নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়ে বেরিয়ে আসছেন অশোক গঙ্গোপাধ্যায় এবং আব্দুল মান্নান। — নিজস্ব চিত্র
প্রথম দিনের ভোট দেখেই ভরসার জায়গাটা নড়ে গিয়েছিল। কমিশনের প্রতি আস্থা যে এখন চুরমার হয়ে গিয়েছে, তা নসীম জৈদীর মুখের উপরে এ বার জানিয়ে দিল রাজ্যের তিন বিরোধী দল! বিরোধীদের সেই চাপের মুখে পড়ে মঙ্গলবার যেমন কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দিল কমিশন, তেমনই তৃতীয় দফার ভোট থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপেরও সিদ্ধান্ত নিল। বিশেষ করে, ভোট পড়ার হিসেবে গরমিল ঠেকাতে জানিয়ে দেওয়া হল, ভোটের দিন সন্ধ্যা ৬টায় প্রত্যেক প্রিসাইডিং অফিসারকে ভোটের শতকরা হিসেবের চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। যদি তখনও ভোটাররা লাইন থাকেন, তা হলে কত জন লাইনে রয়েছেন, তারও হিসেব দিতে হবে। পরে সেই সংখ্যার হিসেবে গরমিল হলে সংশ্লিষ্ট বুথে পুনরায় ভোটগ্রহণ করবে কমিশন।
কমিশনের প্রতি বিরোধীদের অনাস্থার কারণ কী? জৈদীর কাছে বিরোধীদের মোদ্দা বক্তব্য: প্রথমত, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের যে তালিকা কমিশন দিয়েছে, তা ভুলে ভরা। তাঁদের দেখা নেই, ফোনেও মিলছে না। ওঝাদেরই যদি দেখা না মেলে, ভূত তাড়াবে কে?
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় প্রশাসনকে শাসক দল কী ভাবে ব্যবহার করছে, তা দেখার কথা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদেরই। কিন্তু শাসক দলের তামাক খেয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা যে ‘খেলা’ খেলছেন, সে দিকে চোখ বুজে রয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। নইলে ভোটের দিন ভারতী ঘোষ মেদিনীপুরের পুলিশ লাইনে বসে ভোট পরিচালনা করলেন বলে অভিযোগ উঠল আর কমিশন কিছুই দেখল না, হয় নাকি? তাই কিছু আমলা বা পুলিশ-কর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েই হাত ধুয়ে ফেলতে পারে না কমিশন। অবাধ ভোট করতে হলে বর্ধমানের জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের মতো আধিকারিকদেরও দ্রুত সরাতে হবে।
তৃতীয়ত, স্পর্শকাতর এলাকায় টহলদারির কথা ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। জৈদীই সাংবাদিক বৈঠক করে আশ্বাস দিয়েছিলেন, শুধু বুথে নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন হবে এলাকা ধরে। অথচ বাস্তবে অধিকাংশ জায়গায় বুথেই থাকল বাহিনী। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে শাসক দলের বাহিনী মানুষকে শাসানোর সময়ে তাদের পাত্তাই পাওয়া গেল না! আবার ভোট গ্রহণের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বুথে বুথে ভূতুড়ে ভোট পড়ল। এর পরেও কমিশনের উপরে আস্থা থাকতে পারে কী!
এ সবের বাইরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন জৈদীকে চিঠি লিখে ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনা ও রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) সুনীল গুপ্তের অপসারণ দাবি করেছেন। জৈদীর সঙ্গে এ দিন যেমন সীতারাম ইয়েচুরি দেখা করেছেন, তেমনই সাত সকালে দিল্লির নির্বাচন সদনে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। জৈদীর সঙ্গে বিজেপি নেতাদের এই সাক্ষাৎ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কমিশনকে কড়া কথা জাভড়েকর-সিদ্ধার্থদের বলার কথা নয়।
বিজেপি-বাম-কংগ্রেস জৈদীর উপরে চাপ বাড়ানোর পরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে দেয় কমিশন। আবার তৃতীয় দফার ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে রাজ্যে কমিশনের সিইও এবং সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় সাক্সেনা জানতে চান, এত কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া সত্ত্বেও ভোটের দিন তাদের দেখা যাচ্ছে না কেন? এই সক্রিয়তা থেকে কেউ কেউ ইঙ্গিত পাচ্ছেন, আস্থা অর্জনের চেষ্টা শুরু হয়েছে জৈদীর তরফে।
সকালে এ দিন এক বার জৈদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। সন্ধ্যায় ফের কমিশনের ফুল বেঞ্চকে নিয়ে ইয়েচুরির বক্তব্য শুনতে বসেন জৈদী। তখন কমিশনের তরফে রাজীবকে অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। কিন্ত ইয়েচুরি তাঁকে বলেন, এতেই ভোট অবাধ হবে মনে করার কারণ নেই! সোমবার শুধু একটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ১১০টি বুথে রিগিং হয়েছে। জৈদী তখন বলেন, তা হলে ওখানে বামেরা ফের ভোট চাইছে? কিন্তু ইয়েচুরি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, না! দলের কর্মীদের দ্বিতীয় বার মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে তাঁরা পারবেন না। বাকি জায়গায় অবাধ ভোটের ব্যবস্থা করলেই চলবে। ইয়েচুরি পরে বলেন, ‘‘ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার বলছেন, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বুথের ভিতরে কিছু হয়নি। বুথের বাইরে কি কমিশনের কোনও দায়িত্ব নেই? তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে টহলদারি আগে করানো হচ্ছিল কেন?’’
দিল্লির পাশাপাশি কলকাতাতেও এ দিন কমিশনে গিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ জানিয়েছে। ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামে’র তরফে প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ও আব্দুল মান্নান সিইও-র সঙ্গে দেখা করে দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় কখন যাচ্ছে, তা আগে থেকে জানিয়ে দিতে হবে কমিশনকে। পরে উপ-নির্বাচন কমিশনার রাজ্যে সিইও ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, ১৭ এপ্রিল ভোটগ্রহণ চলার সময় এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি যেন দেখা যায়। বুথের নিরাপত্তা দিতে ১৫ তারিখই কেন্দ্রীয় বাহিনী এলাকায় পৌঁছে যাবে। ভোটের দিনের আগে পর্যন্ত ওই বাহিনীকে ব্যবহার করে এলাকায় নজরদারি করাতে হবে।
তবে প্রশ্ন থাকছে, এমন আশ্বাস আগেও কমিশনের তরফে ছিল। এ বার বাস্তবে ফলবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy