গুলিয়ে যেতেই পারে!
এখানে তৃণমূল প্রার্থী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছেন নির্দল প্রার্থী প্রতিমা দত্ত। যাঁকে সমর্থন করছে বিরোধী জোট।
সকলে ভেবেছিলেন লড়াই হবে এই দু’পক্ষের। কিন্তু ডোমজুড়ে আর এক প্রতিমা দত্ত! এবং তিনিও নির্দল!
বিরোধীরা বলছে, ভোটারদের বিভ্রান্ত করে ভোট কাটাকাটির সুবিধার জন্য ‘ডামি’ হিসেবে আর এক প্রতিমা দত্তের আমদানি করেছে শাসক দল। কিন্তু এই কৌশলে সুবিধা হবে না। কিন্তু তৃণমূল প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকার করছে না। তাদের দাবি, কে কেন নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, তা তারা জানে না। আগের বারের চেয়ে মার্জিন বাড়ানোটাই তাদের একমাত্র চিন্তা! তবে, ঠারেঠোরে এলাকার কিছু তৃণমূল নেতা মানছেন, ভোট নিশ্চিত করতে এটা কৌশল।
এখানে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফিরেছে। মসৃণ রাস্তাঘাট। ত্রিফলার আলোয় ঝলমল করে হাওড়া-আমতা রোড। পানীয় জলের সঙ্কট মিটেছে অনেকটাই। স্বাধীনতার পর থেকে যে বালি-জগাছা ব্লকের বাসিন্দাদের পানীয় জল কিনে খেতে হতো, সেখানে তৈরি হচ্ছে জল প্রকল্প।
উন্নয়নের এই ফিরিস্তি দিচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারাই। তাঁরা এ-ও বলছেন, পাঁচ বছরে যে কোনও সময়ে বিধায়ক তথা বিদায়ী সেচমন্ত্রী রাজীবকে ডাকলেই কাছে পেয়েছেন। তা হলে কেন ভোটারদের উপরে পুরোপুরি ভরসা করতে পারছে না শাসক দল? কেন বিরোধীরা প্রতিমা দত্ত নামে আর এক নির্দল প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগ তুলছে শাসক দলের বিরুদ্ধে? বিরোধীদের দাবি, পরাজয়ের ভয়ে।
জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী, ‘আমরা আক্রান্ত’ সংগঠনের সদস্য প্রতিমাদেবী বলছেন, ‘‘মানুষ তো শুধু ডোমজুড়ের তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। সারা রাজ্যে কী ঘটছে তা সবাই দেখছেন। তাই শাসক দলের মনে ভয় তৈরি হয়েছে বলেই ভোট কাটতে আর এক প্রতিমাকে খুঁজে বের করেছে।’’ ‘আমরা আক্রান্ত’-এর প্রতিমাদেবীর চেয়ে অন্য প্রতিমাদেবী অন্তত ২০ বছরের ছোট। লিলুয়া চকপাড়ার বাসিন্দা।
কেন আর এক প্রতিমাদেবীকে ভোটযুদ্ধে আনতে হল? প্রশ্ন শুনে হাসছেন তাঁর প্রতিপক্ষ, বিদায়ী সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তার ধারে চায়ের ভাঁড়ে হালকা চুমুক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভোট যুদ্ধে সবাইকে স্বাগত। জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। মার্জিন বাড়ানোর দিকেই বেশি নজর দিতে হচ্ছে। কে কেন নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তা কী করে বলব?’’
‘আমরা আক্রান্ত’-এর প্রতিমাদেবীর স্বামী তপন দত্ত ছিলেন তৃণমূলের বড় মাপের নেতা। স্বামীর মতোই প্রতিমাদেবীও দলের কাজে সক্রিয় ছিলেন। ২০১১ সালের ভোটের ফল ঘোষণার কয়েক দিন আগেই জলাভূমি রক্ষার আান্দোলনের জেরে খুন হন তপনবাবু। এর পর থেকেই শাসক দলের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে আজকের নির্দল প্রার্থীর। ২০১৩ পর্যন্ত শাসক দলের হয়ে পঞ্চায়েত সদস্য থাকার পরে ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। যোগ দেন ‘আমরা আক্রান্ত’ সংগঠনে।
এক সময়ের দাপুরে প্রতিমাদেবী ভোটে দাঁড়িয়ে পড়তেই কি রাজীবের অস্বস্তি বেড়েছে? তাই কি ‘ডামি’ প্রার্থী?
চোয়াল শক্ত করে রাজীবের উত্তর, ‘‘অস্বস্তির কী আছে? তপনবাবুর মৃত্যুর পরে আমি সকলের আগে প্রতিমাদেবীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সব রকম সহযোগিতা করেছি। কিন্তু আদালত যদি ওঁর অভিযোগ খারিজ করে দেয়, তা হলে কী করা যাবে? জানি না উনি কেন ভোটে দাঁড়ালেন?’’ প্রতিমাদেবীর দাবি, ‘‘২০০৬ তে ভোট লড়তে রাজীব যখন প্রথম ডোমজুড়ে পা রেখেছিলেন, তখন আমার স্বামী ওঁকে হাত ধরে সব চিনিয়ে ছিলেন। কত লড়াই করেছিলাম সিপিএমকে হারিয়ে ওঁকে জয়ী করতে। যদিও এখন সবই ইতিহাস।’’
যে যুবককে জেতাতে এক দিন রাস্তায় নেমে সিপিমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, আজ তাঁর বিরুদ্ধেই সরাসরি লড়াইয়ে নামলেন কেন? তা-ও আবার সিপিএমের হাত ধরেই? প্রতিমাদেবীর উত্তর ‘‘লড়াই তো ব্যক্তি রাজীবের বিরুদ্ধে নয়। লড়াই রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের দুর্নীতি-অরাজকতার বিরুদ্ধে।’’
ডোমজুড়ে ২০১১ সালে পরিবর্তনের হাওয়ায় জেতেন তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থী রাজীব। সিপিএমের মন্ত্রী মোহন্ত চট্টোপাধ্যায় পিছিয়ে ছিলেন ২৪ হাজার ৯৮৬ ভোটে। ২০১৪ লোকসভা ভোটে তৃণমূল ৩৯ হাজার ৯২৩ ভোটে হারিয়ে ছিল সিপিএমকে। সেখানে কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল মাত্র ৮ হাজার ৭২৪ এবং বিজেপি পেয়েছিল ৩৩ হাজার ৫৪০ ভোট।
এ বার ডোমজুড়ে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট বেঁধেছে। তাতে লোকসভার নিরিখে দুই পক্ষের প্রাপ্ত ভোট যোগ করলে দাঁড়াচ্ছে ৬৬ হাজার ৮০৪। কিন্তু সেটাও লোকসভা ভোটে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের থেকে ৩১ হাজার ১৯৯ কম। ফলে, এ বারে জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী প্রতিমাদেবী তেমন কোনও সুবিধা করতে পারবেন না বলেই দাবি ডোমজুড়ের তৃণমূল কর্মীদের। তবে জোটের নেতাদের দাবি, লোকসভা ভোটে যে সংখ্যক ভোট বিজেপি পেয়েছিল, তাতে ধস নামবে। আর সেই সব ভোট ঘুরে গিয়ে জোটকে সমর্থন করে নির্দলের ভোট বাক্স ভর্তি করবে।
জোটের দাবিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন শাসক দলের নেতারা। তাঁরা ওই দাবিকে ফুঁ-এ উড়িয়ে দিয়েছেন। তা হলে তো সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব মতো তৃণমূলের কোনও চিন্তার কারণ নেই। তা-ও প্রতিপক্ষের নামেই ‘ডামি’ কেন?
‘সবই যুদ্ধের কৌশল’— সহাস্য উত্তর শাসক দলের এক নেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy