প্রতীকী ছবি।
তুই-তোকারি সম্বোধন লেগেই রয়েছে। কেউ কাউকে বলছেন অশিক্ষিত, কখনও বলছেন তোলাবাজ। কেউ কারও বিরুদ্ধে সরব ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে। শারীরিক গঠন নিয়েও রয়েছে কটাক্ষ। ভাষার এমন আরও নানা ‘মণিমুক্ত’ ইদানীং শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন দলের নেতানেত্রীদের বক্তৃতায়। এর আগে ‘ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেব’ বলে আস্ফালন শুনেছেন রাজ্যের মানুষ। শুনেছেন, কেউ কাউকে বলছেন ‘কালসাপ’। কেউ কাউকে সাগর পার করে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন তো কেউ কারও নাম না করে কটাক্ষ করছেন ‘ভাইপো’ বলে। এক কথায়, রাজনীতিবিদদের অনেকেই অধুনা কুকথায় পঞ্চমুখ, কণ্ঠে ভরা বিষ।
এ সব নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মানুষের মুখে মুখেও ফেরে নেতানেত্রীদের এ হেন শব্দচয়নের সমালোচনা। কিন্তু কোনও শিবিরের দিক থেকেই রসনায় রাশ টানার তেমন চেষ্টা দেখা যায় না।
এই আবহে ব্রিগেডে সম্প্রতি সংযুক্ত মোর্চার জনসমাবেশে বক্তাদের ভাষার পরিশীলিত ভাব অনেকেরই নজর কেড়েছে। সেখানে রাজনৈতিক বক্তব্যই প্রাধান্য পেয়েছে। তা নিয়ে আলোচনা চলছে পাহাড় থেকে সাগরে। রাজনীতির ভাষা অন্য দলগুলির ক্ষেত্রেও কেন শালীনতার গণ্ডি ছাড়াবে বার বার, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। অতীতে অবশ্য বিনয় কোঙার বা অনিল বসুদের মতো বাম নেতাদের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও ভাল চোখে দেখেননি তাঁদেরই দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
এ বার দলের নেতানেত্রীদের ভাষার উপরে নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য পদক্ষেপ করল রাজ্য বিজেপি। দলের বহু নেতাই এ বার সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বক্তাদের কুকথা দল সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথস্তর থেকে শুরু করে জেলাস্তরের নেতানেত্রীরা ভাষণে কী বলবেন, কী বলবেন না, তার নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে। বক্তাদের নিয়ে রীতিমতো প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন হচ্ছে। সেখানে রাজ্য নেতৃত্ব উপস্থিত থাকছেন। তাঁরা বক্তাদের ভাষণের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অন্তর্গত বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট ও ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন হয়েছিল। সেখানে মণ্ডল সভাপতি, বিধানসভার আহ্বায়ক, জেলা কমিটির পদাধিকারীরা হাজির ছিলেন। ভোটের ময়দানে কী ধরনের বক্তৃতা দিতে হবে, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেন, বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারি, অমর গঙ্গোপাধ্যায়, রাজকমল পাঠক, বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ভাষণে অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা যাবে না। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্থানীয় নেতানেত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন বক্তৃতা করার সময়ে অশ্লীল বাক্য, কটূ শব্দ প্রয়োগ না করেন।’’ কেন এমন নির্দেশ? দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদ্য মনোনীত সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় আসছি। তাই আমাদের মুখ থেকে কুকথা, আলটপকা মন্তব্য যাতে না বের হয়, তা নিশ্চিত করতেই দল এই নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, আমরা যে অন্য দলের থেকে আলাদা, তা মানুষ বুঝবেন।’’
বিজেপির এই পদক্ষেপকে অবশ্য কটাক্ষ করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা। বিজেপি আমাদের কাছ থেকে শিষ্টাচার শিখুক। কী ভাবে ভদ্র, নম্র ভাবে কথা বলতে হয়, তা শিখুক। এ রাজ্যে কু’কথা নিয়ে এসেছেন ওঁদের কেন্দ্রীয় নেতা।’’ সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘বিজেপির বক্তাদের যাঁরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কুকথা না বলার জন্য, তাঁরাই তো কুকথা বলে বেড়াচ্ছেন।’’ ভোটারদের একটা বড় অংশ যে এ ধরনের শব্দ প্রয়োগকে ভাল চোখে দেখছেন না এবং এই ধরনের ভাষা যে বঙ্গসংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা আড়ালে মানেন অনেক জননেতানেত্রীই। তবে তাঁদের অনেকের পাল্টা যুক্তি, বাজার গরম করতে এবং সাধারণ মানুষের মুখের কথা কেড়ে মঞ্চ থেকে বলতে পারলে নম্বর বাড়ে বই কমে না।
এখন দেখার, মাস্টারমশাইরা যা শিখিয়ে গেলেন, ছাত্রছাত্রীরা তা কতটা মেনে চলেন। আর তাদের পাঠদান শিক্ষকদের মুখের ভাষাতেও আগল টানতে পারে কিনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy