Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

করোনার জরুরি ওষুধ অমিল, দিকে দিকে হাহাকার

রেমডেসিভিয়ার এবং টসিলিজুম্যাব— দু’টি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগেরই মারাত্মক আকাল।

বুকফাটা: করোনায় স্বজনকে হারিয়ে এমন কান্নার ছবি দেখা যাচ্ছে শহরের বহু হাসপাতালেই। তবু হুঁশ ফিরছে না রাজনৈতিক দলগুলির।

বুকফাটা: করোনায় স্বজনকে হারিয়ে এমন কান্নার ছবি দেখা যাচ্ছে শহরের বহু হাসপাতালেই। তবু হুঁশ ফিরছে না রাজনৈতিক দলগুলির। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৩
Share: Save:

দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশের মতো অক্সিজেন নিয়ে হাহাকার পশ্চিমবঙ্গে হয়তো এখনও ততটা তীব্র হয়নি। কিন্তু জটিল করোনার চিকিৎসায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ‘অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ’ ‘রেমডেসিভিয়ার’-এর আকাল চরমে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি, দুই ক্ষেত্রেই ওষুধ পেতে দিশাহারা হচ্ছেন মানুষ।

গুরুতর অসুস্থ যে কোভিড রোগীদের আইসিইউয়ে রাখতে হচ্ছে এবং অক্সিজেন দিতে হচ্ছে, তাঁদের চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভিয়ার’ প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে অনুমোদন দিয়েছে। ২১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের সময়সীমার জন্য পশ্চিমবঙ্গে ২৭৩২১ ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ সরবরাহ করা হয়েছে। তার পরেও ওই ওষুধের তীব্র অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য দফতর, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সারা দিন তাঁদের দফতরে অসংখ্য অসহায় মানুষ ‘রেমডেসিভিয়ার’ চেয়ে ফোন করছেন। কিন্তু গোটা দেশে মাত্র ছ’টি সংস্থা এই ওষুধ তৈরি করে। আর এই ওষুধ তৈরিতে সময়ও লাগে বেশি। ফলে সমস্যার আশু কোনও সমাধানের পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। খোলা বাজারে এই ওষুধ বিক্রি হয় না। ড্রাগ কন্ট্রোল এটি র সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। তা সত্ত্বেও অভাব সামলানো যাচ্ছে না।

স্বাস্থ্য দফতর মনে করছে, এর পিছনে কিছু চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রোটোকল-বহির্ভূত অযৌক্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং এক শ্রেণির উৎপাদক ও সরবরাহকারীর বাড়তি মুনাফালোভী মনোভাবও দায়ী। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমরা এমনও জানতে পেরেছি যে, একটি বেসরকারি হাসপাতালে ১৫০ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন, যাঁদের ১৪৭ জনকেই ‘রেমডেসিভিয়ার দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রোটোকল জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে। এতে যাঁদের সত্যিকারের প্রয়োজন, তাঁরা পাচ্ছেন না।’’

স্বাস্থ্য-অধিকর্তা আরও বলেন, ‘‘দিল্লিতে শুনছি, ‘রেমডেসিভিয়ার’ এক লক্ষ টাকায় ব্ল্যাক হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরকে দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী অনেক কম দামে (৮২৫ টাকা প্রতি ভায়াল) এই ওষুধ দিতে হয়। তার বদলে ঘুরপথে ব্ল্যাকে বেসরকারি হাসপাতালের রোগীদের তা বিক্রি করতে পারলে মুনাফা অনেক বেশি। সেটা বুঝেই ‘রেমডেসিভিয়ার’-এর আকাল ইচ্ছে করে তৈরি করা হচ্ছে, এমনও হতে পারে।’’

গত বছরের অক্টোবরে এই ওষুধ কেনার জন্য দরপত্র ডেকে একটি সংস্থাকে বাছাই করা হয়। সেই সময়ে করোনার প্রকোপ অনেক কম ছিল বলে ওষুধ তেমন কিনতে হয়নি। কিন্তু চলতি বছরের মার্চের শেষ থেকে হঠাৎ দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয় ও স্রোতের মতো রোগীরা আসতে থাকেন।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এম আর বাঙুর, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল
কলেজ ও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের জন্য সাড়ে তিন হাজার ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ কেনা হয়। কিন্তু দ্রুতই তা নিঃশেষিত হয়ে যায়। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স আরও পাঁচ হাজার ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ কেনার বরাত দেয় বাছাই করা সংস্থাকে। তার মধ্যে প্রথম এক হাজার ভায়াল দু’-এক দিনের মধ্যে আসার কথা। গত ২১ এপ্রিল সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সে মেরেকেটে ২০০ ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ ছিল। এ দিকে, বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রমাগত সেই ওষুধ চেয়ে আবেদন আসছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিমধ্যেই ৫০০ ভায়াল চেয়েছে। তাদের মাত্র ২০ ভায়াল দেওয়া হয়েছে। নদিয়াও ৫০০ ভায়াল চেয়েছে, পেয়েছে ১২৫ ভায়াল। হাওড়া চেয়েছে ৫০০ ভায়াল, পেয়েছে মাত্র ১০ ভায়াল। সাগর দত্ত হাসপাতাল চেয়েছে ৫০০ ভায়াল, পেয়েছে ৪০ ভায়াল, মালদহ চেয়েছে ৪০০, পেয়েছে ১৫। এ ছাড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর স্বাস্থ্য ভবনের কাছে এক হাজার ভায়াল, দার্জিলিং ৫০০ ভায়াল, উত্তর ২৪ পরগনা দু’হাজার ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ চেয়ে পাঠিয়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও একই অবস্থা। বেলভিউ হাসপাতালের তরফে প্রদীপ টন্ডন যেমন বললেন, ‘‘রেমডেসিভিয়ার এবং টসিলিজুম্যাব— দু’টি অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগেরই মারাত্মক আকাল। আমাদের প্রাণান্তকর অবস্থা। দিনে প্রয়োজন হচ্ছে ১৫০-১৭৫ ভায়ালের, অথচ ড্রাগ কন্ট্রোল অনুমোদন দিচ্ছে ৫০-৬০ ভায়ালের।’’ অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ বারে সংক্রমণ যেমন বেশি, তেমনই ক্রিটিক্যাল কেয়ারে অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সিদের ভিড় বাড়ছে। প্রোটোকল আমরা কঠোর ভাবে মানি এবং অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনক ভাবে না কমলে কাউকে ভর্তি নেওয়া হয় না। সেখানেও ৩০০ ভায়াল ‘রেমডেসিভিয়ার’ প্রয়োজন হলে ৩০ ভায়াল পাচ্ছি!’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারি জায়গায় করোনা নির্ণয়ে সিটি স্ক্যান হয় না বললেই চলে। বেসরকারি ক্ষেত্রে সেটা হয় বলে ফুসফুসের জটিলতা অনেক বেশি চোখে পড়ে। তাই সরকারি জায়গার তুলনায় বেসরকারি জায়গায় রোগীদের ‘রেমডেসিভিয়ার’ বেশি লাগে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy