ভোটদান নাকি একটা উৎসব! আমি একমত নই।
এখন তো ভোট নিয়ে মজার স্লোগান কিংবা রুচিশীল লড়াই চোখেই পড়ে না। ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুৎসা, অপপ্রচার এখন ভোট জেতার হাতিয়ার। আমাদের ছোটবেলা কিন্তু এমন ছিল না। তখন বেশ কয়েকটা স্লোগান ও দেওয়াল লিখন বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি কোথায়! বাম দলের স্লোগান ছিল, ‘ভোট দিন বাঁচতে, তারা হাতুরি কাস্তে’। কংগ্রেসও পিছিয়ে ছিল না। ওরা ‘রুখতে চিন, গড়তে দেশ কংগ্রেসকে ভোট দিন’ ছড়াতে দেওয়াল ভরিয়ে দিত।
আরও একটা পোস্টারের কথা মনে পড়ছে। খুব সম্ভবত সেটা ১৯৮০ সাল। বেহালার এক জায়গায় কংগ্রেস লিখেছিল, ‘চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে কদমতলায় কে? জ্যোতি নাচছে, প্রমোদ নাচছে, হরেকেষ্টর বিয়ে।’ তবে বামেরাও পিছিয়ে ছিল না। এর পরের দিন সিপিএম ঠিক এর পাশের দেওয়ালে লিখল, ‘ঠিক বলেছ বাহ বলেছ বেশ বলেছ ভাই, সময় মত ইন্দিরাকে সাজিয়ে আনা চাই।’ এই ব্যাপারগুলোর মধ্যে কৌতুকের সঙ্গে যুদ্ধ মিশে ছিল। যুদ্ধের মধ্যেও মিশে ছিল কৌতুক। তবে এখন অশ্লীলতার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন যে ভাষায় ভোট যুদ্ধের স্লোগান চলছে সেটা বাঙালিদের ভাষা নয়।
রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আমি খুবই ওয়াকিবহাল। আমি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ। এবং এই অভ্যেস আমার ছেলেবেলা থেকেই রয়েছে। আজকের যুগে ভোটযুদ্ধে জেতার প্রধান হাতিয়ার হল ছাপ্পা ভোট, রিগিং, বুথ দখল। সেই ১৯৭২ সালে কংগ্রেসের আমলে ভোট জেতার জন্য এই সব অনৈতিক কাজ শুরু হয়। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হল এর পর থেকে এগুলো ভোট জেতার প্রধান অস্ত্র হয়ে গেল!
শুধু রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী নন, সাধারণ মানুষও একটা কথা প্রায়ই বলে থাকেন, তাঁদের মতে ভোটদান নাকি একটা উৎসব! আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। বরং ভোট দান হল সংসদীয় গণতন্ত্রের মধ্যে থাকা মানুষদের একটা দায়িত্ব। সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর আস্থা থাকলে সেই ব্যক্তির অবশ্যই ভোট দেওয়া উচিত।
ব্যক্তিগত ভাবে ভোট দিতে গিয়ে আমাকে কিংবা আমার পরিবারকে কোনও দিন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। তবে কয়েক বছর আগে ভোট দিতে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে আমার ব্যাপক তর্কাতর্কি হয়েছিল। আমি বরাবর লেক গার্ডেন্সের একটা স্কুলে ভোট দিয়ে থাকি। সে বার ভোট দেওয়ার সময় প্রিসাইডিং অফিসার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন। ব্যাপারটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আমার সঙ্গে ঝামেলাও লেগে গিয়েছিল।
শেষ করার আগে আরও একটা বিষয় নিয়ে বলতে চাই। এ বারের নির্বাচনে ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি আছে। প্রথমত এটা চুরি করা স্লোগান এখানে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হল, যে রাজ্যে শিল্প-স্বাস্থ্য-শিক্ষার হাল খারাপ, যে রাজ্যে বেকারত্ব বেড়েই চলছে, সেখানে ‘খেলা হবে’ স্লোগান তুলে দুটো দল কী বোঝাতে চাইছে? সমাজের মূল দায়িত্ব পালন না করে যেন একে অন্যের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলতে চাইছে ‘খেলা হবে’! যেন একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy