হাত মেলাচ্ছেন মোদী-শরিফ। ছবি পিআইবি-র সৌজন্যে।
ছ’মাস আগের সেই চেনা ছবিটারই কি পুনরাবৃত্তি হল। না কী এর অন্তরালে অন্য কোনও ইঙ্গিত রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সব মহলেই।
কী সেই ছবি?
প্রথম দিনের শৈত্য কাটিয়ে বৃহস্পতিবার কাঠমাণ্ডুতে সার্ক ১৮তম সম্মেলনে দ্বিতীয় দিনে পরস্পরের প্রতি সৌজন্যমূলক ভঙ্গিমায় দেখা গেল উপমহাদেশের দুই রাষ্ট্রনেতাকেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ করমর্দন করলেন। পাশাপাশি বসে সামান্য কথাও বললেন। তবে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এড়িয়ে গেলেন দু’জনেই।
গত মে মাসে নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাসিমুখে দেখা গিয়েছিল নওয়াজ শরিফকে। পরের দিন মোদী-শরিফ সৌহার্দ্যপূর্ণ ভঙ্গিমাও চমকে দিয়েছিল গোটা দেশকে। মাঝে ছ’মাসের ব্যবধান। তবে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে অনেক। ছ’মাস আগের সেই চেনা ধারণা পাল্টে দুই উপমহাদেশের দুই রাষ্ট্রনেতার নতুন ছবি ধরা পড়েছে সার্কের এই ১৮তম সম্মেলনে। একই মঞ্চে থাকলেও কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকী দু’জন দু’জনের দিকে এক বার চেয়েও দেখেননি। তিন ঘণ্টার বৈঠকে ছিটেফোঁটা সৌজন্য-বিনিময় করতেও দেখা যায় নি কারওকে। উল্টে মঞ্চে উঠে একে একে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির রাষ্ট্রনেতাদের শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানান মোদী। ভুলেও নাম করেননি শরিফের। একই চিত্র দেখা যায় পাক প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও। অথচ মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর প্রথম মোদী-শরিফের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছবিটা পাল্টে গেল।
সার্ক শীর্ষ বৈঠক চলাকালীন ভারত-পাক আলাদা করে বৈঠকের যে সম্ভাবনা নেই তা আগেই নিশ্চিত করেছিল বিদেশ মন্ত্রক। তবে গোটা বিশ্বের নজর ছিল এই দু’দেশের দিকেই। কিন্তু সম্মেলন শুরুর প্রথমদিনের ছবি সব চুক্তি-আলোচনা পেরিয়ে ফের ভারত-পাক সীমান্তের চাপা উত্তেজনাকেই সামনে এনে দেয়। সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি বার বার লঙ্ঘন করে পাকিস্তানই শান্তির সেই বাতাবরণ ভেঙেছে বলে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দাবি। এর মধ্যে যদিও বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠকও বাতিল করেছিল ভারত। বুধবার মঞ্চে উঠে ২৬/১১-র স্মৃতি উসকে ছ’বছর আগের জঙ্গি হামলাকেই কার্যত বক্তব্য হিসেবে মেলে ধরেন মোদী। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়ার বিরোধিতা করে কড়া বার্তাও দেন।
সার্ক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। ছবি:পিটিআই।
কাঠমাণ্ডুতে বুধবার শুরু হওয়া সার্কের ১৮তম সম্মেলনের বৃহস্পতিবারই শেষ দিন। সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি তো বটেই, এ বারের সার্ক সম্মেলনে হাজির হয়েছেন পর্যবেক্ষক ন’টি দেশের প্রতিনিধিরাও। অস্ট্রেলিয়া, চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, জাপান, কোরিয়া, মরিশাস, মায়ানমার এবং আমেরিকা সার্ক-এর পর্যবেক্ষক দেশ। তবে সার্কে চিনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে এ দিনও চাপে ছিল ভারত। কারণ, সার্কে সদস্যপদ পেলে চিন সার্কভুক্ত দেশগুলির নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিতে পারে বলেই আশঙ্কা ভারতের। তাই প্রথম দিন থেকেই গোটা বিষয়টির উপর নজর রেখেছিল দেশের বিদেশ মন্ত্রক।
সূত্রের খবর, এ দিন সম্মলনের শেষে প্রতিনিধিরা ধূলিখেল রিসর্টের বাইরে দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে যান। পাঁচ ঘণ্টার এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্রামের পাশাপাশি প্রতিনিধিদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু এখানেও সুকৌশলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রেখে চলতে দেখা যায় মোদী-শরিফকে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত-পাক বৈঠকের জন্য এ দিন নানা ভাবে চেষ্টা করে নেপাল। কিন্তু, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সব সম্ভাবনাতেই কার্যত জল ঢেলে দেন দুই রাষ্ট্রনেতা। বস্তুত, একে একে নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশারফ ঘনির সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যায় মোদীকে। খোশমেজাজে আলাপ-আলোচনা করেন অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গেও। ধূলিখেল রিসর্টের বাইরে কলাগাছের চারাও রোপণ করেন তিনি। চারাগাছে জল দেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। পাশাপাশি, বৌদ্ধ ধর্মের স্মারক হিসেবে বোধি গাছের চারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন মোদী। লুম্বিনিতে ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থানে এই চারা রোপণ করবেন বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “বুদ্ধগয়া থেকে আমি বোধি গাছের চারা নিয়ে এসেছি। আগামিকাল লুম্বিনির মায়াদেবী মন্দিরের সামনে এই চারা পোঁতা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy