রেবন্ত রেড্ডি। —ফাইল চিত্র।
নিজের ছায়ার সঙ্গেই যুদ্ধ করার দশা তেলঙ্গানার কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডির।
গত ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে দাবি করেছিলেন, একশো দিনের মধ্যে ছ’টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করবেন তিনি। সেই প্রতিশ্রুতিই এখন বুমেরাং হয়ে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে রেবন্তের। মহিলাদের বিনামূল্যে বাসে ভ্রমণ আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরোগ্যশ্রী প্রকল্প চালু হলেও, বিনামূল্যে দু’শো ইউনিট বিদ্যুত, কৃষকের ঋণ মাফ, মহিলাদের মাসে আড়াই হাজার টাকা—কিছুই হয়নি। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে ক্ষোভের মুখে রেবন্ত তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
গত লোকসভায় মলকাজগিরি কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন রেবন্ত। এ বার সেই জায়গায় লড়ছেন রেবন্ত-ঘনিষ্ঠ সুনীতা রেড্ডি। কিন্তু নিজের গড়েই যে ভাবে প্রশ্নের মুখে রেবন্ত, তাতে রাজ্যের ১৭টি লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ডজনখানেক জেতার পরিকল্পনা কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মলকাজগিরি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে চা-শিঙাড়ার দোকান কৃষ্ণমূর্তির। গ্রীষ্মের ভর দুপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। গজগজ করতে করতে কৃষ্ণমূর্তি বললেন, ‘‘যে সরকার বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, সে আবার দেবে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ!’’ গত লোকসভা ও বিধানসভায় কংগ্রেসের হাত শক্ত করেছিলেন কৃষ্ণমূর্তি। কিন্তু এ বার হাত ধরার প্রশ্নে সংশয়ী তিনি।
রাজ্যের অন্যতম বড় লোকসভা কেন্দ্র মালকাজগিরি। শহর ছেড়ে এগোলেই আদিগন্ত ধানের ক্ষেত। মূলত বাসমতীর চাষ হয়। একশো দিনের মধ্যে কৃষকদের ঋণ মাফ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন রেবন্ত। নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ১৫ অগস্ট। কিন্তু তার মধ্যে আদৌ প্রতিশ্রুতি পালন হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী স্থানীয় কৃষক সত্যবাবু। কথা এগোতেই বোঝা গেল, রেবন্তের প্রতিশ্রুতি কেবল বিধানসভা ভোট জেতার লক্ষ্যে ছিল বলে বিরোধী বিজেপি ও ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) যে প্রচার চালিয়েছে, তার প্রভাব যথেষ্ট মাত্রায় পড়েছে স্থানীয় কৃষককুলে। স্থানীয় কংগ্রেসি সমর্থক চন্দন বান্ডি লোকসভা ভোট শেষ হলে কৃষক ঋণ মাফ করার কথা বলতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সত্যবাবু। বললেন, ‘‘বিনামূল্যে বিদ্যুতের ফর্মের কথা মনে নেই? ভোট আসছে বলে সরকার তড়িঘড়ি ফর্ম জমা নিল। আর তা পাওয়া গেল স্টেশনের পাশের আর্বজনায়, পুলিশ স্টেশনের আস্তাকুঁড়ে। সবাই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। রেবন্তও দিয়েছে।’’
রাজ্যের কৃষকদের প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার কৃষি ঋণ রয়েছে। তা যে এক ধাক্কায় মকুব করা কঠিন তা মেনে নিচ্ছেন রেবন্ত সরকারের সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বে থাকা শ্রীনিবাস রেড্ডি। তবে তাঁর যুক্তি, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কর কাঠামোয় কিছু পুনর্বিন্যাস করায় ও শক্ত হাতে কর সংগ্রহ শুর হওয়ায় মাসে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। তা দিয়েই ওই ভর্তুকি মেটানো হবে। তবে কাজটি যে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের এবং সময়সাপেক্ষ, তা মেনে নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু সত্যবাবুরা সেই সময় দিতে রাজি হবেন কেন?
প্রথম জীবনে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা হিসেবে রাজনীতিতে পা দেন রেবন্ত। তারপরে তেলুগু দেশম পার্টির সাংগঠনিক কর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ২০১৭ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন রেবন্ত। তিনি নিজে দক্ষিণ তেলঙ্গানার নেতা হওয়ায় সাংগঠনিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে কংগ্রেস। পাশাপাশি রেবন্ত ঘোষণা করেছেন, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের যে বুথে দলীয় প্রার্থী সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেই বুথ কর্মীদের ইন্দিরাআম্মা কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। ওই কমিটির মাধ্যমেই গ্রাম পর্যায়ে সরকারের সমস্ত প্রকল্প রূপায়িত হয়। পাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে তাই বুথ কর্মীদের এককাট্টা করার লক্ষ্য নিয়েছেন রেবন্ত।
রাজ্যে ১০-১২টি আসন জেতার প্রশ্নে রেবন্ত নিজে নিশ্চিত হলেও, খোদ রেবন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। ২০১৫ সালে টিডিপি দলের বিধায়ক রেবন্তকে তেলঙ্গানা পুলিশ রাজ্যপালের মনোনীত বিধায়ক এলভিস স্টিফেনসনকে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। বিধান পরিষদের নির্বাচনে টিডিপি প্রার্থীকে জেতাতে রেবন্ত ওই ঘুষ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন রেবন্ত। আর সেই মামলা এখন দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সদ্য প্রাক্তন শাসক দল বিআরএস-এর মতে, বর্তমানে ওই মামলার রাশ রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর হাতে। বিভিন্ন জনসভায় কে
চন্দ্রশেখর রাও প্রকাশ্যে অভিযোগ আনছেন যে, রেবন্ত কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করছেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। প্রতি কথায় যে ভাবে রেবন্ত প্রধানমন্ত্রীকে বড় ভাই বলে সম্বোধন করে চলেছেন, তা দেখে রাওয়ের ভবিষ্যদ্বাণী, লোকসভার ভোটের পরেই দল নিয়ে বিজেপিতে যাবেন রেবন্ত। যেমন অসমে করেছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। যদিও রেবন্ত বলছেন, সবই বিআরএসের অপপ্রচার।
বিষয়টি রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের অজানা নয়। হায়দারবাদের গাচ্চিবাওলির কংগ্রেস দফতরে বসে বর্ষীয়ান কংগ্রেস কর্মী অবিনাশ মুকুন্দ অবশ্য জানালেন, রেবন্ত যদি সত্যিই বিজেপিতে যান, তা হলে রাজ্যে তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা বলে কিছু থাকবে না। রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাবে রেবন্তর। এখন দেখার, রেবন্ত সেই ঝুঁকি নেন কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy