রাজীব কুমার
মঙ্গলবার বিকেলে খবরটা পৌঁছেছিল নবান্নে। সেখান থেকে লালবাজারে যেতে বেশি সময় লাগেনি। এবং নবান্নের বার্তা পাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কলকাতা পুলিশের সদর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন রাজীব কুমার।
তত ক্ষণে জানা হয়ে গিয়েছে, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের (সিপি) পদ থেকে রাজীবকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নতুন কমিশনার হচ্ছেন সৌমেন মিত্র, যিনি এখন সিআইডি-র এডিজি। রাজীব কুমার হবেন এসিবি-র এডিজি।
রাজীবকে যে সরানো হতে পারে, আগেই তার আঁচ মিলেছিল। গত মাসের শেষ দিনে সিপি-র অপসারণের ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। বেশি রাতে জানা যায়, কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। পুলিশমহলের একাংশ অবশ্য তখন বলেছিল, রাজীবকে সরানো শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওই মহলের ব্যাখ্যা ছিল: ভোটের মুখে কলকাতার কোনও পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা একযোগে কমিশনের কাছে শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ জানাচ্ছেন— এমন নজির নেই। সমস্ত বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা দিল্লিতে নির্বাচন সদনে গিয়ে রাজীবের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর কাছে।
সৌমেন মিত্র
ভোটের মুখে কলকাতার সিপি বদলি অবশ্য নতুন নয়। ২০১১-র বিধানসভা ভোটের আগে তৎকালীন সিপি গৌতমমোহন চক্রবর্তীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল কমিশন। তাঁর জায়গায় এসেছিলেন রঞ্জিত পচনন্দা। তবে সেটা ছিল নিছক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। রাজীবের বেলায় তা নয়। কার্যত রাজ্যে ভোট ঘোষণার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত ওই আইপিএস-কে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিধাননগরের সিপি থাকাকালীন রাজীব শাসক দলের নির্দেশে সারদা কেলেঙ্কারির তথ্য লোপাট করেছেন। কমিশনের কানে সেই অভিযোগ পৌঁছে দেওয়ার পর মার্চের মাঝামাঝি কলকাতায় কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, রাজীবের নেতৃত্বাধীন পুলিশবাহিনী কি ভোটের সময় নিরপেক্ষ থাকবে? সেই চাপের মুখে প্রথম দফা ভোটের পরে উপ-নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা জানিয়েছিলেন, বিষয়টি কমিশনের বিবেচনায় আছে, ঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ হবে।
ইতিমধ্যে ক’দিন আগে ঘুষ-কাণ্ডে জড়িয়ে যায় রাজীবের নাম। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ অভিযোগ করেন, তাঁকে ঘুষের ফাঁদে ফেলতে পুলিশ কমিশনারই স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মীকে তাঁর কাছে পাঠিয়েছিলেন। অভিযোগে সিলমোহর দিয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় এসে রাজীব অপসারণের দাবি জানিয়ে যান।
মঙ্গলবারও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধিদল নির্বাচন সদনে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবি জানান। একই দাবিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজীবকে সরানোর সিদ্ধান্ত।
এ দিন রাজীব কুমারের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তিনি মোবাইল ধরেননি। এসএমএসের-ও জবাব দেননি। সৌমেনবাবুও কিছু বলতে চাননি। রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনও কোনও নির্দেশ পাইনি।’’ কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার অবশ্য কমিশনের নির্দেশকে ‘বাহিনীর কলঙ্ক’ হিসেবে দেখছেন। ‘‘পুলিশ কমিশনারই কলকাতা পুলিশের মুখ। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ বাহিনীর পক্ষে লজ্জার।’’— মন্তব্য তুষারবাবুর। কমিশনের সিদ্ধান্তে বিরোধী শিবির খুশি। ‘‘আশা করি, এ বার কলকাতা পুলিশের হুঁশ ফিরবে। কালীঘাটের নির্দেশে আর কাজ করবে না।’’— বলেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘কমিশনকে দেখতে হবে, ওই অফিসার যেন নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকেন।’’ অন্য দিকে তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায় এক নির্বাচনী সভায় বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারকে কমিশন পক্ষপাতিত্বের কথা বলে সরিয়েছেন, এ নিয়ে কিছু বলছি না। শুধু বলব, পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করে কি না, তা কলকাতার মানুষ ১৯ মে ভোটের বাক্সে প্রমাণ করে দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy