Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

নেতাদের যথেচ্ছাচার দেখে জোট বাঁধছেন চা বাগান শ্রমিকেরা

বদলে যাচ্ছে উত্তরের চা বাগানের ছবিটা। এখন নেতা, ‘চান্দা লাও’ বললেও চা শ্রমিক তা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন না। নেতা ‘মিছিলমে সামিল হো’ ডাক দিলেও সকলে সাড়া দেন না। বরং, কাজ বাদ দিয়ে মিছিলে গিয়ে কী লাভ হবে সেই প্রশ্ন তোলেন। শুধু তাই নয়, ক্ষুদ্র চা চাষিরা যে ভাবে চায়ের বাজারে ঝুঁকে জাঁকিয়ে বসছেন তাতেই যেন বড় চা বাগানের শ্রমিকদের অনেকেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ১৮:১৪
Share: Save:

বদলে যাচ্ছে উত্তরের চা বাগানের ছবিটা।

এখন নেতা, ‘চান্দা লাও’ বললেও চা শ্রমিক তা দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন না। নেতা ‘মিছিলমে সামিল হো’ ডাক দিলেও সকলে সাড়া দেন না। বরং, কাজ বাদ দিয়ে মিছিলে গিয়ে কী লাভ হবে সেই প্রশ্ন তোলেন। শুধু তাই নয়, ক্ষুদ্র চা চাষিরা যে ভাবে চায়ের বাজারে ঝুঁকে জাঁকিয়ে বসছেন তাতেই যেন বড় চা বাগানের শ্রমিকদের অনেকেরই ঘুম ছুটে গিয়েছে। নেতারাও খানিকটা দুশ্চিন্তায়। কারণ, অনেক ছোট চা বাগানেই ইউনিয়ন করতে পারেননি তাঁরা। তাই বড় বাগানের তুলনায় ছোট ছোট চা বাগানে উৎপাদন ভাল হচ্ছে। উৎপাদন খরচও তুলনায় কম। সেখানে নেতারা গিয়ে ধর্মঘট, আন্দোলনের কথা বললেও ক্ষুদ্র চা বাগানের শ্রমিকরা প্রায় আমলই দিচ্ছেন না।

এটা অবশ্য এক দিনে হয়নি। বড় বাগানে চা শ্রমিক নেতাদের একাংশের যথেচ্ছাচার দেখেই ক্রমশ শ্রমিকেরা জোট বেঁধেছেন। যেমন, ডুয়ার্সের দলগাঁও চা বাগানের কথাই ধরা যাক। সেখানে ২০০৩ সালে সিটু নেতা তারকেশ্বর লোহারের বাড়িতে চড়াও হয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা ১৯ জনকে পুড়িয়ে, কুপিয়ে মেরে ফেলেন। তারকেশ্বর কোনমতে পালিয়ে যান। পরে গ্রেফতার হন। ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের অভিযোগ ছিল, বাগানে চা শ্রমিকদের অনেকের ছেলেমেয়ে শিক্ষিত হয়েছেন। কিন্তু, ক্লার্ক পদে নিয়োগের সময়ে ওই সিটু নেতা বাইরে থেকে নিজের লোকজনকে আনিয়ে নিযুক্ত করান। উপরন্তু, দিনের পর দিন তোলা আদায়, পিএউ-এর টাকা আত্মসাৎ হলেও কেন শ্রমিক নেতারা চুপ করে বসে থাকেন, কেন নেতাদের বাড়ি-গাড়ি হলেও শ্রমিকদের ভাঙাচোরা কোয়ার্টার্সে থাকতে হয় তা নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। নিয়োগকে কেন্দ্র করে তারকেশ্বরের বাড়িতে আছড়ে পড়েছিল জনরোষ। সেই থেকে তরাই ডুয়ার্সের চা বলয়ে চা শ্রমিক নেতাদের অনেকেই মেপে পা ফেলেন।

ঘটনার পরে ১৩ বছর কেটে গিয়েছে। দলগাঁওয়ের সেই গণহত্যার মামলা এখনও চলছে। তারকেশ্বর লোহার জামিনে মুক্ত। কিন্তু, ঘরদোর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এখন সেখানে বাগানের এক শ্রমিক পরিবার থাকেন। তিনি পুরনো ঘরবাড়ি ভেঙে নতুন করে বানিয়েছেন। পাশের বাড়িতে দাঁড়িয়ে কানদো মুন্ডা বললেন, ‘‘সে দিনটার কথা ভুলতে পারব না। হঠাৎ হইহই। বাড়িটা ঘিরে তেল ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দিল। কেউ বাইরে বার হওয়ার চেষ্টা করলেই পিটিয়ে-কুপিয়ে মারা হচ্ছিল বলে শুনেছি। আমরা পালিয়ে গিয়েছিলাম। দু’দিন পরে বাড়ি ফিরেছি।’’ কথা বলতে বলতে ঘামছিলেন তিনি। একটু থেমে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ওই ঘটনার পরে নেতাদের বাড়াবাড়ি কমেছে। নেতারা এখন আগের মতো উগ্র নন। ভোটের সময় বলে নয়, সারা বছর নিচু স্বরে কথাবার্তা বলেন। ভালই বটে।’’

দেখুন ভিডিও:

ঘটনা হল, ছোট চা বাগানেও নেতাদের একাংশ থাবা বসানোর চেষ্টা করছেন। অন্তত, পানবাড়ি স্মল টি গ্রোয়ার্স সোসাইটির সভাপতি বাদল দেবনাথ তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ছোট চাষিরা কত কষ্ট করে বাগান করি। কারখানা গড়েছি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে। সেখানেও কিছু নেতা সব সময় ‘এটা দাও, ওটা দাও’ বলে চেঁচানোর চেষ্টা করেন। এমন করলে তো কাজ চলবে না। যাই হোক, আমাদের শ্রমিকরা খুব ভাল বলে এ সব ঝামেলা হয় না।’’ বাদলবাবুরা নিজেরাই টি বোর্ডের সহায়তায় কারখানা গড়ে চা উৎপাদন করছেন। ছোট চা বাগান মালিকদের কনফেডারেশনের অন্যতম কর্তা বিজয়গোপাল চক্রবর্তীও আশাবাদী। সংগঠন সূত্রের দাবি, বর্তমানে উত্তরবঙ্গে প্রায় ৪০ হাজার ছোট চা বাগান রয়েছে। দেশের চা উৎপাদনের প্রায় ৩৪ শতাংশ এখন ওই ছোট চা বাগান থেকে হয়। বড় চা বাগানে টি প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট মেনে শ্রমিকদের কোয়ার্টার্স, আলো, জ্বালানি-সহ নানা সুবিধ দিতে হয়। ছোট চা চাষিদের সেটা দিতে হয় না। ফলে, উৎপাদন খরচও কম। নেতাদের উপদ্রবও তুলনায় কম। ফলে, বন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও কম। তাই বাদলবাবু বললেন, ‘‘নেতারা সবাই খারাপ না। ভাল নেতাও আছেন। কিন্তু, শুধু ‘দাও, লাও’ বলতে অভ্যস্ত নেতারা আরও কমলে গোটা চা ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা অনেক কমে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

tea co operative asembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy