ভূতের কেত্তন থামাতে ওঝা-বাহিনী!
তৃণমূলের ‘ভোট-লুঠের চক্রান্ত’ ব্যর্থ করতে কয়েক দফায় নানা জায়গায় প্রতিরোধ গড়তে দেখা গিয়েছে সিপিএমকে। এক ধাপ এগিয়ে আজ, বনগাঁয় ভোটের জন্য বাম-কংগ্রেস জোট গড়ে ফেলেছে ‘বুথ সংগ্রাম কমিটি’!
জোট সূত্রের খবর, বাছাই করা দু’দলের ১০-২০ জন শক্তসমর্থ কর্মী -সমর্থককে কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মহিলারাও থাকছেন। প্রতিরোধ গড়ে সকলে যে কোনও মূল্যে শাসক দলের ‘ভোট-লুঠ’ রুখবেন। বনগাঁ মহকুমার চারটি আসনেই (বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটা ও বাগদা) ওই কমিটি কাজ করবে।
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক পঙ্কজ ঘোষ রবিবার বলেন, ‘‘দলের কাজে সক্রিয়, নিষ্ঠাবান এবং ঝুঁকি নিতে পারেন, এমন কর্মী-সমর্থকদেরই নেওয়া হয়েছে। তাঁরা বাইরে থাকায় দলের এজেন্টরাও নির্ভয়ে থাকবেন। শাসক দলের কোনও ধমক-চমকেই কমিটির ছেলেরা পালিয়ে যাবে না। যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকবেন।’’
রাজ্যের মধ্যে সব চেয়ে বেশি আসন (৩৩) রয়েছে এই জেলাতেই। কাজেই বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য এই জেলা থেকেই বেশি আসন দখলে আনতে তৃণমূল মরিয়া চেষ্টা চালাবে বলে মনে করছে বিরোধীরা। তাই কোমর বেঁধেছে তারা। গত বারের ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ২৯টি আসন। এ বার সেই সংখ্যাটা যতটা সম্ভব কমিয়ে দেওয়াই চ্যালেঞ্জ বিরোধীদের। তাই বিভিন্ন এলাকায় শাসক দলের ‘ভোট-লুঠ’ রুখতে নানা কৌশল নিয়েছে জোট। দেগঙ্গা-হাড়োয়া-শাসনের বিভিন্ন বুথের দলীয় এজেন্টদের সিপিএম ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে। তার মধ্যে দুপুরে প্রবল খিদে পেলেও বুথ না ছাড়া, সকালে বুথে ঢুকেই জানলার সামনের জায়গা দখল করা, ইভিএম পরীক্ষা করা ইত্যাদি। আর বনগাঁয় ভূতের কেত্তন ঠেকাতে জোটের দাওয়াই ‘বুথ সংগ্রাম কমিটি’ নামে ওই ওঝা-বাহিনী!
বনগাঁর চারটি কেন্দ্রে এ বার মোট ১০৬৮টি বুথ। তার মধ্যে চৌবেড়িয়া, গঙ্গানন্দপুর, ঝাউডাঙা, জলেশ্বর -২, বনগাঁ শহর, গোবরডাঙা, আড়শিংড়ি, মালিপোঁতার মতো এলাকাগুলির বেশ কিছু বুথে ভোট-লুঠের আশঙ্কা রয়েছে জোটের। জোটের অনেক নেতারই অভিযোগ, গত পুরভোটে বনগাঁ পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডে অবাধে ভোট লুঠ করেছিল শাসক দল। সিপিএমের এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় একই ছবি দেখা গিয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির একটি এবং বৈরামপুর পঞ্চায়েতের একটি আসনে উপভোটেও। ‘বহিরাগত’দের এনে ভোটারদের ভয় দেখানো, বিরোধী দলের এজেন্টদের বুথে যেতে বাধা, মারধর— কিছুই বাদ যায়নি। তার পরে বেশ কয়েকটি সমবায়ের ভোটেও শাসক দলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ও ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছে, আগেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছেন। এ বারেও দেবেন।
কিন্তু জোটে এ বার ফাঁক রাখতে চাইছে না। সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘বুথ সংগ্রাম কমিটি’র সদস্যদের কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে, তা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও গোলমাল দেখলেই তাঁরা প্রতিবাদ জানাবেন। প্রতিটি বুথে আলাদা করে রাখা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পটু কর্মীদেরও। যাঁরা ফেসবুক-হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে কোনও বুথ দখলের চেষ্টা দেখলে নেতৃত্বকে জানাতে পারবেন। নেতারা তা দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন।
বামেদের অভিযোগ, শাসক দল নদিয়া থেকে বহু যুবককে অশান্তি বাধাতে বাগদা ও গাইঘাটায় এনে জড়ো করেছে। কমিশনকে জানানো হয়েছে। অম্বিকাপুর, মাছডোব, খাবরাপোতা, আশুরহাট প্রভৃতি এলাকায় তাঁদের এজেন্টদের ভয় দেখানো শুরু হয়েছে। বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রমেন আঢ্য বলেন, ‘‘এ বার আমাদের মনোবল বেশি। তাঁরা ভয় পাবেন না।’’ একই সুরে জেলা কংগ্রেসের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকেও বোঝানো হয়েছে, তাঁরাও ভোট দিতে না পারলে বা বাধা পেলে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেন। আমরা তাঁদের পাশে থাকব।’’
ভূতের কেত্তন ঠেকাতে জোট এককাট্টা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy