Advertisement
Back to
Nandigram TMC-BJP Conflict

বিপদ আঁচ করেই ছেলের পিছু পিছু গিয়ে খুন হন মা! ঘটনার বিবরণ নন্দীগ্রামে নিহতের পরিবারের বয়ানে

ভোটের আগে বুধবার রাতে বিজেপির মহিলা কর্মী রথীবালা খুনের ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া। রাতের ঘটনায় রথীবালার ছেলে সঞ্জয় আড়িও গুরুতর জখম হয়েছেন।

Family of the slain BJP woman worker in Nandigram gave the details of the incident

ঠাকুরমার মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছে রথীবালার নাতনি। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন মণ্ডল 
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ২২:১২
Share: Save:

রাত তখন প্রায় ২টো। বাড়িতে ঘুমোচ্ছিলেন ভাসুর। হঠাৎই ফোন আসে। ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাইরে তখন তুমুল চিৎকার-চেঁচামেচি! খবরও তত ক্ষণে রটে গিয়েছে। কিছু দুষ্কৃতী নাকি বাজার এলাকায় জড়ো হয়েছে। বিপদ আঁচ করেই ভাসুরের পিছু পিছু গিয়েছিলেন শাশুড়ি। সেখানে তুমুল গন্ডগোলের মধ্যে খুঁজছিলেন ছেলেকে। সেই সময় মাথায় ভারী কিছু দিয়ে মেরে শাশুড়িকে খুন করা হয়! বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে রাতের ঘটনার এই ‘বিবরণ’ দিতে দিতে শিউরে উঠছিলেন নিহত রথীবালা আড়ির বৌমা সুবর্ণা আড়ি।

ভোটের আগে বুধবার রাতে বিজেপির মহিলা কর্মী রথীবালা খুনের ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া। রাতের ঘটনায় রথীবালার ছেলে তথা নন্দীগ্রামে বিজেপির তফসিলি মোর্চার সম্পাদক সঞ্জয় আড়িও গুরুতর জখম হয়েছেন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে মনসাপুকুর বাজার এলাকায়। সকাল থেকেই বিশাল পুলিশবাহিনী এলাকায়। নিহতের বাড়িও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে ভিড়াক্কার। সেখানে সংবাদমাধ্যমের লোকেদের রাতের ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন সুবর্ণা। চোখে জল। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘কে একটা ভাসুরকে ফোন করল। ফোন করে বলল, বাইরে ঝামেলা হচ্ছে। শিগগির আসতে। সে কথা শুনেই ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল ভাসুর। তখন বাইরে তুমুল চিৎকার হচ্ছে। ছেলে ফিরছে না দেখে শাশুড়ি দেখতে গিয়েছিল। তার পরেই এই ঘটনা!’’

সুবর্ণা জানান, তাঁদের বাড়ির অদূরেই বাজার। রথীবালা ছেলের খোঁজে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের জন্য চিৎকারের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। হঠাৎই গ্রামের এক জন জানান, রথীবালা ও সঞ্জয়কে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা মেরে ফেলে রেখে গিয়েছে! ওই বধূর কথায়, ‘‘আমিও চিৎকার করতে করতে ছুটে যাই। চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে গ্রামের লোকেরাও ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে আসে। গ্রামের লোকেদের আসতে দেখে পালিয়ে গিয়েছিল ওরা (হামলাকারীরা)। গ্রামের লোকেরা ত়ড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল শাশুড়ি আর ভাসুরকে। কিন্তু শাশুড়িকে বাঁচাতে পারলাম না আমরা!’’

বৃহস্পতিবার দুপুরেও বাজারের রাস্তায় চাপ চাপ রক্তের দাগ ছিল। পাশেই রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের মধ্যে এক জন নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে বলেন, ‘‘ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে ছুটে এসেছিলেন রথীবালা। সেই সময় বাজারে বিশাল ঝামেলা চলছিল। রথীবালা শুধু তাঁর ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু ছেলে যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, তা অন্ধকারে বুঝতে পারেনি। অনেকেই চারদিকে আহত হয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় অন্ধকারে ছেলেকে দেখতে না-পেয়ে বাজারের পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলেন রথীবালা। তখনই কেউ পিছন থেকে রড দিয়ে তাঁর মাথায় সজোরে মেরে দেয়। মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। সেখানেই লুটিয়ে পড়েন রথীবালা। রক্তে চারিদিক ভেসে যাচ্ছিল। এর পর গ্রামের প্রচুর লোক জড়ো হতেই হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সকলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও হয়। কিন্তু রথীবালাকে বাঁচানো গেল না!’’

মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালেই হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ে। কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার দাদা আর মাকে মেরে দিল টিএমসির লোকেরা। ওরা ১০০ থেকে ১৫০ জন এসেছিল একসঙ্গে। সেই সময় বিজেপির যাকে সামনে পেয়েছে, ওরা মেরেছে। মাকে তো আর ফিরে পাব না! আমি এই দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। এদের সকলের যেন ফাঁসির সাজা হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy