Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
আজ কঠিন ম্যাচ

আছে: ৪৯-এ ৪৩, প্রশ্ন: থাকবে কি না

জঙ্গলমহলের মতো দূরের মাঠে খেলা হয়ে গিয়েছে। লিগ পেরিয়ে খেলা উঠে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। দিদির বাড়ির কাছাকাছি। শহর-আধা শহর-গ্রাম মিলিয়ে আজকের ম্যাচ তাই মিশ্র পিচে।

যাদবপুরে জোটের প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

যাদবপুরে জোটের প্রচার। —নিজস্ব চিত্র।

শঙ্খদীপ দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৭:০০
Share: Save:

জঙ্গলমহলের মতো দূরের মাঠে খেলা হয়ে গিয়েছে। লিগ পেরিয়ে খেলা উঠে এসেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। দিদির বাড়ির কাছাকাছি। শহর-আধা শহর-গ্রাম মিলিয়ে আজকের ম্যাচ তাই মিশ্র পিচে। গত টুর্নামেন্টে এ মাঠেই দিদির দলের পারফরম্যান্স এখনও কিংবদন্তি। কালেভদ্রে এমন রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা হয়! হিসেব মতো স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৭ শতাংশ। সেই ধারাবাহিকতা থাকবে কি?

স্ট্রাইক রেটের হিসেবটা আপাত গোলমেলে ঠেকলে রানের অঙ্কটা দেখা যাক। হাওড়ার ১৬টি ও উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসন মিলিয়ে আজ পঞ্চম দফায় ভোট হবে ৪৯টি আসনে। ২০১৪-র নির্বাচনে এর মধ্যে ৪৩টিই জিতে নিয়েছিল দিদির দল। অ্যাকশন রিপ্লে হবে তো?

লোকসভা ভোটে চাপ ছিল। কিন্তু এ বার আরও বেশি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নের যেমন হয়! ভাইদের কাছে তাই ঘন ঘন ফোন আসছে দিদির। পারবে তো? দুই ক্যাপ্টেন অরূপ রায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রকাশ্যে দাবি করছেন, স্ট্রাইক রেট নাকি বাড়বে! অথচ ড্রেসিং রুমে কান পাতলে বোঝা যাচ্ছে, আশা ততটা নয়। আত্মবিশ্বাসে বরং বেশ কিছুটা ভাটার টান।

কেন? গা ঘামানোর ম্যাচেই দেখা গিয়েছে শুধু ব্যাট করে জেতার ঝুঁকি নেননি ভাইরা। বালি পুরসভা হোক কিংবা বিধাননগর পুরনির্বাচন, বহিরাগতদের মাঠে ঢুকিয়ে মারধর করা হয়েছিল বিরোধী খেলোয়াড়দের। ভয়ে বা ভক্তিতে সিঁটিয়ে ছিলেন আম্পায়ার। ফেয়ার প্লে পরের কথা, খেলাই হয়নি। তাই আজ ‘ফ্যাক্টর’ কিন্তু অনেকগুলো—

১) হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা পাঁচ বছর আগেও ছিল লালদুর্গ। গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সেখানে বামেদের হারিয়েছিলেন দিদি। কংগ্রেস এখন বামেদের সঙ্গে। ২) খেলা শুরুর আগেই গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছে দিদির বিরুদ্ধে। ২০১৪-র ভোটে মোদী-দিদি লড়াই ছিল। মোদীর ‘কোমরে দড়ি পরানোর’ হুমকিও দিয়েছিলেন দিদি। এ বার সেই ঝাঁঝ নেই। আবার মোদীর মুখে তেজি শব্দ থাকলেও সারদায় সিবিআই তদন্ত থমকে। হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় সংখ্যালঘু ভোট কমবেশি ৩০%। ২০১৪-এ যাঁদের অধিকাংশই দিদির দিকে ছিলেন। কিন্তু গড়াপেটার অভিযোগের আবহে তাঁরা কী করবেন, সেটা বড় প্রশ্ন।

৩) গত টুর্নামেন্টের আগেও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তখন দিদি চোখ রাঙিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলতেন, ‘মদন চোর? মুকুল চোর?’ কিন্তু এখন টিভি খুললেই দেখা যাচ্ছে, বিছানায় গা এলিয়ে মদন মিত্র নারদের টাকা গুনে নিচ্ছেন। উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদ টাকা নিয়ে বলে দিচ্ছেন, সাধ্যমতো সব লবি করে দেবেন। কামারহাটি, বীজপুর, উলুবেড়িয়া, সালকিয়ায় কি এর প্রভাব পড়বে না? নারদ অভিযুক্তদের ঘরে বসিয়ে দেওয়ার পরামর্শই দিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের দীনেশ ত্রিবেদী। দিদি উল্টে তাঁকেই ঘরে বসিয়ে দিয়েছেন। শিল্পাঞ্চলের আসনে এর প্রভাব পড়বে না তো? ৪) গা-ঘামানোর ম্যাচ কেমন হয়েছিল, দিল্লি থেকে আসা আম্পায়াররা আগেই জেনে নিয়েছেন। তাই আজকের ম্যাচে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইদানীং কালের মধ্যে সব থেকে বেশি। দিদি সব পুলিশকে ‘আমাদের লোক’ বলে চালিয়ে খেললেও দেখা যাচ্ছে উর্দি পরিষ্কার রাখার চেষ্টাও শুরু হয়েছে বাহিনীর মধ্যে। আর তা দেখে ভোটারদের ভরসা যেমন বাড়ছে, তেমনই রান রুখে দেওয়ার শপথ নিচ্ছেন বিরোধীরা। এ সব ‘ফ্যাক্টর’-ই তুলে দিচ্ছে প্রশ্ন: ফের হবে কি?

আগের ম্যাচগুলির রিপোর্ট দেখে শাসক দলে খুব উচ্ছ্বাস নেই। অন্য দিকে রক্ষণশীল হিসেব হাতে নিয়েও চোখ উজ্জ্বল সূর্যকান্ত মিশ্র ও অধীর চৌধুরীর। তা ছাড়া, দু’দিন আগে একটা অলক্ষুণে ঘটনাও ঘটেছে। হাওড়ার ডুমুরজলায় সভা ছিল দিদির। একেবারে তাঁর অফিসপাড়ায়, নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। দেখা গেছে, এমনিই ভিড় পাতলা। তার উপরে দিদির বক্তৃতা শেষ হওয়ার অনেক আগেই মানুষ সভা ছাড়তে শুরু করে।

আজকের ম্যাচে তাই চাপ আছে। ৪৯-এ ৪৩ ধরে রাখা কি মুখের কথা!

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy