শিখা মিত্র ও সরলা মুর্মু। ফাইল চিত্র
প্রয়াত কংগ্রেসনেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী তথা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র সোমবার বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। ঘটনাচক্রে, একইদিনে বিজেপি-তে যাচ্ছেন তৃণমূলের আরও এক প্রাক্তন বিধায়ক সোনালি গুহও। বস্তুত, সোমবার শিখার সঙ্গেই আরও তিনজনের বিজেপি-তে যোগদান ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। শোনা যাচ্ছে, গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে পারেন তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় প্রথম দফায় নাম থাকা মালদহের হবিবপুরের প্রার্থী সরলা মুর্মু। একই সঙ্গে পদ্মশিবিরে যোগ দিতে পারেন খড়্গপুরের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা দেবাশিস চৌধুরী ওরফে মুনমুনও। বাঁকুড়ার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা দরিপাকে নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, শম্পাকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল।
এক সময় তৃণমূলের টিকিটে দু’বার বিধায়ক হন শিখা। তখন সোমেনও তৃণমূলে। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে জোড়াফুল শিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে সোমেন ফেরেন কংগ্রেসে। একই পথ অনুসরণ করেন তাঁর সহধর্মিনীও। এ বার সেই শিখাই চললেন বিজেপি-তে। তবে ঘটনাপ্রবাহ বলছে, ইতিমধ্যেই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে টুইট করেছেন সোমেন-পুত্র রোহন। যা দেখে জল্পনা, মা বিজেপি-তে গেলেও রোহন তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু পরে শোনা যায় তিনিও বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। অনেকের দাবি, বিজেপি এবং শিখার মধ্যে ‘অনুঘটক’ হিসাবে কাজ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। গত জানুয়ারি মাসেই সোমেনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু।
সোমবার বিজেপি-র ‘যোগদান মেলা’য় চমক হয়ে উঠতে পারেন তৃণমূলের প্রথম প্রার্থিতালিকায় নাম থাকা সরলা। মালদহের হবিবপুরে দল প্রার্থী করেছিল তাঁকে। কিন্তু শুক্রবার প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার তিনদিনের মাথায় সোমবার তাঁকে সরিয়ে হবিবপুরে প্রদীপ বাস্কেকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সরলাকে সরানোর কারণ হিসাবে তাঁর ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কারণ দেখানো হয়েছে। সরলার রাজনৈতিক গতিপথ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায়ের মন্তব্য, ‘‘নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে কেউ যেখানে খুশি যেতে পারেন। ওঁকে শারীরিক কারণেও সরানো হয়ে থাকতে পারে। যেখানে ভাল প্রার্থী থাকেন, তাঁকেই বেছে নেওয়া হয়। জয়ের সম্ভাবনা যাঁর বেশি তাঁকেই প্রার্থী করবে দল।’’ বিজেপি সূত্রে খবর, দলবদল করতে রবিবার রাতেই মালদহ থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সরলা। সেই খবর পেয়েই তড়িঘড়ি তাঁকে প্রার্থিতালিকা থেকে সরিয়েছে শাসক শিবির। সোমবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ না মুকুল রায়, কার হাত থেকে সরলা বিজেপি-র পতাকা নেন সেটা দেখার।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, গত পঞ্চায়েত ভোটের পর মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন গৌরচন্দ্র মণ্ডল। জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন সরলা। এক সময় ওই জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। তিনি বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছিল গৌরের নেতৃত্বে একঝাঁক সদস্য বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন। হবিবপুরে বিজেপি ফের প্রার্থী করতে পারে ওই কেন্দ্রের বর্তমান বিধায়ক জুয়েল মুর্মুকে। জুয়েলের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ নয় বুঝতে পেরেই ওল্ড মালদহ আসনে প্রার্থী হতে চান সরলা। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব সেই দাবিতে কান দেননি। এর পরেই সরলা দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিজেপি সরলাকে ওল্ড মালদহে লড়াই করার সুযোগ দেবে কি না, সেটাও দেখার।
সোমবার বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন খড়গপুরের তৃণমূল নেতা দেবাশিস ওরফে মুনমুনও। গত শনিবার বিজেপি যে প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে তাতে, খড়গপুর সদর আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে এক সময় বিধায়ক ছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পরে ২০১৯-এ মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় যান তিনি। এর পর খড়গপুর সদর বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। জোড়াফুল শিবিরের একটি অংশের দাবি, তখনই খড়গপুর সদর কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মুনমুন। কিন্তু প্রদীপকে দল প্রার্থী করায় তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি। এ বারও মুনমুনের আশা ছিল দল তাঁকে ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করবে। কিন্তু এ বারও তাঁকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পর সমস্ত দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুনমুন। এর পরেই তাঁর পদ্মশিবিরে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু মুনমুন বিজেপি-তে যোগ দিলে তাঁকে খড়গপুর সদরে প্রার্থী করা হবে, না কি দিলীপই ফের প্রার্থী হবেন সেখানে, তা নিয়ে কেউ কিছু খোলসা করছেন না। দিলীপ বলেছেন, ‘‘দল আমাকে প্রার্থী হতে বলেনি।’’
এ ছাড়াও, সোমবারই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার বিদায়ী কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছরের কাউন্সিলর। টিকিটেরও দাবিদার ছিলেন। গত বিধানসভা ভোটেও টিকিট না পেয়ে দল ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। দল তাঁকে কাউন্সিলরের কাজও ঠিকমতো করতে দেয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। এর মধ্যে প্রশান্ত কিশোরের টিম গিয়ে মৃগাঙ্কের ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করেছে। তাতে কাজ হয়নি বলেই খবর। তাঁর সঙ্গেই বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অতীন রায়েরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy