালে মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছই। ডিসি (ডিস্ট্রিবিউটিং সেন্টার) ছিল বেলপাহাড়িতে। ন’টা নাগাদ বেলপাহাড়ি পৌঁছলাম। ওখানে গিয়ে দলের অন্য ভোট কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় হল। জিনিস গুছিয়ে ফের বাসে উঠলাম। গন্তব্য কাঁকো প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমরা ৪ জন ছিলাম ভোট কর্মী। সঙ্গে এক পুলিশ কর্মী ও এক ক্যামেরাম্যান (বুথে ওয়েব-কাস্টিংয়ের জন্য)। বিকেলের মধ্যে বুথে পৌঁছে দেখলাম, ৮ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান সেখানে হাজির। এক জওয়ান বললেন, “কোনও ভয় নেই। নিশ্চিন্তে কাজ করুন।’’
শুনে ভরসা পেলাম। ভোটের দিন সকাল থেকে বুথে লাইন ছিল। দুপুরের পর ভোটারদের আনাগোনা কমে। নির্বিঘ্নে ভোট মিটল। ভোট শেষে বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বাসে উঠলাম। এ বার গন্তব্য ঝাড়গ্রাম। ওখানে আরসি (রিসিভিং সেন্টার)-তে ভোটের সব জিনিসপত্র জমা দিয়ে ফের মেদিনীপুরের বাস ধরলাম। দেড় দিনের অভিজ্ঞতায় বুঝলাম, জঙ্গলমহল বদলে গিয়েছে। এখন আর গা ছমছমে সেই পরিবেশ নেই।
(লেখক মেদিনীপুর সদর ব্লকের ভবানীনগর কাঁইশকলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy