Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

পরিবর্তন চেয়ে অম্বিকেশের প্রচারে অর্ধেন্দু

ভোটের ময়দানে এ বার রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন। তবে প্রার্থী হিসেবে নয়, নামছেন প্রচারে। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের ছাতায় অবশ্য মাথা গলাচ্ছেন না। প্রচার-যুদ্ধটা তাঁর রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৪
Share: Save:

ভোটের ময়দানে এ বার রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন। তবে প্রার্থী হিসেবে নয়, নামছেন প্রচারে।

সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের ছাতায় অবশ্য মাথা গলাচ্ছেন না। প্রচার-যুদ্ধটা তাঁর রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে। লক্ষ্য, পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ক্ষমতায় আসা তৃণমূলকে সরিয়ে রাজ্যে ফের একটা ‘পরিবর্তন’ আনা। এবং ‘উন্নততর’ বাংলা গড়া। এবং এই লক্ষ্যে তিনি বেছে নিয়েছেন, ‘আক্রান্ত আমরা’-র প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রকে। ব্যঙ্গচিত্র পাঠানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন অম্বিকেশ। তাঁর হয়েই এ বার প্রচারে নামবেন অর্ধেন্দুবাবু। অম্বিকেশ বলেছেন, ‘‘অর্ধেন্দুবাবু নিজেই ফোন করেছিলেন। আক্রান্ত আমলার হয়ে প্রচার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি।’’

কংগ্রেস ও বামেদের সমর্থন আগেই পেয়েছেন অম্বিকেশ। সন্দেহ নেই, অর্ধেন্দুবাবুর মতো প্রাক্তন আমলাও তাঁর হয়ে প্রচারে নামলে, নতুন মাত্রা পাবে তাঁর লড়াই। কারণ, অর্ধেন্দুবাবুও মনে করছেন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য ‘পরিবর্তন’ প্রয়োজন। এবং সেই পরিবর্তনের স্বার্থেই তিনি প্রচারে নামবেন বলে ঠিক করেছেন। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে ভোট ৩০ এপ্রিল। অম্বিকেশ তাঁর ভোট-মানেজারদের সঙ্গে কথা বলে অর্ধেন্দুবাবুর সঙ্গে প্রচারসূচি চূড়ান্ত করবেন। ৭ এপ্রিল কলকাতায় যেতে পারেন অর্ধেন্দুবাবু। শুধু সভায় বক্তব্য রাখা নয়, দরজায় দরজায় প্রচারে যেতেও তিনি প্রস্তুত।

ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডে জেলে যাওয়ার পর থেকে অম্বিকেশই প্রতিবাদের অন্যতম মুখ রাজ্যে। গত সাড়ে চার বছর ধরে রাজ্যে যাঁরাই শাসক দল বা সরকারের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আক্রান্তদের নিয়ে গড়েছেন ‘আক্রান্ত আমরা’। বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের অন্যতম কঠোর সমালোচক হিসেবেই দেখা গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষককে। তাঁর সঙ্গে ‘আক্রান্ত আমরা’-র হয়ে ডোমজুড়ে প্রার্থী হয়েছেন প্রতিমা দত্ত। প্রতিমাদেবীর স্বামী, প্রয়াত তৃণমূল নেতা তপন দত্ত ২০১১-তে বালিতে খুন হন।

এই দু’টি কেন্দ্রেই কংগ্রেস বা বামেরা কোনও প্রার্থী দেয়নি। এই দুই নির্দল প্রার্থীর হয়ে জোটের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমেছেন। অম্বিকেশকে পাশে নিয়ে তাঁর কেন্দ্রে পদযাত্রাও করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই প্রচারে অর্ধেন্দুবাবুর মতো পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রাক্তন আমলা যোগ দিলে শাসক দলের বিরুদ্ধে জোর লড়াই হবে বলে মনে করছেন বাম ও কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, বাম-কংগ্রেসের মতো ‘আক্রান্ত আমরা’-ও তৃণমূল জমানায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত, বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করার বিরুদ্ধে লড়ছেন। তাই অর্ধেন্দুবাবুর প্রচারে নামার সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানাচ্ছেন তাঁরা। সিপিএমের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘দল-ঝান্ডা নির্বিশেষে যাঁরা মেরুদণ্ড বন্ধক দিতে চাননি এবং মেরুদণ্ড উদ্ধারের লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াতে চান, তাঁদের সকলকে আমরা স্বাগত ও সেলাম জানাই।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, ‘‘আত্মমর্যাদাসম্পন্ন সব ধরনের মানুষই এখন এ রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসনের অবসান চান। তাঁদের সকলকে আমরা আন্তরিক ভাবে পাশে চাই।’’

কী বলছেন শোভন?

অবসরপ্রাপ্ত অর্ধেন্দুবাবুর উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে নির্দল প্রার্থী প্রচুর দাঁড়ায়। এখানেও দাঁড়িয়েছেন। কারও হয়ে কেউ প্রচারে আসতেই পারেন। তাঁদের হাতে বহু সময় আছে, ব্যয় করবেন!’’ এরই সঙ্গে বাম জমানার বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গও টেনে আনেন শোভন। তাঁর বক্তব্য, ১৯৮৮-তে পুলিশের উপস্থিতিতে যাদবপুরে সিপিএম তাঁর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯০-এ হাজরা মোড়ে সিপিএমের লালু আলমের হাতে আক্রান্ত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় হাওড়ার কান্দুয়ায় কংগ্রেস কর্মীদের হাতের পাঞ্জা কেটে দিয়েছিল সিপিএমের লোকেরা। ১৯৯২-এ সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযানে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হন। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে নিহত হন অনেকে। এই সবের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শোভনের প্রশ্ন, ‘‘অর্ধেন্দুবাবু প্রশাসনে ছিলেন। প্রশাসনিক জায়গায় থেকে ওঁর কি মনে হয়নি, এঁরাও আক্রান্ত?’’

কড়া আমলা হিসেবে পরিচিত অর্ধেন্দুবাবুকে ২০১০-এ রাজ্যের মুখ্যসচিব হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অবসরের পর তিনি এখন গুড়গাঁওয়ে। লেখালেখি শুরু করেছেন। কখনও বারাণসীতে পড়াতে গিয়েছেন। বাক্-স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে ১৭ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা বিবৃতি জারি করেছেন, অর্ধেন্দুবাবু তাঁদের অন্যতম। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কানহাইয়া কুমারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার মতো ঘটনারও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

এ রাজ্যে আমলাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়াটা নতুন নয়। বুদ্ধদেব জমানারই প্রাক্তন মুখ্যসচিব মণীশ গুপ্ত যেমন এখন রাজ্যের মন্ত্রী। এর আগে বিক্রম সরকারের মতো প্রাক্তন আমলাও সাংসদ হয়েছেন। অর্ধেন্দুবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি পদ বা ক্ষমতার আশায় প্রচারে নামছেন না। ‘উন্নততর’ বাংলা গড়তেই অম্বিকেশদের পাশে থাকবেন। প্রাক্তন আমলা থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ যে ‘আক্রান্ত আমরা’-কে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেখছেন, পাশে দাঁড়াছেন— এটাই মনোবল জোগাচ্ছে অম্বিকেশকে।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy