Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

শিরদাঁড়া যাঁদের বাঁকা, তাঁরাই কি ‘ঢাল’ দুষ্কৃতীদের

দায়িত্ব গ্রহণের পরে বারংবার বাহিনীকে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার। বাহিনীর সর্বস্তরে ওই নির্দেশ পৌঁছলেও বেশ কয়েকটি থানার আধিকারিককেরা তা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কার্যত লালবাজারের একাধিক কর্তা একান্ত আলাপচারিতায় ওই অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০১:৪০
Share: Save:

দায়িত্ব গ্রহণের পরে বারংবার বাহিনীকে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের নতুন কমিশনার। বাহিনীর সর্বস্তরে ওই নির্দেশ পৌঁছলেও বেশ কয়েকটি থানার আধিকারিককেরা তা মানছেন না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কার্যত লালবাজারের একাধিক কর্তা একান্ত আলাপচারিতায় ওই অভিযোগ মেনেও নিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ভোট-পরবর্তী হিংসার সময়ে বাহিনীর একাংশের গাফিলতি সামনে এসেছিল। এর পরে লালবাজার থেকে ফের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিলেও বেশ কয়েক জন আধিকারিক তা মানছেন না। তাই সাত দিন পরেও গ্রেফতার করা হয়নি পাটুলি-বেহালায় বিরোধীদের উপরে আক্রমণের ঘটনায় অভিযুক্তদের।

অভিযোগ, বিরোধী দলের এজেন্টদের উপরে ও তাঁদের বাড়িতে হামলা, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের একাধিক ঘটনায় আঙুল উঠেছে শাসক দলের দিকে। আক্রান্ত পুলিশও। একটি ঘটনায় এফআইআর-এ নাম থাকা ১৬ জন আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু অভিযোগ, ওই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার চেষ্টাই হচ্ছে না। তার মানে কি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ মানছেন না বাহিনীর একাংশ? অথবা, মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য যতটা সক্রিয় হওয়া দরকার, তা হচ্ছেন না? পুলিশের নিচুতলার একাংশের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার মেরুদণ্ড সোজা রাখার নির্দেশ দিলেও শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অনেক অফিসার তা মানতে নারাজ। তাঁরা নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, ১৯ তারিখ ক্ষমতায় তৃণমূলই ফিরছে। তাই এখনই তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।

গত সপ্তাহে পরপর তিন দিন পাটুলি এবং বেহালায় বিরোধী দলের এজেন্টদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। বিরোধীদের পক্ষ থেকে শাসক দলের ‘আশ্রিত’ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বেহালা এবং পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, পাটুলিতে এফআইআরে নাম থাকা ১৬ জন অভিযুক্ত আদালতে আত্মসর্মপণ করলেও বাকি দুষ্কৃতীদের ধরার চেষ্টাই করছে না পুলিশ। ওই দিন শ’খানেক দুষ্কৃতী প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পাটুলি থানার বাঘা যতীনের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী দলের সমর্থক-কর্মী এবং এজেন্টদের উপরে হামলা চালায়। শুধু তা-ই নয়, ওই দিন দুষ্কৃতীরা নিগ্রহ করেছিল পাটুলি থানার পুলিশকেও। তাতেও কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

পাটুলির মতো বেহালায় পরপর দু’দিন হামলার শিকার হতে হয়েছিল বিরোধী দলের নির্বাচনী এজেন্ট থেকে শুরু করে প্রাক্তন বিধায়ককে। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধেই। গুলি ও বোমাবাজির অভিযোগও ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দুই ঘটনায় অন্যতম এক অভিযুক্তের সঙ্গে বেহালা থানার একাংশের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছেন শীর্ষ কর্তারা। প্রাক্তন বিধায়কের বাড়িতে বোমাবাজির ঘটনায় মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গত সেপ্টেম্বরেও ওই এলাকায় গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু থানায় একাংশের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে ওই ঘটনা থানায় নথিবদ্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। এ বারও ভোটের দু’দিন পরে বোমাবাজির ঘটনায় ফের ওই অফিসারদের তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ, তদন্তকারীরা তাই অভিযুক্তদের ধরতে চাইছেন না। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হলেও খোঁজ মেলেনি। তাঁদের অনুমান, পুলিশের একাংশ আগেভাগেই তল্লাশির খবর পৌঁছে দিচ্ছে অভিযুক্তদের কাছে।

নিচুতলার একাংশের অভিযোগ যে সত্যি, তা মেনে নিয়েছেন কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, ভোটের আগে থেকেই বেশ কয়েক জন আধিকারিক-অফিসারদের সম্পর্কে শাসক দলের প্রতি আনুগত্যের অভিযোগ এসেছে। যার পুরোটা সত্য না হলেও কিছুটা সত্য। আর তাই কমিশনারের কঠোর মনোভাবের পরেও হিংসার ঘটনা ঘটে এবং সেই ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও গারদের বাইরে থাকে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy