জখম তন্ময় ভট্টাচার্য।— নিজস্ব চিত্র।
নির্বাচন চলছে। চলছে নজরদারিও। শাসকদলের নজরদারি।
রাতভর চোরাগোপ্তা হুমকি, সরাসরি শাসানি এবং শেষমেশ নির্বাচনের দিন বুথে যাওয়ার পথে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেখানেও থেমে থাকেনি শাসকদল। বিরোধী শিবিরের কর্মী-সমর্থক, সাধারণ ভোটার, এমনকী জোটের বেশ কয়েক জন প্রার্থীকে মারধর করেছে তারা। পাশাপাশি হামলা চালানো হয়েছে সিপিএম-কংগ্রেসের একাধিক কার্যালয়ে। তবে, এ সবকে উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষ সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছেন ভোটের লাইনে। যদিও সে লাইনের উপরও কড়া নজরদারি রয়েছে তৃণমূলের। একটু বেচাল বুঝলেই ভোট দিয়ে ফেরার পথে তাদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে সেই ‘ভোটার’দের।
ঘটনা এক: দমদম উত্তর কেন্দ্রের সুকান্ত নগর। গত দু’দিন ধরেই এলাকায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। বিরোধী দলের সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চলছিল ধমক-চমক। ভোট দিতে না যাওয়ার জন্যও দেওয়া হয় হুমকি, ‘আমাদের ভোট দিবি না যখন, কোনও ভাবেই বুথমুখো হবি না।’ এর পরেও এ দিন সকালে ভোট দিতে গিয়েছেন অনেকেই। ভোট দিয়ে ফেরার পথে তাঁদের কয়েক জনের উপর আক্রমণ চালানো হয়। করা হয় মারধর। অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান ওই এলাকার সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য। কিন্তু, সুকান্ত নগরের গলিতে ঢোকার মুখেই তন্ময়বাবুর গাড়ির দিকে ধেয়ে আসে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। তাঁকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। ইটের টুকরো এসে পড়ে গাড়ির কাচে। সেই ভাঙা কাচেই জখম হন প্রার্থী। তাঁর হাত বেয়ে গড়াতে থাকে রক্তের ধারা।
ঘটনা দুই: মধ্যমগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের কৈপুল গ্রাম। প্রদীপ মাজি নামে এক সিপিএম সমর্থক এ দিন সকালে ভোট দিতে গিয়েছিলেন ২৬৭ নম্বর বুথে। অভিযোগ, ভোট দিয়ে ফেরার পথেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। বাঁশ, লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। তিনি এলাকায় দীর্ঘ কয়েক বছর ছিলেন না। সোমবার সকালেই পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে ফিরেছিলেন। আক্রান্ত প্রদীপবাবুকে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনা তিন: উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখার বড়চোরা গ্রাম। রবিবার রাত থেকেই সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, গত কাল রাতে স্থানীয় সিপিএম নেতা আমজেব লস্করের বাড়িতে ভোট নিয়ে বৈঠক চলছিল। সেই সময়ে সেখানে হাজির হয় প্রায় ২৫-৩০ জন দুষ্কৃতী। তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি বেধড়ক মারধর করা আমজেব এবং তাঁর ছেলে নাজিবুল লস্করকে। এসএফআইয়ের জোনাল সম্পাদক নাজিবুলকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করা হয়। জখম অবস্থায় তাঁকে পেটানো হয় বাঁশ দিয়ে। এর পরেও এ দিন সকালে তিনি ১৪৩ নম্বর বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, তখন তাঁর দিকে রিভলভার তাক করে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। নাজিবুলকে গুলি করে মারার হুমকি দেওয়া হয়। এর পর তিনি পালিয়ে এসে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানান। তার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যেই নাজিবুল ভোট দেন।
আরও খবর
আসি আসি করেও মদন কারাবাসী
হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মোট ৪৯টি বিধানসভা আসনের প্রায় প্রতিটি জায়গা থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে এমন ভূরিভূরি অভিযোগ উঠেছে। তাদের নিশানায় যেমন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন সাধারণ ভোটাররাও। হালিশহরের কাঁসারিপাড়ায় প্রাক্তন বাম কাউন্সিলরের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় ব্যারাকপুরের এক মহিলা কাউন্সিলরকে। নৈহাটিতে ভোটারদের মারধর করার অভিযোগ ওঠে। ভোটার বাবা-মাকে হুমকি দিতে এসে ছাড় দেওয়া হয়নি শিশুদেরও। বীজপুরে শাসক দলের সেই গুন্ডাদের হাতে মার খেয়েছে সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুও। ওই বীজপুরেই এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। পুলিশের সামনেই তাঁকে মারধর করা হয়। নিউটাউনে সিপিএমের এক পোলিং এজেন্টকে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে। এরই পাশাপাশি, কেষ্টপুরে ডিওয়াইএফআই-এর অফিস ভাঙচুর করা হয়। হালিশহরের আদর্শ বিদ্যাপীঠ কেন্দ্রে বুথের কাছে বোমাবাজি চলে। এ ছাড়াও বেশ কিছু বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে। শাসক দলের লোকজন বিরোধী এজেন্টদের বুথে বসতে বাধা দিয়েছে, উঠেছে এমন অভিযোগও।
ওই সব এলাকার স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই নির্বাচন চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy