Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

জোট আর পদ্মই কাঁটা চাল-বালুর মসৃণ পথে

নির্দেশ ছিল দু’নম্বর রেল গেটে এসে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়ার। সেই মতো রিকশা স্ট্যান্ডে প্রশ্নটা ছোড়া হল। দাদা, বালুদার বাড়ি বলতে পারেন? প্রশ্ন শেষ করার আগেই পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কে চাল-বালু?’’ বলি, আরে মন্ত্রী, এখানকার এমএলএ।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
হাবরা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৬
Share: Save:

নির্দেশ ছিল দু’নম্বর রেল গেটে এসে কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়ার। সেই মতো রিকশা স্ট্যান্ডে প্রশ্নটা ছোড়া হল। দাদা, বালুদার বাড়ি বলতে পারেন? প্রশ্ন শেষ করার আগেই পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কে চাল-বালু?’’ বলি, আরে মন্ত্রী, এখানকার এমএলএ। রিকশা স্ট্যান্ডের ফের জবাব, হ্যাঁ, দু’টাকার মন্ত্রী! ততক্ষণে বেশ কয়েক জনের জটলা হয়ে গিয়েছে। ভি়ড় থেকে এক যুবক জানতে চাইলেন, ‘আপনারা কি পেস?’’

র-ফলা বিহিন এই যুবকের রাজনৈতিক আনুগত্য বুঝে ওঠার আগেই তিনি বললেন, ‘‘চাল-চিনি-তেল, বালুদার কাছে অন্য সবাই ফেল!’’ তার পরে ওই যুবকই রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর বাড়ির গাইড হয়ে গেলেন। তাঁর কাছেই শুনলাম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাবরার বাড়ির সদর দরজা নাকি রিমোট কন্ট্রোলে খোলে!

খোলারই তো কথা। কারণ উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনে তৃণমূলের ভাগ্যের রিমোট কন্ট্রোল যাঁর হাতে, তাঁর বাড়ির সদর দরজা রিমোটে খুলবে সে মামুলি ব্যাপার। তবে হাবরায় তাঁর নিজের তালুকে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাজি এবং বাস্তবতা যে দু’টাকা কেজি চাল, তা দু’নম্বর রেল গেটে পৌঁছেই ঠাওর করা গেল।

রিমোটে খোলা দরজা আর দেখা গেল না, তার আগেই মিলল খাদ্যমন্ত্রীর স্করপিও। পর পর তিনটি প্রচার সভার জন্য মন্ত্রী বেরিয়ে পড়েছেন। প্রথম গন্তব্য ইছাপুর বাসস্ট্যান্ড। পিছনে ধাওয়া করল ‘পেসের’ গাড়ি।

ইছাপুর বাসস্ট্যান্ডে পথসভা। শ’তিনেক শ্রোতা। সন্ধ্যায় মফস্সলে যেমন হয় আর কী। আয়োজনে ত্রুটি নেই। সবুজ চেয়ার-মাইক-মন্ত্রী মিলিয়ে এলাহি ব্যাপার। রজনীগন্ধার মালায় বরণও হল।

জ্যোতিপ্রিয় বক্তৃতা দিলেন। ভোট চাইলেন। আর অবধারিত ভাবেই বললেন, দু’টাকার চাল কাহিনি। কী ভাবে সরকার আট হাজার কোটির ভর্তুকি দিয়েও সবার ঘরে দু’টাকায় চাল পৌঁছে দিচ্ছে। কী ভাবে ২৭ টাকায় চাল কিনে, প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কী ভাবে জঙ্গলমহলের হাল বদলানো চাল-উন্নয়ন সারা রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুধু চালে ভোট হবে? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, ‘‘চাল আমার সাফল্য, সরকারের সাফল্য। কিন্তু তার সঙ্গে পাঁচ বছরে হাবরার উন্নয়ন নিয়ে মানুষকে খুশি রেখেছি। আমার এলাকায় খুন-রাহাজানি বন্ধ হয়েছে। যা করেছি, তাতে আমাকে কে আটকাবে?’’

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

হাবরার পথে ঘাটে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর উন্নয়ন রাজনীতি নিয়ে বিরোধীরাও খুব কিছু বলতে পারছেন না। কারণ, শহর এবং গ্রামের প্রায় সব রাস্তা চকচকে হয়েছে। আলো লেগেছে। পুর পরিষেবাও মোটের উপর নাপসন্দ নয় কারও। জ্যোতিপ্রিয়ের কথায়, ‘‘যেখানে যা আছে ভাল, সে সব নিয়ে হাবরা চলো। এটাই আমার মিশন। তাই অনেক
কিছু করেছি। পরিকল্পনাতেও অনেক কিছু রয়েছে।’’

৯৩০ কোটি টাকার জলপ্রকল্প, বাণীপুরে মেডিক্যাল কলেজ, দু’টি রেল গেটের উপর ওভারব্রিজ তার অন্যতম। এবং এই তিনটি কাজ শেষ করে ফেললে হাবরার জন্য কী করতে হবে, তা ভেবে বের করতে হবে বলেও দাবি খাদ্যমন্ত্রীর।

যদিও ভোটের আবহাওয়ায় ভাবনা কমে না কখনও। সেই কারণেই ৫০ হাজার ভোটে জিতব দাবি করেও খাদ্যমন্ত্রীকে রোজ রাতে দীর্ঘ বৈঠক করতে হচ্ছে কর্মীদের নিয়ে। কোন কোন স্থানীয় নেতাকে এখনও ‘আচরণে আর রূপায়ণে’ ভিন্ন মনে হচ্ছে, তাঁদেরও চালে কাঁকর বাছার মতোই বাছতে হচ্ছে তাঁকে।

কারণ, এ বার কংগ্রেস-সিপিএম হাত মিলিয়েছে। এক সময় বিজেপি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে হাবরাতে দাঁড় করানোর কথা ভেবেছিল। কারণ, লোকসভা ভোটে প্রায় ৪০ হাজার ভোট এসেছিল এই কেন্দ্র থেকে। রাজনৈতিক মহলের খবর, জ্যোতিপ্রিয় রূপাকে প্রতিদ্বন্দ্বী চাননি।

ঘটনাচক্রে রূপাও সেখানে যেতে চাননি। এখন তিনি হাওড়া-উত্তরের বিজেপি প্রার্থী। হাবরায় পদ্ম হাতে নিয়েছেন গোবিন্দ দাস। এই গোবিন্দবাবুই এখন চিন্তা বাড়িয়েছেন খাদ্যমন্ত্রীর। পথেঘাটে শোনা যাচ্ছে, মোদীর জোরে হাব়রায় যে ৪০ হাজার ভোট বিজেপি পেয়েছিল, তা এ বার ধরে রাখা মুশকিল।

কংগ্রেস-সিপিএমের ভোট যদি এক সঙ্গে জড়ো হয়, তার উপর যদি পদ্মের আশিস পান সিপিএমের আশিসকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়, সে ক্ষেত্রে ৫০ হাজার ভোটে জেতার দাবি কিছুটা অবাস্তবই মনে করছে এখানকার এক আর দুই নম্বর রেল গেটের মাঝের ঘিঞ্জি বাজার। দেওয়াল লিখনও কিন্তু বার্তা দিচ্ছে, লড়াই এত সহজ নয়। ‘‘পুরভোটে বালুদা ‘ভোটটা করিয়েছিলেন’। এ বার কিন্তু নির্বাচন কমিশন ভোট করাবে। সুতরাং মানুষ ভোট দিলে কী হবে, কেউ জানে না,’’ বলছিলেন তৃণমূলেরই এক হাফ নেতা।

জ্যোতিপ্রিয়বাবুও তা জানেন। তাই ইছাপুর, বাণীপুরের পথসভায় তিনি বলছেন, ‘‘আমরা সবাই কংগ্রেসি ছিলাম। কংগ্রেসের জন্য আমাদের জীবন যৌবন গিয়েছে। শুধু শাসনেই সিপিএম খুন করেছিল ৩৪ জন কংগ্রেসিকে। সেই কংগ্রেস সাইনবোর্ডটা সিপিএমের হাতে তুলে দিল! বিশ্বাস করি, কোনও কংগ্রেসি সিপিএমকে ভোট দেবেন না।’’

খাদ্যমন্ত্রীর এই বিশ্বাস বাস্তবায়িত হলে চিন্তা নেই। তা না হলে উত্তর ২৪ পরগনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিমোট কন্ট্রোলের খানিক হলেও দুশ্চিন্তা থাকছে। যদিও আত্মবিশ্বাসী জ্যোতিপ্রিয় বলছেন, ‘‘সাইকেল, চাল, কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সংখ্যালঘু স্কলারশিপ মিলিয়ে মানুষ যা পেয়েছে, তাতে এ বার কৃতজ্ঞতার ভোটেই জিতব।’’

জোট প্রার্থীও তা জানেন। তাই আশিসকণ্ঠের সমর্থনে সন্ধ্যার টিমটিমে পথসভা থেকেও আওয়াজ উঠছে, খাদ্য সুরক্ষা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেননি। কংগ্রেসের ইউপিএ সরকার করেছে। সিপিএম তাতে সমর্থন করেছে। জো়টের জন্য সস্তায় চাল পাচ্ছে গরিব মানুষ।

চাল-বালুকে ঠেকাতে এটাই এখন জোটের চাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy