মাঝেমধ্যে হানা দেয়, সে আলাদা কথা। খিদের জ্বালায় কত জনেই তো কত কিছু করে। তাই বলে ভিড়ে ভিড়াক্কার শহরে টহল! গোসাবা বা ক্যানিং হলেও ভাবা যেত। কিন্তু আজকাল ডায়মন্ড হারবারের মতো জমজমাট এলাকাতেও দিনেদুপুরে মুখ দেখাচ্ছে তারা। ধোপদুরস্ত ধুতিতে বাঙালিবাবু সেজে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগাররাই অভয় দিচ্ছে মানুষকে! ভোট দাও নির্ভয়ে।
দক্ষিণে বাঘ তো উত্তরে পান্ডা। আলসে-কুঁড়ে লাজুক রেড পান্ডারা দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানার নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে এখন রাস্তার মোড়ে লোক ডাকছে। ভোটের ব্যাপারে শিং গলাচ্ছে জলদাপাড়ার একশৃঙ্গেরাও! ভোটবাবুদের হুকুম যে! সব্বাই যেন ভোট দেয়। আর তাতেই এখন বাঘে-গন্ডারে এক রা হয়ে নেমে পড়েছে গোটা বাংলাকে ভোট-ঘাটে জল খাওয়াতে।
আগের বার ছিলেন আনন্দবাবু। নতুন মুখ, আলাপ-পরিচয় করাতে খানিকটা সময় লাগলেও মোটামুটি ভালই সামলেছিলেন। ভোটবাবুরা এ বারটা ছুটি দিয়েছেন তাঁকে। ভরসা রেখেছেন লোকাল, চেনা মুখের উপরে।
যেমন তিস্তা। এ নদীর সঙ্গে জলপাইগুড়ির হৃদয়ের যোগ কে না জানে! তিস্তা এখন তাই পাড়ে উঠে হাতছানি দিচ্ছে, ভোট দিবি আয়। নদী থাকবে, আর নদীর দুষ্টু বাসিন্দারা থাকবে না? আছে বৈকি। জল ছেড়ে গঙ্গার শুশুক এখন হুগলি জেলার পথেঘাটে মিষ্টি মুখে মানুষকে বলছে, ভোটটা কিন্তু দিতেই হবে।
এমনিতে ভোটের জন্য প্রত্যেক রাজ্যের জন্য একটা করে ‘ম্যাসকট’ বেছে থাকেন ভোটবাবুরা। কিন্তু তাঁদের কর্তাটির কাছে এই রাজ্যে এ বারের ভোট একটা বিশেষ ব্যাপার। বিহারে সম্ভব হলে এখানেও কেন নির্বিঘ্নে ভোট হবে না— এই জেদ থেকেই ভোট কেড়ে খাওয়া ভূতেদের উদ্দেশে কড়া কড়া নিদান হেঁকেছেন নসীম জৈদী। কিন্তু শুধু কড়া
দাওয়াইয়ে কি চিঁড়ে ভিজবে? মানুষকেও তো এগিয়ে আসতে
হবে ভোটটা দিতে! তাই ঠিক হয়, তাদেরই মাঠে নামাতে হবে, যা কিছু মানুষের চেনা বা প্রিয়। সব জেলাশাসকের কাছে নির্দেশ যায়, নিজের জেলার ম্যাসকট নিজেরাই বাছুন। তাতেই ভোটের ময়দানে ফজলি আম। মালদায় যাকে ছাড়া আর কিছু ভাবাই যায় না।
এমনকী, ভোট বাজারে নেমে পড়েছে বাঁটুল দি গ্রেটের মতো চরিত্ররাও। ছেলেবুড়ো সবার প্রিয়, নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্টিকে এখন দেখা যাচ্ছে হাওড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। উত্তর ২৪ পরগনায় ডিজনিল্যান্ডের মিকিমাউসের ডিগবাজি। বর্ধমানে নেমেছে ‘ভোটু’। দক্ষিণ দিনাজপুরে ‘ভোটুদা’। পুরুলিয়ায় ‘ভোটেশ্বর’ হাসছে, ভাল সংখ্যায় ভোটারকে বুথে টেনে আনতে পেরে।
নজরকাড়া আরও এক জন ভোট-বাজারে। বাঙালির অতি প্রিয় গোপাল। ভাঁড় বটে, তবে ভাঁড়ামোর মোড়কেই রাজার অনেক দুষ্টু খেয়াল শুধরে দেওয়ার সাহস ছিল তার। রঙ্গরসের তীক্ষ্ণ হুলে বুঝিয়ে দিতে পারত, রাজা কাপড় পরেছেন বটে, তবে এত সূক্ষ্ম যে চোখেই পড়ে না!
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবার এখন নেই। নাম ভাঁড়িয়ে নদিয়াতেই গোপাল এখন ‘ভোটগোপাল’ অবতারে। বার্তা একটাই, ভাল রাজা চাইলে ভোট দাও সকলে। নইলে সবই ভো-কাট্টা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy