ওরিয়নের অবতরণ। ছবি: নাসার সৌজন্য।
সফল হল ওরিয়নের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ। শুক্রবার ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল মহাকাশকেন্দ্র থেকে ডেল্টা-৪ হেভি রকেটে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর জন্য তৈরি মহাকাশ যান স্পেস ক্যাপসুল ওরিয়নকে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎক্ষেপণ করে নাসা। মহাকাশে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় কাটিয়ে মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে প্যারাশুটে চড়ে সফল ভাবে নেমে আসে ওরিয়ন। তবে এ দিনের পরীক্ষায় ক্যাপসুলটিতে কোনও মানুষ পাঠানো হয়নি।
মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর কথা দীর্ঘ দিন থেকে চিন্তা করছে নাসা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১-২২ নাগাদ এ যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। মঙ্গলে পৌঁছতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। চাঁদে গেলেও মঙ্গলে যাওয়ার মতো এত দীর্ঘ পথে মহাকাশে মানুষ কখনও পাড়ি দেয়নি। ফলে এই যাত্রার জন্য উপযুক্ত যান বা স্পেস ক্যাপসুল প্রয়োজন। মঙ্গলযাত্রার জন্য সেই স্পেস ক্যাপসুল নিয়েই দীর্ঘ দিন কাজ চালাচ্ছে নাসা। নাসার জন্য এই স্পেস ক্যাপসুলটি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে লকহিড মার্টিন। লকহিড মার্টিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য বিখ্যাত। বেশ কিছু দিন আগে লকহিডের তৈরি নকশায় চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেয় নাসা। সেই নকশা অনুযায়ী তৈরি হয়েছে ওরিয়ন।
নাসা সূত্রে খবর, ওরিয়ন অত্যন্ত উন্নতমানের মহাকাশ যান। মঙ্গল, চাঁদে মানুষকে নিয়ে যাওয়ার জন্য একে তৈরি করা হচ্ছে। এর আগে চাঁদে যাওয়ার জন্য অ্যাপলো মহাকাশ যান ব্যবহার করত নাসা। অ্যাপলোর তুলনায় ওরিয়ন বহু ক্ষমতাসম্পন্ন। এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বহু মাইক্রোচিপ্স, যা নানা জটিল কাজে সাহায্য করবে। পরীক্ষামূলক উৎপেক্ষণে এই সব মাইক্রোচিপ কেমন কাজ করছে তা লক্ষ করবে নাসা। মঙ্গলে যেতে হলে উচ্চ তেজস্ক্রিয় অঞ্চল পেরোতে হবে ওরিয়নকে। উচ্চ তেজস্ক্রিয়তায় মাইক্রোচিপ্সের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। মাইক্রোচিপ্সকে রক্ষার জন্য ওরিয়নে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় সেই ব্যবস্থাকেও খতিয়ে দেখা হবে।
পাশাপাশি, যে কোনও মহাকাশযানকে পৃথিবী ছাড়াতে বা পৃথিবীতে ফিরে আসতে অতি উচ্চ, প্রায় দু’হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয়। এ জন্য যানগুলির উপরে বিশেষ তাপসহ আস্তরণ বা হিটশিল্ড দেওয়া থাকে। এই হিটশিল্ড ঠিকমতো কাজ না করায় পৃথিবীতে প্রবেশের পথে ধ্বংস হয়ে যায় কলম্বিয়া। মারা যান ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাসার মহাকাশযাত্রী কল্পনা চাওলা। এই পরীক্ষায় সেই তাপসহ ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখা হবে।
ওরিয়নের প্রধান অংশ দু’টি। একটি ক্রু মডিউল, যেখানে মহাকাশচারীরা থাকবেন। অন্য অংশ সার্ভিস মডিউল, যেখানে রয়েছে প্রোপালশন ব্যবস্থা। যা ওরিয়নকে মহাকাশে চালাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডেল্টা-৪ রকেট শঙ্কুর মতো দেখতে ওরিয়নকে প্রতি ঘণ্টায় ১৪ হাজার কিলোমিটার বেগে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে নিয়ে যায়। রকেটের প্রথম ধাপ যখন ওরিয়ন থেকে আলাদা হয় তখন তা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাছাকাছি কক্ষপথে পৌঁছয়। ডেল্টার দ্বিতীয় ধাপ ওরিয়নকে ভূপৃষ্ঠ থেকে চূড়ান্ত, প্রায় ছ’হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় নিয়ে যায়। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা মহাকাশে কাটিয়ে মেক্সিকোর বাজা ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে প্রশান্ত মহাসাগরে আটটি প্যারাশুটে চড়ে নেমে আসে ওরিয়ন। প্যারাশুটগুলি ওরিয়নের গতিবেগ কমিয়ে দিয়ে তাকে অক্ষত অবস্থায় প্রশান্ত মহাসাগরে নামিয়ে দেয়। প্যারাশুটগুলি ঠিকমতো খুলছে কি না তা লাইভ দেখার জন্য নাসা ওই অঞ্চলে একটি ড্রোনও মজুত রেখেছিল। তাতে মেলে ওরিয়নের নেমে আসার ছবি। সেই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে উপস্থিত ছিল মার্কিন নৌসেনার দু’টি জাহাজ। জাহাজগুলি ওরিয়নকে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে তুলে নাসাকে ফিরিয়ে দেবে।
নাসা সূত্রে খবর, মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রূপায়ণে এই পরীক্ষার ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবারই পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবহওয়া অনুকূল না থাকায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy