Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বামেদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন কংগ্রেসেরও

মঙ্গলবার শেষ দিন। তার আগেই মনোনয়ন পত্র দাখিল পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছল। সোমবার শাসক বিরোধী মিলিয়েই জেলায় প্রায় প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন জমা দিলেন প্রার্থীরা। সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবনে জমা পড়ল দশটি মনোনয়ন পত্র।

জোট-ছবি। সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমকে দলের উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছেন সিউড়ির কংগ্রেস নেতা।

জোট-ছবি। সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোমকে দলের উত্তরীয় পরিয়ে দিচ্ছেন সিউড়ির কংগ্রেস নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

মঙ্গলবার শেষ দিন। তার আগেই মনোনয়ন পত্র দাখিল পর্ব প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছল। সোমবার শাসক বিরোধী মিলিয়েই জেলায় প্রায় প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন জমা দিলেন প্রার্থীরা। সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবনে জমা পড়ল দশটি মনোনয়ন পত্র। এ দিন জেলার বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায় থেকে শাসকদলের অশোক চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম থেকে শাসকদলের নীলাবতী সাহা একযোগে মনোনয়ন জমা দিলেন। প্রশাসনিক ভবনের চারতলায় দুটি পৃথক ঘরে মনোনয়ন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলে প্রায় ঘন্টা তিনেক। এ ছাড়া নির্দলের তরফেও মনোনয়ন জমা পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

সোমবার সকালে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রবল উৎসাহ ছিল সব জেলার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই। কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের জোটের ছবি প্রকাশ্য এল এ দিনও। সোমবার সিউড়িতে সিপিএমের জেলা কার্যালয় থেকে উভয়দলের কর্মী-সমর্থকদের মিছিল প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত আসে, তাতে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এ দিন সিউড়িতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিউড়ি, দুবরাজপুর ও সাঁইথিয়ার তিন জোট প্রার্থী যথাক্রমে সিপিএমের রামচন্দ্র ডোম, ফব-র বিজয় বাগদি এবং সিপিএমের ধীরেন বাগদি। ঠিক তার পিছনেই বিশাল মিছিল করে প্রশাসন ভবনে পৌঁছে যান শাসকদলের নেতা কর্মীরা। সঙ্গে ছিলেন দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া ও ময়ূরেশ্বরের শাসকদলের প্রার্থী যথাক্রমে নরেশচন্দ্র বাউড়ি, অশোক চট্টোপাধ্যায়, নীলাবতী সাহা এবং অভিজিৎ রায়। এর পরেই আদিবাসী নাচের তালে বিশাল মিছিলের সঙ্গে আসেন মযূরেশ্বরের সেলিব্রিটি বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। ওঁর সঙ্গী ছিলেন সাঁইথিয়া ও দুবরাজপুরের বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা, রামপ্রসাদ দাস।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে রামপুরহাট মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন ঘিরেও তৃণমূল, বাম-কংগ্রেস, বিজেপি-র দলের কর্মীদের মধ্যে তুমুল উৎসাহ উন্মাদনা দেখা গেল। তবে বাম কংগ্রেস জোটের প্রার্থী নিয়ে এখনও হাঁসন ও রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রের জট না কাটলেও দুই কেন্দ্রেই কংগ্রেস প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়ন জমা দিলেন। দিন তিনেক আগে ওই দুই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে সিপিএম কর্মীদের মিছিলে যেমন পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল, এ দিন তার দ্বিগুন সিপিএম কর্মীরা কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে হাজির ছিলেন। রামপুরহাট ও হাঁসন কেন্দ্র ছাড়া এ দিন মুরারই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আলি মোর্ত্তাজা খানের সমর্থনে সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক দলের কর্মীরা দলে দলে হাজির হয়েছিলেন। অন্যদিকে রামপুরহাট, হাঁসন, নলহাটি ও মুরারই এই চার বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন। এবং তাঁদের সমর্থনেও তৃণমূল কর্মীরা রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবন চত্ত্বরে জমায়েত হন।


সৌজন্যের ছবি রামপুরহাটে। হাসিঠাট্টায় মাতলেন বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল
ও তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষে রামপুরহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল দু’জনেই সাংবাদিকদের জানান, সিপিএম এখন দ্বিচারিতা পালন করছে। কারণ তাঁদের কয়েকজন নেতাকে দেখা যাচ্ছে বামফ্রন্ট প্রার্থীর সমর্থনে হাজির থাকছেন আবার কেউ থাকছেন কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ও আইএনটিইউসি জেলা সভাপতি মিল্টন রসিদ হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে মনোনয়ন জমা দেন। দু’জনেই বলেন, বাম ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী হিসাবে তাঁরা মনোনয়ন দাখিল করছেন। এবং জোটের জয় হবেই বলে তাঁরা দাবি করেন।

এ দিন প্রার্থীদের মনোনয়ন ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল বোলপুরেও। প্রত্যাশিত ভাবেই, ঢাকঢোল নিয়ে কয়েকশো নেতা-কর্মী সমর্থকের মাঝে বিরাট শোভাযাত্রায় মনোনয়ন জমা দিলেন শাসকদল তৃণমূলের তিন প্রার্থী। এদিকে অপেক্ষাকৃত কম হলেও, বিজেপিও পিছিয়ে নেই শোভাযাত্রায়।

এ দিন সকালে সকালে মনোনয়নে হাজির হন বিজেপির লাভপুর কেন্দ্রের প্রার্থী নির্মল চন্দ্র মণ্ডল। তাঁর কিছু পরে শোভাযাত্রা সহকারে হাজির হন দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। কিছু সময় ব্যবধানে শাসক দলের তিন কেন্দ্রের তিন প্রার্থী চন্দ্রনাথ সিংহ, মনিরুল ইসলাম ও গদাধর হাজরা হাজির হন মনোনয়নের জন্য। বিরোধীদের অভিযোগ, বাম-কংগ্রেস জোট-সহ অন্যান্য বিরোধী দলের সকলকে ১০০ মিটার দূর থেকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। বিজেপির বোলপুরে কেন্দ্রের প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমাকে নিয়ে ছ’জন থাকায় বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী এক জনকে আটকে দিয়ে যেতে নিষেধ করেন। অথচ তৃণমূলের ক্ষেত্রে কেন এমনটা হবে? স্বাভাবিক ভাবেই শাসক দলের প্রতি আনুগত্য প্রদান করার লক্ষে এমনটা হয়েছে।” বিষয়টি কমিশনের নজরে আনার কথা জানান দিলীপবাবু।

ঘটনা হল, মনোনয়ন কক্ষে এ দিন বোলপুরের মহকুমাশাসক শম্পা হাজরা প্রার্থী-সহ পাঁচ জনের বেশি কাউকে মনোনয়নে সময়ে না থাকার কথা বলেন তৃণমূলকে। তাতে অবশ্য পরিস্থিতির তেমন কিছু বদল হয়নি। তবে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটেনি এ দিনের মনোনয়নে। দিনের শেষে তৃণমূলের তিন কেন্দ্রের তিন জন, বিজেপির দু’জন এবং জনতা দল সেকুলারের বোলপুর কেন্দ্রের প্রার্থী মহম্মদ সাদ্দাকাশ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় নথির অভাব থাকায় নানুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তারকেশ্বর সাহার মনোনয়ন জমা হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly election 2016 Congress TMC Left Front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy