প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য ৩৭০ আসন। সেই লক্ষ্য পূরণে প্রায় ৪৭ কোটি মহিলা ভোটারের মন জয়ে তৎপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর দল। তাই প্রার্থী থেকে শুরু করে প্রকল্পের প্রচারে মহিলাদেরই ‘প্রাধান্য’ দিতে চলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় দল।
কেন্দ্রীয় বাজেটেই স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মহিলা ভোট টানার জন্য ঝাঁপাতে চলেছে বিজেপি। এ বার সেই ইঙ্গিতেই সিলমোহর পড়েছে বিজেপির ‘নারী শক্তি সম্মান’ সভায়। প্রধানমন্ত্রী মোদী বারাসতের সভায় উপস্থিত থেকে রীতিমতো খতিয়ান তুলে ধরে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়ে মহিলাদের ‘বার্তা’ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ‘লাখপতি দিদি’র কথা ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রের দাবি, এই মুহূর্তে ছোট-বড় ৮৩ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে অন্তত ৯ কোটি মহিলা কাজ করেন। যাঁর মধ্যে ইতিমধ্যে দু’কোটি মহিলা ‘লাখপতি দিদি’ হয়েছেন। আগামী অর্থবর্ষের শেষে সেই সংখ্যাটা তিন কোটিতে পৌঁছতে চায় কেন্দ্র। সেই জন্য তাদের অগ্রাধিকার স্বনির্ভর গোষ্ঠী। যত বেশি সম্ভব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে সর্বোচ্চ সংখ্যক মহিলার কাছে ওয়ান স্টপ সেন্টার, স্টেপ, স্বধার, মহিলা শক্তি কেন্দ্র, মুদ্রা যোজনার মতো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে এবং মহিলাদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে আরও অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করে যত বেশি সংখ্যায় সম্ভব নারী শক্তিকে নিজেদের দিকে টেনে আনাই বিজেপির লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গেও এই মুহূর্তে জোর কদমে চলছে সেই কাজ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা কতগুলি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও অ-সরকারি সংস্থাকে দলীয় ছত্রচ্ছায়ায় আনা গিয়েছে, সেই তালিকা রাজ্যে জমাও দিয়েছে। এই কাজের জন্য প্রতিটি জেলায় ১৫ জনের ও মণ্ডল স্তরে ১০ জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির মহিলা মোর্চা সূত্রের বক্তব্য, মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের এমন অনেক প্রকল্প আছে, যেগুলি রাজ্য সরকার চালু করতে দেয়নি। তার মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাতদের জন্য সরকারি বরাদ্দ, গর্ভবতীদের জন্য তিন কিস্তি টাকা-সহ একাধিক প্রকল্প। সেই প্রকল্প রাজ্যে চালু হলে মহিলারা বাড়তি কী কী সুবিধা পেতেন, তাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বোঝানো হবে। রাজ্যে প্রতিটি নির্বাচনে মহিলা ভোটের বড় অংশই টেনে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বড় কারণ কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্প, যার সরাসরি উপভোক্তা মহিলারা। এ বার সেই মহিলা মনে জায়গা পেতেই মোদী-সহ বিজেপি নেতারা বারবার দাবি করেছেন, বাংলার মহিলাদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের থেকে বঞ্চিত করেছে রাজ্য সরকার। সেই প্রচারকে জোরালো করতেই বাংলাকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ‘নারী শক্তি সম্মান’ সমাবেশের আয়োজন।
সূত্রের খবর, ‘নারী শক্তি সম্মান’ কর্মসূচি মোদীর কোনও এক দিনের জনসভা নয়। বরং, দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রতিটি কোনায় মহিলাদের নিয়ে মোদী সরকারের ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার ধারাবাহিক কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠান। মোট ৩৫টি সাংগঠনিক প্রদেশের ৮০০ জেলায় অন্তত দু’লক্ষ মহিলা কর্মীর অংশগ্রহণ ছিল এই কর্মসূচির মধ্যে। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে সমাপ্তি সমাবেশ হলেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে তা ১৯ হাজার জায়গায় দেখানো হয়েছে। মহিলা মোর্চার দাবি, অন্তত ৮৫ লক্ষ মহিলা এই সমাবেশ দেখেছেন।
নির্বাচন ঘোষণার আগেই বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর তিন সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় দেখে বঙ্গ বিজেপির নেতারা রীতিমতো আশাবাদী, তৃণমূলের মহিলা ভোটে তাঁরাও ভাগ বসাতে সক্ষম হবেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, “বাংলার মহিলারা সন্দেশখালির ঘটনার পরে উপলব্ধি করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে তাঁদের সম্ভ্রমের সঙ্গেও আপস করতে পারেন। তাই সসম্মানে বাঁচতে, প্রকৃত উন্নতির আকাঙ্ক্ষায় তাঁরা মোদীজি’র পক্ষে থাকবেন।’’
প্রার্থী বাছাইয়েও গুরুত্ব পেতে চলেছেন মহিলারা। সংসদে দলের মহিলা মুখের সংখ্যা বাড়াতে চায় বিজেপি। যদিও বাংলায় প্রথম দফায় ঘোষিত ১৯ আসনে বিজেপির মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র তিন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় সংখ্যাটা অনেকটা বাড়তে পারে। অন্তত ৬ থেকে ৮টি আসনে তারা মহিলা মুখকে প্রার্থী করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy