Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
বড়জোড়া কাণ্ড

অভিযোগের খোঁজ ছিল না, ডিএমের তাগাদায় ধৃত তৃণমূলকর্মী

ঘরে-বাইরে চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়ে বড়জোড়ার মালিয়াড়ায় প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোট কর্মীদের মারধর করার ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত বাবলু ওরফে হোদল বাউরি মালিয়াড়ারই বাসিন্দা। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

ঘরে-বাইরে চাপ ও সমালোচনার মুখে পড়ে বড়জোড়ার মালিয়াড়ায় প্রিসাইডিং অফিসার-সহ ভোট কর্মীদের মারধর করার ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত বাবলু ওরফে হোদল বাউরি মালিয়াড়ারই বাসিন্দা। এলাকায় তিনি তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত।

রবিবার, ভোটের রাতে মালিয়াড়ার পরীক্ষাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্তকুমার নন্দী-সহ চার জন ভোটকর্মী সিপিএমকে ভোট দিচ্ছেন অভিযোগ তুলে কয়েক জন বহিরাগত তাঁদের বেদম মারধর করেন। বড়জোড়া থানার পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি বলেও অভিযোগ। আনন্দবাজারে সেই খবর দেখে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জেলাশাসক জয়ন্তবাবুকে নিজের অফিসে ডেকে অভিযোগপত্র লেখান। সেই অভিযোগ যাতে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করা হয়, সে জন্য তিনি জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে তা সরাসরি পাঠিয়ে দেন।

তার পর কী হল?

ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, খোঁজ করতে গেলে বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বড়জোড়ার আইসি দিলীপ কর্মকার দাবি করেন, “বাইরে আছি। থানায় গিয়ে জানতে পারব জেলাশাসকের দফতর থেকে কোনও অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে কিনা।”

বিকেল ৩টে পর্যন্ত একই কথা শুনিয়ে যান আইসি। ওই সময় পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলে যান, “জেলাশাসক যদি ওই অভিযোগ থানায় পাঠিয়ে দিয়ে থাকেন, তা হলে নিশ্চই তদন্ত শুরু হয়ে যাবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’ এর পরে
বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁকে তিন বার ফোন করা হলেও, তিনি ওই অভিযোগপত্রটি কোথায় তা জানাতে পারেননি। জেলা পুলিশের মেজ-সেজো কর্তারাও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অভিযোগপত্রটি সম্পর্কে মুখ বন্ধই রেখেছিলেন।

তা হলে কি ভূত ঢুকল প্রশাসনের অন্দরেও? প্রশ্নটা তুলতে শুরু করেন বিরোধীরা। ঠিক যেমন ভোটের আগের রাতে ভূতেরা ভোটকর্মীদের কিল মেরেছিল, তবে কি সেই তারাই ওই অভিযোগপত্র উধাও
করে দিয়েছে? বড়জোড়ার বাসিন্দা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেই ফেললেন, ‘‘ছোটবেলায় শুনেছি, ভূতে ঘর থেকে হাত বাড়িয়ে বাগান থেকে লেবু পেড়ে আনত। এখন দেখছি ভূতে পুলিশ সুপারের অফিসের ভিতর থেকেও চিঠি ভ্যানিশ করে দিচ্ছে!’’

সব শুনে তাজ্জব বনে যান জেলাশাসক তথা জেলার রিটার্নিং অফিসার মৌমিতা গোদারা বসু। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো মঙ্গলবার বিকেলেই অফিসের কর্মীদের হাতে এসপি-র অফিসে ওই অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। এসপি-র দফতর তা রিসিভও করেছে। অথচ এখনও এফআইআর হল না!’’

জেলাশাসক চুপ করে বসে থাকেননি। প্রশাসনের অন্দরের খবর, অসন্তুষ্ট মৌমিতাদেবী বিভিন্ন জায়গায় ফোন করেন। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন পুলিশকর্তারা। বড়জোড়া থানায় নির্দেশ যায়, তড়িঘড়ি কেস শুরু করার। ভূতে নেওয়ার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতেই সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি কর্মীদের মারধরের মতো জামিন অযোগ্য ও জামিন যোগ্য বেশ কিছু ধারায় মামলা রুজু করা হয়। বুথের কাছাকাছি এলাকা থেকেই হোদলকে পুলিশ ধরে আনে। রাত ৮টায় পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু, কেস শুরু করতে ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল কেন, অভিযোগপত্রই বা দিনভর কোথায় ছিল, এ রহস্য তিনি ভাঙেননি। প্রহৃত প্রিসাইডিং অফিসার অভিযোগপত্রে হামলাকারীদের নাম না দিতে পারলেও আনন্দবাজার এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূলের সূত্রে জেনেছিল, ওই ঘটনার পিছনে মালিয়াড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বাপ্পা চন্দ্রাধূর্য ও তাঁর লোকজন যুক্ত। মঙ্গলবার বাপ্পা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

কিন্তু এ দিন পুলিশ যে হোদলকে গ্রেফতার করেছে, এলাকায় সে বাপ্পার শাগরেদ হিসেবেই পরিচিত।

এ দিন অবশ্য বাপ্পা আর ফোন ধরেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy