স্ত্রী আসফনুরি বেগমের সঙ্গে সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
নিজের পূর্বতন ‘খাসতালুক’ শাসনের বাড়িতে ফিরে বৃহস্পতিবার সকালে আক্রান্ত হলেন সিপিএম নেতা মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টার। পুলিশের সামনেই তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। পরে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় জনতা। যদিও এলাকায় ঢুকে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় মজিদকে। হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় মজিদ নিজে কোনও পাল্টা অভিযোগ করেননি পুলিশের কাছে। তবে ভাঙচুরের ঘটনায় ফোনে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সাধারণ ডায়েরি করে তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন মজিদকে হেনস্থার ঘটনায় সামনের সারিতে ছিলেন মহিলারা। মজিদ শাসনে ঢুকলে এলাকার মেয়ে-বৌয়েরা আঁশবঁটি নিয়ে তৈরি আছে বলে এর আগে হুমকি দিয়েই রেখেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য এ দিনও তাঁর অবস্থানে অনঢ়। তাঁর প্রতিক্রিয়া: “বেশ হয়েছে। এলাকায় গণ্ডগোল পাকাতেই তো গিয়েছিল (মজিদ)। যাদের ছেলেদের মজিদ খুন করেছে, সেই মা-মেয়েরা ছেড়ে দেবে? যারা এমনটা করেছে, তাদের আমি সাধুবাদ জানাই।”
কী বলছেন মাস্টার নিজে? বললেন, “এ রাজ্যে আমার নিজের বাড়িতে যাওয়াটাই যেন অনধিকার প্রবেশ। বিচার ব্যবস্থা যখন আমাকে সর্বত্র ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দিয়েছে, তখন নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়া নিয়ে এমন ঘটনা ঘটল।”
কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকালে?
সকাল তখন প্রায় সাড়ে ৯টা। ছেলে মনিরুলকে নিয়ে কাজিপাড়ার বাড়ি থেকে শাসনে পৌঁছন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ। রাজ্যে তৃণমূলের উত্থান পর্বে মারধর করে মজিদকে এলাকা ছাড়া করা হলেও শাসনের বাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের কয়েক জন। মাঝের প্রায় পাঁচটা বছর মাস্টার কখনও খুনের অভিযোগে জেলহাজতে ছিলেন। কখনও বারাসতে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে থেকেছেন। বেশির ভাগ সময়টা কাটিয়েছেন কাজিপাড়ার বাড়িতে।
মাস্টার বাড়ি ফিরেছেন শুনে এ দিন প্রতিবেশীরা কেউ কেউ ভিড় করতে থাকেন। বেলা ১১টা নাগাদ মজিদের বাড়িতে আসে পুলিশ। তাদের পিছু পিছু বহু মানুষ হাজির হয়। পুলিশকে না জানিয়ে মজিদ কেন শাসনে ঢুকেছেন, তা জানতে চায় পুলিশ। এই নিয়ে সামান্য তর্কাতর্কি বাধে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেখে পুলিশ মজিদকে গাড়িতে উঠতে বলে। মজিদকে গাড়িতে তোলার সময়ে তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করে কিছু মহিলা-পুরুষ। গাড়ি থেকেও তাঁকে টেনে নামানোর চেষ্টা হয়। শেষমেশ মজিদ ও তাঁর স্ত্রী আসফনুরি বেগমকে গাড়িতে তুলে নেয় পুলিশ। পিছনেই নিজের গাড়িতে ছিলেন ছেলে মনিরুল। সেই গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে জনতা। গাড়ির কাচ ভাঙে।
কিন্তু তাঁকেই তো উল্টে গ্রেফতার হতে হল। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকায় গিয়ে গণ্ডগোল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মজিদকে।” পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে তাঁকে কাজিপাড়ার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy