Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

গুলি-বোমায় উত্তপ্ত বেহালা, হিংসার দায় নিচ্ছেন না মমতা

কলকাতায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস কেবল রড, লাঠি, ইটে আর সীমাবদ্ধ থাকল না। এ বার গুলিও চলল। তা-ও অন্তত চার রাউন্ড। বোমা পড়ল সিপিএম নেত্রী কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে । দিন কয়েকের জন্য বাঘ হয়ে যাওয়া পুলিশ ফের ইঁদুরে পরিণত হওয়ার কারণেই এই ঘটনা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খাস লালবাজারেই।

সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে বোমা হামলায় জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে বোমা হামলায় জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৪:৫৯
Share: Save:

কলকাতায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস কেবল রড, লাঠি, ইটে আর সীমাবদ্ধ থাকল না। এ বার গুলিও চলল। তা-ও অন্তত চার রাউন্ড। বোমা পড়ল সিপিএম নেত্রী কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে । দিন কয়েকের জন্য বাঘ হয়ে যাওয়া পুলিশ ফের ইঁদুরে পরিণত হওয়ার কারণেই এই ঘটনা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খাস লালবাজারেই।

শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করতে পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র মঙ্গলবারই বাহিনীকে ঠারেঠোরে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কারও কারও মেরুদণ্ড এখনও ঝুঁকেই আছে, অনেকে আবার মেরুদণ্ডই হারিয়ে ফেলেছেন বলে মেনে নিচ্ছেন পুলিশের একাংশ।

যদিও ভোটের সময়ে এবং তার পরের হিংসার দায়িত্ব নিচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ দিন মমতা অভিযোগ করেন, ১৯ মে পর্যন্ত তাঁর সরকারের মেয়াদ থাকলেও মার্চ মাস থেকে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই কোনও হিংসার দায়ই তাঁর নয়। মমতা দাবি করেন— তাঁর প্রশাসনের নেতৃত্বে পঞ্চায়েত ও পুরসভার যে ভোট হয়েছে, তাতে কোনও প্রাণহানি হয়নি। কিন্তু এ বার বদলির ভয় দেখিয়ে ডিএম-এসপি-দের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই নালিশ নতুন নয়। তাঁর নির্দেশে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করে ডিএম-এসপিদের বদলি করায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে। তবে কমিশন জবাবি চিঠিতে নবান্নকে জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের এবং সে দায়িত্ব তাদেরই পালন করতে হবে।

মঙ্গলবার গভীর রাতে বেহালার যে তল্লাটে গুলি চলেছে, সেই সেনহাটি শান্তিপূর্ণ এলাকা বলেই পরিচিত। রায়বাহাদুর রোড এবং বামাচরণ রায় রোডের মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। রাত দেড়টা নাগাদ গুলির শব্দে অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। কেউ কেউ অপরিচিত এক যুবককে চলে যেতেও দেখেছেন। সকালে চারটি গুলির খোল মেলে রাস্তায়। পুলিশের ধারণা আতঙ্ক ছড়ানোই লক্ষ্য ছিল, দুষ্কৃতীরা যাকে বলে ‘চমকানো’। এর পর বুধবার রাত প্রায় বারোটা নাগাদ বোমা পড়ে বেহালার সিপিএম নেত্রী কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে। এ বারেও অভিযুক্ত তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

শনিবার ভোট শেষ হওয়ার পর থেকেই বালিগঞ্জ, হরিদেবপুর, কসবা ও পাটুলি এলাকায় সন্ত্রাস ও হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের দিকে। অভিযোগ, পাটুলিতে হামলা হয়েছে পুলিশের সামনেই। রবিবারের পর সোমবারও হামলা হয়েছে সেখানে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশ তেমন কঠোর পদক্ষেপও করেনি। এ সবের মিলিত ফল-ই মঙ্গলবার রাতে বেহালায় গুলি চলার ঘটনা— স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশের একাংশ।

এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘কিছু অফিসারের পক্ষপাতদুষ্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তাঁদের মনোভাব ছিল, ভোটটা উতরে দিয়ে কমিশনের কাছে ভাল সাজা। ভোটের পর তাঁরা গা ছেড়ে দিয়েছেন। ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের এটা অন্যতম কারণ।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, গুলি চলার গুরুত্ব অনুধাবন করে তদন্তভার গোয়েন্দা বিভাগ নিতে পারে।

কিন্তু তদন্ত কে করবে? ‘ভিতু’ পুলিশ না মেরুদণ্ড সোজা রাখা পুলিশ! প্রশ্ন সেটাই।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy