ভোট দিলেন জিয়াদুল (বাঁদিকে), বশির (ডানদিকে)।—নিজস্ব চিত্র।
ভোটের সকালেও বুথে আসার রাস্তার ধারে বোমা রেখে গিয়েছিল ভূতেরা।
জংলা উর্দিধারীরা সেই বোমা তো নিষ্ক্রিয় করলেনই, অভিযান চালালেন গ্রামে। রাস্তায় দু’জনকে একসঙ্গে দেখলেও তাড়া করেছেন জওয়ানরা। আশ্বস্ত করেছেন ভোটারদের।
নিজের ভোট নিজে দিতে পেরে দিনের শেষে তাই জিয়াদুল মোল্লা, বশির আহমেদ, জনাব মোল্লারা বলছেন— কথা রাখল কমিশন। এ বার আর ভূতের দাপাদাপি দেখতে হলো না।
এ বার ভোট-পর্ব শুরুর সময়েই নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছিল, ভোট হবে ‘অবাধ ও শান্তিপূর্ণ’। একের পর এক কড়া পদক্ষেপও করেছে কমিশন। তবু, সংশয় যাচ্ছিল না হাওড়ার জয়পুরের ঝামাটিয়া গ্রামের জিয়াদুল, বশির জনাবদের। তাঁরা ভুলতে পারেননি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।
জিয়াদুলরা জানিয়েছিলেন, সে বারও কমিশন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের আশ্বাস দিয়েছিল। সে বারও কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। পুলিশ ছিল। বুথে ছিল ক্যামেরা। ছিলেন মাইক্রো-অবজার্ভার। কিন্তু ভোট দিতে যাওয়ার পরে তাঁদের রাস্তা আটকানো হয়। হুমকি শুনতে হয় শাসক দলের। ভোট পড়ে যাওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী বা পুলিশের টিকি দেখতে পাননি জিয়াদুলরা। তাই এ বার ভোট নিয়ে তাঁদের সংশয় যাচ্ছিল না।
ওই এলাকাটি আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। জিয়াদুলরা ঝামটিয়া ধরমপোতা বোর্ড প্রাথমিক স্কুলের ৬৭ নম্বর বুথের ভোটার। ২০১৪ সালে ওই বুথে মোট ভোটার ছিলেন মোট ভোটার ৭৫২ জন। জিয়াদুলরা ভোট দিতে না পারলেও ভোট পড়েছিল ৩৯৪টি। তার মধ্যে তৃণমূল পায় ৩২৯টি। কংগ্রেস এবং সিপিএম যথাক্রমে ২৯টি এবং ২৭টি ভোট। যে ফলাফলের কথা তুলে জিয়াদুলরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, ‘‘আমাদের আটকে দেওয়া হলেও ভোট তো পড়েছিল। তা-ও আবার পায় তৃণমূল। তা-হলেই বুঝে নিন আমাদের হয়ে কারা ভোট দিয়েছিল এবং কী ভাবে দিয়েছিল!’’
এ বার সেই ভূতের উপদ্রব কমিশন ঠেকানোর আশ্বাস দিলেও প্রথমে প্রত্যয় হয়নি গ্রামবাসীদের। কিন্তু সোমবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথ ঘিরে ফেলে। অভিযান চালায় গ্রামের ভিতরে। জনে জনে তারা বোঝায়, গ্রামবাসীরা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে যান। প্রশাসনের তরফ থেকে যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, তা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রেও এ দিন বিস্তর কড়াকড়ি করা হয়।
এ সব দেখে আর ঘরে বসে থাকেননি গ্রামবাসীরা। বশির শুধু ভোটই দেননি, কংগ্রেসের এজেন্টও হতে পেরেছিলেন। বশির বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এ বারে নিজের ভোট নিজেই দিয়েছি।’’ জিয়াদুল বলেন, ‘‘২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এ বারে কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামে এসে আমাদের ভোট দিতে যেতে বলে। নিজের ভোট নিজে দিয়েছি।’’
তবে, রবিবার রাতেও গ্রামে হামলার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসীরা। দুষ্কৃতীরা তিন জায়গায় চড়ুইভাতিরও আয়োজন করে। রাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের তাড়া করে। অভিযোগ, ভোটারদের আটকে রাখার জন্য ফের সোমবার সকালে বেশ কয়েকজন জড়ো হন গ্রামে। কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ যখন ভোট শেষ হল, দেখা গেল ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ।
এ বার বুথের ভোটারসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১১। ভোট দিয়েছেন ৫৪৬ জন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তূলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। তৃণমূল নেতা সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘ধরমপোতায় আগে সিপিএম ছাপ্পা-ভোট দিত। এখন সেটা তারা করতে পারছে না বলে আমাদের নামে নানা অপবাদ দিচ্ছে। ওখানে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয়েছে।’’ তবে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ হামলার আশঙ্কায় ভুগতে থাকেন। তাঁদের শাসানিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
জিয়াদুল অবশ্য বলেন, ‘‘সব কিছুই ঘটল আমাদের চোখের সামনে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকায় আমরা খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy