Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

নগরপাল পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে অবশেষে সরিয়েই দিল নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার বিকেলে কমিশনের এই নির্দেশের কথা জানা গিয়েছে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে সৌমেন মিত্রকে। তিনি সিআইডি-র এডিজি ছিলেন। রাজীব কুমারের অপসারণকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি।

রাজীব কুমার।

রাজীব কুমার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:০২
Share: Save:

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে অবশেষে সরিয়েই দিল নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার বিকেলে কমিশনের এই নির্দেশের কথা জানা গিয়েছে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে সৌমেন মিত্রকে। তিনি সিআইডি-র এডিজি ছিলেন। রাজীব কুমারের অপসারণকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি।

এর আগে গত ৩০ মার্চ বিকেলে হঠাত্ করেই রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সে বারও পরবর্তী কমিশনার হিসেবে সৌমেনবাবুর নাম উঠে এসেছিল। যদিও ওই দিন রাতে জানা যায়, রাজীবকে অপসারণের নির্দেশে কমিশনের সিলমোহর পড়েনি।

পুলিশ কমিশনার হিসেবে রাজীব কুমার দায়িত্ব নেন চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি। বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, তিনি শাসক দলের অতি ঘনিষ্ঠ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে যে কমিশন সরিয়ে দিতে পারে সে কথা বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। পুলিশ কমিশনারের নামে নির্বাচন কমিশনের কাছে ভূরি ভূরি অভিযোগ পড়ে। এর আগে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) সদস্য হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। বিরোধীদের তাই আশঙ্কা ছিল, পুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি শাসক দলের হয়ে ফের কাজ করতে পারেন। এর মধ্যেই গত মাসে বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহকে ঘুষ দিতে গিয়ে ধরা পড়েন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মী। আর এই ঘটনাতেও ফের সামনে আসে রাজীবের নাম। বিজেপি-র অভিযোগ, দলীয় নেতাদের দুর্নীতিতে জড়ানোর এই ছক আদতে রাজীবই কষেছেন। কারণ হিসেবে ‘নারদ কেলেঙ্কারি’র বদলার তত্ত্ব তুলে ধরে বিজেপি।

আরও পড়ুন
প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল পুনর্বিন্যাস করার নির্দেশ হাইকোর্টের

গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। দিল্লিতে নির্বাচন সদনে গিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়। কংগ্রেসেরও একটি প্রতিনিধি দল জৈদীর সঙ্গে দেখা করে রাজীবকে অপসারণের দাবি জানায়।

ঠিক তার পরের দিন অর্থাত্ ৩১ মার্চ দুপুরে কলকাতায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বিবেকানন্দ উডা়লপুল। ওই দুর্ঘটনায় বেশ কয়েক জন মারা যান। সেই পরিস্থিতিতে পুলিশ কমিশনারকে সরানোর বিষয়টি নিয়ে চর্চা সাময়িক ভাবে ঝুলে থাকে। তার প্রায় দেড় সপ্তাহ পর কমিশন এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বভাবতই খুশি বিরোধী দলগুলি। রাজীব কুমারের অপসারণ নিয়ে যিনি সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন বিজেপি-র সেই নেতা রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমও এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখনও অনেক অফিসার আছেন, যাঁরা শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন, তাঁদেরকেও সরাতে হবে।’’

অন্য দিকে, রাজীবকে সরানোর ঘটনাকে স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অফিসারদের একাংশ। যেমন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার বলেন, ‘‘এই ঘটনা লজ্জাজনক, কিন্তু স্বস্তিদায়ক। অভিযোগকে মান্যতা দিল কমিশন। আমি এই প্রক্রিয়া ও সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’ অন্য এক প্রাক্তন পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পুলিশের কাজ আইন মেনে কাজ করা। যিনি করেন না, তাঁকে শুধু সরিয়ে দেওয়া নয়, শাস্তি দেওয়াও উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE