উত্তর কলকাতার কংগ্রেসের বিখ্যাত ঠিকানা ৪৫, আমহার্স্ট স্ট্রিট। প্রয়াত সোমেন মিত্রের বাড়ি লাগোয়া সেই দফতরেই উত্তর কলকাতার কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। রয়েছেন সোমেনের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী বাদল ভট্টাচার্যও (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)।
লড়াইয়ের ময়দানে তাঁরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতীক আলাদা। কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের পূর্বাশ্রম তাঁদের একই জায়গায়। আর সেই সূত্রেই এ বার কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে ফিরে আসছে পুরনো কংগ্রেস পরিবারের স্মৃতি!
তিন প্রতীকে তিন প্রার্থীর রাজনৈতিক গুরু বা ‘মেন্টর’ হিসেবে এই নির্বাচনী বাজারে ফিরে ফিরে আসছে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং সোমেন মিত্রের অনুষঙ্গ। কলকাতা উত্তরের বর্তমান সাংসদ, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহরমপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে এসে বৌবাজারের তৎকালীন বিধায়ক আব্দুল রউফ আনসারির টিকিট বাতিল করে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রিয়রঞ্জন। যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিও হয়েছিলেন সুদীপ। তখন থেকেই তাঁর উত্থানের সূচনা।
এ বারের লোকসভায় কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং সুদীপ এক সময়ে ছিলেন কংগ্রেস (স)-এ। প্রিয়রঞ্জনের সঙ্গেই তাঁদের আবার জাতীয় কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে এ বার কলকাতা উত্তরে বিজেপি প্রার্থী তাপস রায় সেই প্রিয়রঞ্জন এবং সোমেন, দু’জনের তত্ত্বাবধানেই রাজনীতিতে হাত পাকিয়েছেন। তাপস যেমন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনের জমানায় উত্তর কলকাতায় দলের নানা দায়িত্বে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তেমনই আবার মাঝে কংগ্রেসে ফিরে সুদীপ এবং সোমেন একই সঙ্গে দলত্যাগ করে বৌবাজার ও শিয়ালদহের বিধায়ক-পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বাম জমানায় ওই দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দুই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন সুদীপ-জায়া নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় ও সোমেন-পত্নী শিখা মিত্র। তার পরে ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সোমেন-সুদীপ, দু’জনেই হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতীকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী।
মহাজাতি সদনের উপরে ছাত্র পরিষদের পুরনো দিন কাটলেও উত্তর কলকাতায় প্রিয়রঞ্জনের কোনও ঠিকানা ছিল না। সেই তুলনায় উত্তর কলকাতায় সোমেনের শিকড় অনেক গভীরে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সোমেনের পুরনো ঠিকানা ৪৫ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিটেই এ বার তাঁর কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় খুলেছেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ। এক কালে সোমেনের ছায়াসঙ্গী বাদল ভট্টাচার্যকে পাশে নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটেই কলকাতা জেলা সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে কংগ্রেসের বৈঠক হচ্ছে যৌথ প্রচার ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে। বিজেপির প্রার্থী হয়ে নাম ঘোষণার পরে তাপস নিজে আমহার্স্ট স্ট্রিটে দেওয়াল লেখায় হাত লাগিয়েছেন। মমতার দলে গভীর ভাবে প্রথিত হয়ে যাওয়ার পরে সুদীপের পক্ষে অবশ্য প্রাক্তন ‘গুরু’দের সে ভাবে ছুঁয়ে থাকা মুশকিল। তবে কংগ্রেসই যে তাঁকে রাজনৈতিক পরিচিতি দিয়েছে, মানেন সুদীপ। একই সঙ্গে তিনি ও তাঁর দলের নেতারা মনে করেন, কংগ্রেস আর নেই সে কংগ্রেস!
আরও অনেকটা পিছিয়ে গিয়ে দেখলে অবশ্য উত্তর কলকাতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ঐতিহাসিকই বলতে হয়। যে ভারতসভা হলে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ভিত্তিস্থাপন, তার অবস্থান উত্তর কলকাতায়। প্রার্থী প্রদীপ মনে করিয়ে দিচ্ছেন উমেশচন্দ্র, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথা। প্রদীপের কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক প্রকৃত অর্থে ঐতিহাসিক। আর এখনকার কথা বলতে গেলে, এ বারের তিন প্রার্থীকেই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে কংগ্রেস। তবে বাকিরা কংগ্রেসের প্রতি সেই বিশ্বাস ধরে রাখতে পারেননি, আমি রয়ে গিয়েছি!’’ বিজেপির তাপসও স্মৃতিমেদুর— ‘‘রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক সব দিক থেকে উত্তর কলকাতার সঙ্গে আমার যোগ। এই উত্তর কলকাতাকে মনোভূমি বলা যায়।’’ কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর পুরনো যোগ অস্বীকার না করেও তাপসের আরও মন্তব্য, ‘‘তবে আমি কিন্তু বহরমপুর (সুদীপ) থেকে আসিনি, বর্ধমান (প্রদীপ) থেকেও আসিনি! এই উত্তর কলকাতার ভূমিপুত্র হয়ে ময়দানে আছি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy