—প্রতীকী ছবি।
‘মহারাজ নয়, উনি মহাজন’, আগরতলা প্রেস ক্লাবে বসে বলছিলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মণ। নিশানায় ‘মহারাজ’ তথা তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যোতকিশোর মানিক্য দেববর্মা।
ত্রিপুরা রাজ পরিবারের সন্তান প্রদ্যোতের কংগ্রেস ছেড়ে তিপ্রা মথা গঠন আর তার পরে ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদ দখল ত্রিপুরা রাজনীতির ইতিহাসের যে একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত তাতে সন্দেহ নেই রাজনীতিকদের। ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে জনজাতি এলাকা ছাড়াও অন্য আসনেও প্রার্থী দেয় মথা। মোট ৪২টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়ে ১৩টি কেন্দ্রে জয়ী হয় তারা। রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলের আসন দখল করা মথাই প্রথম আঞ্চলিক দল।
জনজাতিদের জন্য গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবির সাংবিধানিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রদ্যোত। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পরে দিন যত গড়িয়েছে ততই ওই দাবি নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের টালবাহানায় বেড়েছে ধোঁয়াশা।
বিধানসভা ভোট ও তার পরে সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মথার। যে কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন সিপিএম-কংগ্রেসের নেতারা।
লোকসভা ভোটের আগে তিপ্রাল্যান্ডের দাবির সাংবিধানিক সমাধানের আমরণ অনশনে বসেন প্রদ্যোত। এর পরে দিল্লি থেকে ডাক পেয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত যে চুক্তিতে বলা হয়েছে, জনজাতিদের আর্থিক, রাজনৈতিক, জমি, ভাষা ও সংস্কৃতিগত দাবি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হবে যৌথ কার্যনির্বাহী কমিটি। যত ক্ষণ সেই কমিটি কাজ করবে তত ক্ষণ কোনও আন্দোলন করবে না তিপ্রা মথা। এর পরেই জোটবদ্ধ হয়েছে মথা ও বিজেপি। জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত পূর্ব ত্রিপুরা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রদ্যোতকিশোরের বোন কৃতি সিংহ দেববর্মা লড়ছেন বিজেপিরই প্রতীকে।
কিন্তু চুক্তি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মথারই অন্দরে। নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত প্রদ্যোতের দেখা না মিললেও আগরতলায় দেখা পাওয়া গেল তাঁর দলেরই বিধায়ক ও প্রাক্তন আমলা চিত্তরঞ্জন দেববর্মার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তিপ্রা মথা গঠনের আগে মহারাজের দলের সঙ্গে আমার দল তিপ্রাল্যান্ড স্টেট পার্টির চুক্তি হয়েছিল। তাতে স্পষ্টই বলা হয়েছিল গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিকে বিবেচনা না করলে কোনও জাতীয় বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চুক্তি হবে না। কিন্তু দিল্লির সঙ্গে মথার এই চুক্তিতে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের কথা নেই। ফলে আমাদের সঙ্গে চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে।’’
প্রায় একই সুর বিরোধী কংগ্রেস-সিপিএমের। কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মণের দাবি, মহাজনের মতো নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে জনজাতিদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন প্রদ্যোত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের দাবি, তিপ্রার আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। সুদীপ রায়বর্মণ বলছেন, প্রদ্যোতের সঙ্গে ‘গোপন চুক্তি’ হয়েছে বিজেপির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘চুক্তি হয়েছে। সেটা উন্নয়নকে সমর্থন করার।’’
বিরোধীদের মতে, গত বিধানসভা ভোটে জনজাতি এলাকার বাইরে প্রার্থী দিয়ে ভোট কেটে আসলে বিজেপিরই সুবিধে করে দিয়েছিল মথা। কৃতি সিংহ দেববর্মা বিজেপির প্রতীকে প্রার্থী হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে তবে কি বিজেপিতে মিশে গিয়েছে মথা?
প্রশ্ন আছে কৃতি সিংহ দেববর্মাকে নিয়েও। ছত্তীসগঢ়ের কোয়ার্ধার রাজপরিবারের বধূ কৃতিকে সেই পরিবারের একটি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত করার জন্য মামলা হয়েছে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্টে। আবার ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি বিরোধীদের।
সব অভিযোগই অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন তিপ্রা নেতা ও প্রদ্যোতের ঘনিষ্ঠ রাজেশ্বর দেববর্মা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কৃতি ত্রিপুরারই সন্তান। আগেও রাজনৈতিক প্রচারে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। আর মামলা তো অনেক রাজনীতিকের বিরুদ্ধেই হয়। দোষী প্রমাণিত হয়েছেন কি কৃতি?’’
কিন্তু কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিতে যে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের কথা নেই? তবে কি ‘মহারাজ’ আপস করলেন? রাজেশ্বরের বক্তব্য, ‘‘তিপ্রাল্যান্ড একটি ধারণা। যদি জনজাতিদের দাবি পূরণ না হয় তবে সমঝোতা থেকে বেরিয়ে আসতে মহারাজের সময় লাগবে না।’’
জনজাতিভুক্ত মানুষের ভাবনা কি, তা ২৬ এপ্রিল ইভিএমে জানাবে পূর্ব ত্রিপুরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy