হেস্টিংসে দলীয় নির্বাচনী কার্যালয়ের বাইরে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ।
সোমবার প্রার্থিতালিকা নিয়ে হেস্টিংসে বিজেপি-র নির্বাচনী কার্যালয়ের বাইরে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেই বিক্ষোভ মঙ্গলবারও অব্যাহত। মঙ্গলবার বিক্ষোভের কেন্দ্রে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এই জেলার বিষ্ণুপুর, মন্দিরবাজার, রায়দিঘি, কুলপি, মগরাহাট পশ্চিম, ক্যানিং পশ্চিম, জয়নগর প্রভৃতি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
বিক্ষোভরত বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের বিধানসভার টিকিট দেওয়া হয়েছে। অথচ যাঁরা বিজেপির পুরনো কর্মী তাঁরা টিকিট পাননি। তাই অবিলম্বে সেই প্রার্থীদের সরাতে হবে। দাবি না মানা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু কেন এই জেলাতে প্রার্থীদের নিয়ে এত ক্ষোভ কর্মীদের ভিতরে?
রাজ্যে বাম শাসন থেকে পালা বদলের সময় যে কয়েকটি জেলায় তৃণমূল প্রথমে নিজেদের মাটি শক্ত করেছিল তার মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ ২৪ পরগণা। ২০১৬ বিধানসভায় এই জেলার ৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৯টিতে জিতেছিল তৃণমূল। ২০১৯ লোকসভায় ৩১টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, এই জেলায় তৃণমূলের শক্তি ঠিক কতটা।
গত কয়েক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের উপর লাগাতার অত্যাচার চালিয়েছে শাসক দল। আর সেই দলে থাকা নেতারাই বিজেপিতে যোগ দিয়ে রাতারাতি টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন। তাতেই দক্ষিণের এই জেলায় ক্ষোভ এতটা বাড়ছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
তবে বিজেপি-র একটা অংশের মতে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিতে শক্তিশালী প্রার্থী দরকার। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছে গেরুয়া শিবির। স্বভাবতই কেউ কেউ টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। তাঁরাই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তবে তাতে দলের বিশেষ কোনও সমস্যা হবে না বলেই তাঁদের মত।
কাকতালীয় ভাবে নির্বাচনের আগে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার বিজেপি-র পর্যবেক্ষক ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি বিধানসভার টিকিট না পেয়ে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি ছেড়েছেন তিনি। বিজেপির একাংশের প্রশ্ন, এই বিক্ষোভের পিছনে তাঁর হাত নেই তো? যদিও শোভন ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, টিকিট না পেয়ে শোভন দল ছেড়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তিনি নিজের অনুগামীদের পাঠিয়ে বিজেপি দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখতে যাবেন না।
বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি বিধানসভা থেকে ৫ জন করে প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করছেন তিনি। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে লিখিত অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। তারপর তাঁদেরকে ডেকে আলোচনা করছেন প্রতাপ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে টিকিট দেওয়া হয়েছে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের। অথচ যাঁরা আদি বিজেপি কর্মী তাঁদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বিক্ষোভে ‘দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় দূর হঠো’ স্লোগান ওঠে।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুরে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন অগ্নিশ্বর নস্কর। বিজেপি-র ক্ষুব্ধ এক কর্মী সমর মণ্ডল বলেন, “অগ্নিশ্বর ২ মাস আগে বিজেপিতে এসেছেন। টাকার বিনিময়ে রাজ্য নেতৃত্ব তাঁকে টিকিট দিয়েছে।”
মন্দিরবাজারের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ জাটুয়া সদ্য তৃণমূল থেকে এসে টিকিট পেয়েছেন। তিনি তৃণমূলের মন্ত্রী চৌধুরী মোহন জাটুয়ার তুতো ভাই। বিক্ষোভকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। এক বিক্ষোভকারী প্রদীপ নস্কর বলেন, “দিলীপকে নয়, আমরা আরএসএস থেকে কোনও মুখকে প্রার্থী হিসেবে চাইছি। কারণ আমরা চাই এতদিন যাঁরা বিজেপি করেছেন তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হোক। দিলীপকে প্রার্থী করার পিছনে মুকুল রায়ের হাত রয়েছে। তিনি নাকি টাকার বিনিময়ে টিকিট দিয়েছেন।”
ক্যানিং পশ্চিম থেকে প্রার্থী হয়েছেন অর্ণব রায়। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তিনি বহিরাগত বলেও দাবি করা হয়।
কুলপি থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হয়েছেন প্রণব মল্লিক। তিনিও বেশ কয়েকদিন আগে তৃণমূল থেকে এসে বিজেপিতে টিকিট পেয়েছেন। এর পিছনে দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়ের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। আনন্দ বাগ নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, “প্রণব কয়েক দিন আগে বিজেপিতে এসেই টিকিট পেয়ে যান কী ভাবে? আমরা ১৯৯২ সাল থেকে আরএসএস করছি। যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি হিন্দু বিরোধী। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ যাতে না দেওয়া হয় তার জন্য এলাকায় পোস্টার দিয়েছিলেন। তাঁকে কী ভাবে প্রার্থী করল দল।”
অবশ্য এই বিক্ষোভকে অনভিপ্রেত বলেই জানিয়েছে গেরুয়া শিবির। সোমবার দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা দলের নিয়মবিরোধী। অনভিপ্রেত। আমাদের মতো দলে এটা হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক।’’
দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দলনের ডাক দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীরা। বেলা যত বেড়েছে তত জেলা থেকে বিজেপি কর্মীরা আসছেন বিক্ষোভ দেখাতে। বিজেপি কার্যালয়ের চারদিক ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। শুধুমাত্র বিজেপি নেতাদের প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডিসি সেন্ট্রাল এন সুধীর কুমারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন তাঁরা। ফলে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে হেস্টিংস কার্যালয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy