Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

অসন্তোষ দলেও, লড়ছেন গৌতম

দলের ঠিকাদার নেতাকে দিয়ে এলাকা উন্নয়নের সিংহভাগ কাজ করানো হয়েছে। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় জমির কারবারিদের রমরমার কথা। তা নিয়ে এক সময় বিস্তর অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু এলাকায় এ কথাও শোনা যাচ্ছে, পরিবর্তনের পর বর্তমান শাসক দলের ছাত্রছায়াতেই শান্তিতে রয়েছেন জমির কারবারিরা।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

অসন্তোষ-১। দলের ঠিকাদার নেতাকে দিয়ে এলাকা উন্নয়নের সিংহভাগ কাজ করানো হয়েছে।

অসন্তোষ-২। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায় জমির কারবারিদের রমরমার কথা। তা নিয়ে এক সময় বিস্তর অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু এলাকায় এ কথাও শোনা যাচ্ছে, পরিবর্তনের পর বর্তমান শাসক দলের ছাত্রছায়াতেই শান্তিতে রয়েছেন জমির কারবারিরা।

অসন্তোষ ৩। অনিয়ম, এক শ্রেণির নেতার বাড়বাড়ন্ত দেখে দল ছেড়েছেন অনেক বিশ্বস্ত সৈনিক। যেমন অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমু। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে তিনিই প্রচারের সেনাপতি ছিলেন। এ বার তিনি বামেদের পাশে। তাঁর ভরসাতেই শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড চালাচ্ছেন বামেরা।

অসন্তোষ-৪। যখন তখন মেজাজ হারান স্বয়ং প্রার্থী। দু’দিন আগে তাঁর বিধানসভা এলাকার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সূর্যকুমার মল্লিক সিপিএমে যোগ দিয়েছেন। তাঁরও অভিযোগ, দলের বিষয়ে সমস্যার কথা বলতে গেলে তিনি একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। কাওয়াখালি এলাকায় মহিলারা পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলেও মন্ত্রী মেজাজ হারান বলে অভিযোগ।

এলাকায় এই চারটি প্রবল অসন্তোষের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির তৃণমূলের প্রার্থী গৌতম দেবকে। তাই আজকাল সাতসকালেই বেরিয়ে পড়ছেন গৌতমবাবু। মিছিল করছেন। কই, মাগুরের ঝোল দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই অনেক সময় দুপুরে খাওয়া সেরে নিচ্ছেন। গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘ওই সব ‘অসন্তোষ’ কোনও ফ্যাক্টর নয়।’’ তাঁর যুক্তি, কেউ যদি নিয়ম মেনে জমি কেনাবেচার কাজ করে তাতে বলার কী আছে? তবে অনিয়ম, অভিযোগ রয়েছে শুনেই তিনি অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ঠিকাদার নেতা কাজ পেলেও তিনি অনেককে নিয়েই চলছেন। সকলে খুশি।’’

আর মেজাজ হারানো? গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সোজা-সাপটা কথা বলার অভ্যাস তো—তাই। লুকিয়ে কিছু বলি না।’’ অমুবাবু সঙ্গে না-থাকলেও কোনও সমস্যা নেই বলেই মনে করেন। উত্তরকন্যা, সাফারি পার্ক, রাস্তা, একাধিক সেতু নির্মাণ সহ এলাকায় যে ভাবে উন্নয়ন হয়েছে তা বিরোধীদের অনেকেই মানেন বলে তাঁর দাবি। যদিও তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের দিলীপ সিংহর কথায়, উন্নয়নের কাজ বলে যা করা হয়েছে, তাতে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘সাফারি পার্ক হয়েছে। অথচ স্থানীয় বনবাসীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাস্তার কিছু কাজ হয়েছে ঠিকই। তাতে মূলত লাভবান হয়েছেন জমির কারবারিরা। ৪০ হাজার টাকা কাঠার জমি বিকোচ্ছে চার লক্ষ টাকায়। মদত দিচ্ছে শাসক দল। হাসপাতাল নেই। পানীয় জল নেই। কর্ম সংস্থান নেই। শিল্প নেই। যে পরিকল্পনা হচ্ছে, তা ভুলে ভরা।’’

গৌতমবাবুকে এর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে ভোটের অঙ্কের হিসেবের সঙ্গেও। গত বার পরিবর্তনের হাওয়ায় ৮৪, ৬৪৯ ভোট পেয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দিলীপবাবু ১১, ২৩৬ ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু সে বার তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট ছিল। গৌতমবাবুর বিধানসভা এলাকায় ন’হাজারের মতো ভোট রয়েছে কংগ্রেসের। সেই ভোট এ বার বাম-কংগ্রেস জোটের দিকে যাবে বলে মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। তা ছাড়া, গত বার তিনি মোর্চার সমর্থনও পেয়েছিলেন। তাঁদের হাজার পনেরো ভোট রয়েছে। এ বার মোর্চা পাশে নেই। গত নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষে ছিল এসইউসিআই-ও। এ বার তারাও আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। তবে অতুল রায়ের কেপিপি পাশে আছে গৌতমবাবু।

দিলীপবাবুর দাবি, গতবার ছিল পরিবর্তনের হাওয়া। তাতেও তিনি ভালই লড়াই করেছিলেন। এ বার হাওয়া জোটের পক্ষে। তাই ঘরে-বাইরে বিপর্যস্ত মন্ত্রী হারবেন। গৌতমবাবুর অবশ্য দাবি, অঙ্ক তাঁরই পক্ষে। মোর্চা ও কংগ্রেসের একাংশ এখনও তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছেন বলে দাবি করছেন তিনি।

বিজেপি প্রার্থী রথীন বসুও বুথ-অফিসে ঘুরছেন। এমনিতেই প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হয়েছে অন্য দলের থেকে অনেক দেরিতে। হাতে সময় নেই। ঘোড়া, রণপা নিয়ে মিছিল করছেন। তবে তাদের মহামিছিলেও সদস্য সমর্থক তুলনায় বড্ড কম। কাজেই জোটের অঙ্কে কিছুটা হলেও এগিয়ে দিলীপই।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy