ভাঙড়ের হরিহরপুরে আক্রান্ত বালক। মঙ্গলবার।ছবি: সামসুল হুদা।
মা-দাদুরা যাতে ভোট দিতে না যায়, সে জন্য ভয় দেখাতে এসে তিন বছরের শিশুর হাত মুচড়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বাঁশের ঘা মেরেছিল। রবিবার পঞ্চম দফা ভোটের আগে হালিশহরের ওই ঘটনার পরে ফের রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হল এক শিশু। তার ‘অপরাধ’, তৃণমূলের ফেস্টুন ছিঁড়ে ঘুড়ি বানিয়ে খেলছিল! চড়-থাপ্পড় মারার পরে গাছের গুঁড়িতে মাথা ঠুকে দেওয়া হয় ছেলেটির। জ্ঞান হারায় সে। পরে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসাও করাতে হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ভাঙড়ের দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের হরিহরপুর পালপাড়়ার এই ঘটনায় ৬ জন তৃণমূল কর্মীর নামে এফআইআর দায়ের করেছেন সাহিন মোল্লা নামে ওই ছেলেটির বাবা মহিউদ্দিন।
সাহিন পড়ে ঈশ্বরীপুর মর্জিনা বিদ্যানিকেতনের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। তার কথায়, ‘‘আমরা কয়েক জন বন্ধু মিলে মাঠে খেলছিলাম। ওখানে কয়েকটা পতাকা (আসলে প্লাস্টিকের ফেস্টুন) ছিঁড়ে তাতে সুতো বেঁধে ওড়াচ্ছিলাম। হঠাৎ কয়েক জন লোক এসে বলল, আমাদের দলের পতাকা ছিঁড়েছিস কেন?’’ ছোট্ট ছেলেটি তার সাধ্যমতো বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, পতাকা ছেঁড়াটা যে অন্যায় কাজ, সেটা জানা ছিল না। কিন্তু দলের পতাকার ‘পবিত্রতা’ রক্ষা করতে তৎপর কর্মীদের সে কথা কানে গেলে তো!
‘চাচা’দের চোখ রাঙানি দেখে তত ক্ষণে সরে পড়েছে সাহিনের বন্ধুরা। সাহিনকেই হাতের সামনে পেয়ে ‘সবক’ শেখানো শুরু হয়। আশপাশে লোকজন বিশেষ ছিল না। ছেলেটি জানায়, চিৎকার করে কাঁদছিল সে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর চলতে থাকে। পাশেই ছিল মোটা একটা গাছ। তার গুঁড়িতে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। সাহিন বলে, ‘‘মাথায় খুব লাগল। চোখের সামনে সব অন্ধকার। তার পর আর কিছু
মনে নেই।’’
ঘটনার পরে হামলাকারীরা পিঠটান দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে সাহিনকে বাড়ি নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে আনা হয় ভাঙড়ের নলমুড়ি হাসপাতালে। বিএমওএইচ কৃষ্ণেন্দু রায় জানিয়েছেন, ছেলেটির হাতে-পায়ে দড়ি বাঁধার দাগ ছিল। মাথায় ফোলা। বাইরে থেকে আঘাত খুব মারাত্মক মনে না হলেও ছেলেটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সন্ধের দিকে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা সিপিএম করি বলি ক’দিন ধরেই নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। সামান্য ছুতো খুঁজে ছেলেটাকেও মারল।’’ অভিযুক্ত আজিজুল সর্দার, সফিক সর্দার,
ইউসুফ সর্দাররা সকলেই তৃণমূল কর্মী বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন। পুলিশ তাদের খোঁজ চালাচ্ছে।
এলাকাটি ক্যানিং পূর্ব বিধানসভার অন্তর্গত। সিপিএম প্রার্থী আজিজুর রহমান মোল্লা ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘তৃণমূলের বাহিনী এখন হিংস্র আচরণ করছে। সামান্য ঘটনায় বাচ্চাদেরও রেয়াত করছে না। এমন ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’’
তবে ঘটনাটি ‘রাজনৈতিক’ বলে মানতে নারাজ ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সওকত মোল্লা। তিনি বলেন, ‘‘যত দূর জানি, পারিবারিক কারণেই এমনটা ঘটে থাকতে পারে। তবে আমাদের দলের কেউ জড়িত থাকলে দলগত ভাবে তার নিন্দা করছি। বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy