আড়ালে আছেন ভারতী ঘোষ!
ভোট শুরুর আগেই নির্বাচন কমিশন তাঁকে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব থেকে সরিয়েছে। তার পরেও পশ্চিম মেদিনীপুরে দ্বিতীয় দফার ভোট ভারতীর উপস্থিতিতেই হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। সোমবার জেলার ১৩টি কেন্দ্রে নির্বাচন ছিল। সেই ভোট-পর্ব নিয়ন্ত্রণ করতে রবিবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী মেদিনীপুর শহরের পুলিশ লাইনে পুরনো বাংলো ‘সেফ হাউস’-এই ছিলেন বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের দিন ভারতী মেদিনীপুরে ছিলেন। দু’হাতে ভোট সামলেছেন তিনি। এক দিকে, ফোনাফুনি করে তৃণমূলের কোন্দল সামলেছেন, দলের নেতা-কর্মীরা বিরোধ ভুলে ‘ভোটের কাজ’ করছেন কি না তদারকি করেছেন। ঘনিষ্ঠ অফিসারদের মাধ্যমে সিভিক ভলান্টিয়ার ও রাজ্য পুলিশের ‘মুভমেন্ট’ নিয়ন্ত্রণও করেছেন। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ‘বিভ্রান্ত’ করতে পুলিশের ভূমিকা কী হবে, তা-ও ফোনে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই জেলা ছাড়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সব কেন্দ্রের তৃণমূল এজেন্টদের থেকে বুথভিত্তিক হিসেব আসতে দেরি হয়। তাই এ দিন ভোরেই মেদিনীপুর ছাড়েন ভারতী।
সোমবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কেন্দ্র নারায়ণগড় ও কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার কেন্দ্র সবংয়ে ভোট ছিল। এই দুই কেন্দ্রকে পাখির চোখ করেই ভারতী তাঁর ‘খাস’ লোকেদের দিয়ে
‘ভোট অপারেশন’ সেরেছেন বলে অভিযোগ। মানসবাবু বলেন, ‘‘আমায় আর সূর্যবাবুকে হারাতে ভারতীই পুলিশ-দুষ্কৃতী যোগসাজশে ভোট অবাধ হতে দেননি। তিনি আগে থেকেই সবং-সহ বিভিন্ন থানায় কাছের লোকেদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সোমবারের ভোটে জঙ্গলমহল থেকে যে সব পুলিশ এসেছিলেন তাঁরাও ভারতীর ‘খাস’ লোক।’’ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেনেরও দাবি, ‘‘পুলিশ লাইনের বাংলো থেকে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে মানসবাবুকে হারানোর চেষ্টা করেছেন ভারতী।’’
কিন্তু এ সব বিরোধীদের কানে পৌঁছচ্ছে কী করে? সিপিএম সূত্রের খবর, পুলিশ-প্রশাসনের একাংশই এসব খবর দিচ্ছেন। সূর্যকান্ত সিউড়ির সভায় বলেছেন, ‘‘দিদি, যে সব সরকারি অফিসারের সঙ্গে আপনি ফিসফিস করে কথা বলছেন, তাঁরাই কিন্তু আমাদের সব বলে দিচ্ছেন। তাঁরা জানেন, ১৯ মে-র পরে আপনি আর থাকছেন না।’’
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ অফিসার হিসেবে পরিচিত ভারতী। প্রকাশ্যে বারবার মমতাকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। পিংলা-বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রীর দাবির পুনরাবৃত্তি করে জানিয়েছেন, ‘বিয়েবাড়ির বাজি তৈরি হচ্ছিল।’ সবং কলেজে ছাত্র পরিষদ কর্মী খুনের ঘটনাতেও তদন্ত শেষের আগেই ভারতী দাবি করেন, ছাত্র পরিষদের অন্তর্দ্বন্দ্বেই খুন। আবার খড়্গপুরে পুর-নির্বাচন পর্বে মাফিয়াদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধীদের হেনস্থার অভিযোগ ছিল ভারতীর বিরুদ্ধে।
এই শাসক-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগেও পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি এবং ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে কমিশন ভারতীকে সরায়। যদিও ভোট মিটতেই তাঁকে ফেরানো হয়। এ বার ভোটের আগেই এসপি-র পদ থেকে ভারতীকে সরিয়ে মাওবাদী দমনে নিযুক্ত বিশেষ বাহিনীর প্রধান করা হয়েছিল। কমিশন এই পদ থেকেও সরিয়েছে ভারতীকে। কিন্তু তার পরেও নিজের খাসতালুকে ভারতীর গতিবিধি ঠেকানো যায়নি বলে অভিযোগ। বিরোধীদের দাবি, ভোটের আগের রাতে ১১টা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের পুলিশ লাইনের বাংলোয় তাঁকে নামিয়ে দেয় গাড়ি। সোমবার, ভোটের সকালে ভারতী-ঘনিষ্ঠ জেলার পুলিশকর্তারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। অভিযোগ, এই পর্বে নিজের মোবাইল ফোন সুইচড্ অফ রেখেছিলেন ভারতী। এক অফিসারের কথায়, ‘‘ম্যাডাম জানেন তিনি কমিশনের নজরে রয়েছেন। তাই কলকাতা ছাড়ার পরই মোবাইল বন্ধ করে দেন।’’ তবে পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর কাছে আরও তিনটি মোবাইল ছিল। রবিবার মেদিনীপুর পুলিশ লাইন থেকেও কয়েকটি মোবাইল নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই নাকি যাবতীয় ফোন সেরেছেন ভারতী।
‘‘সোমবার আপনি মেদিনীপুরের পুলিশ লাইনে ছিলেন?’’ প্রশ্ন করলে প্রাক্তন পুলিশ সুপার নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘পুরোটাই মিথ্যে। ডাহা মিথ্যে। মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে বা অন্য কোথাও থাকার প্রশ্নই নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy