Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীকে রুখতে তাঁর শিশুপুত্রকে খুনের অভিযোগ

ব্যবসায়িক রেষারেষির জেরে প্রাণ দিতে হল এক শিশুকে। বছর তিনেকের ওই শিশুর নাম তৌফিক আলম। তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয় তার বস্তাবন্দি দেহ। শ্বাসরোধ করে খুন করার পর তাকে বস্তায় বেঁধে ডোবার জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।

বসিরহাট থানায় ধৃত কাদের। — নিজস্ব চিত্র।

বসিরহাট থানায় ধৃত কাদের। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ১২:৩৯
Share: Save:

ব্যবসায়িক রেষারেষির জেরে প্রাণ দিতে হল এক শিশুকে। বছর তিনেকের ওই শিশুর নাম তৌফিক আলম। তার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে। রবিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয় তার বস্তাবন্দি দেহ। শ্বাসরোধ করে খুন করার পর তাকে বস্তায় বেঁধে ডোবার জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।

ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ, তৌফিকের বাবার এক ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে অপহরণ করে খুন করেছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তোফাজ্জেল হোসেন মণ্ডল যদিও পলাতক। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কাদের মোল্লা নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি, বেশ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তৌফিক আলম

পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকায় পোশাক তৈরির ব্যবসা করেন মাজেদ মোল্লা এবং তোফাজ্জেল। মাজেদের দু’বছর আট মাস বয়সের ছেলে তৌফিক। স্থানীয়দের দাবি, ব্যবসায় তোফাজ্জেল ইদানীং বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। অন্য দিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাজেদের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছিল। এটাকে ভাল চোখে দেখতে না পেরে শেষে এক ফন্দি আঁটে সে। মাস তিনেক আগে নিজেরই এক বিশ্বস্ত কর্মী কাদের মোল্লাকে পরিকল্পনা করে মাজেদের কাছে পাঠায়। তোফাজ্জেল তাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে, এই বলে মাজেদের কারখানায় কাজ করতে চায় কাদের। কাজ পেয়েও যায়। এর পর গত তিন মাস ধরে ধীরে ধীরে মাজেদ এবং তাঁর পরিবারের মানুষদের কাছে বিশ্বস্ত এবং কাছের মানুষ হয়ে ওঠে সে। তোফাজ্জেলের পরিকল্পনার কথা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। সোমবার সকালে মাজেদ বলেন, ‘‘তোফাজ্জেল ব্যবসায় আমার থেকে পিছিয়ে পড়ে পড়ে যে এমনটা করতে পারে, তা ভাবতেই পারিনি।’’

পরিকল্পনা মতো পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে এর পর আসরে নেমে পড়ে তোফাজ্জেল। কাদেরকে দিয়ে তৌফিককে অপহরণ করিয়ে মাজেদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের ছক সাজায়। সেই মতো রবিবার কাজে লেগে পড়ে কাদের। ওই দিন সন্ধ্যায় মায়ের কাছেই ছিল তৌফিক। সাড়ে ছ’টা-সাতটা নাগাদ ছেলেকে রেখে তিনি ঘর থেকে উঠে পাশের রান্নাঘরে যেতেই খাবারের লোভ দেখিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয় কাদের। তার পর সোজা তোফাজ্জেলের কারখানায় পৌঁছয়। আর গোল বাধে সেখানেই।

কাদেরের কাছ থেকে নিজের কোলে শিশুটিকে তুলে নেয় তোফাজ্জেল। আর তখনই কেঁদে ওঠে সে। কিছুতেই সেই কান্না থামাতে না পেরে বাচ্চাটিকে কারখানার একটি জলভর্তি চৌবাচ্চায় ডোবানো হয়। এর পর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোনও কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয় শিশুটির। শেষে একটি বস্তায় তার দেহ ঢুকিয়ে কারখানারই পাশের একটি ডোবায় তা ফেলে দেওয়া হয়। তোফাজ্জেলকে এই কাজে কাদের সাহায্য করে বলে অভিযোগ।

এর পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পান মাজেদ। ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে তাঁর কাছে দুই লক্ষ টাকা চাওয়া হয়। তিনি প্রথমে অপহরণের কথা বিশ্বাস করতে চাননি। কারণ, কিছু ক্ষণ আগেই ছেলেকে তার মায়ের কাছে দেখেছেন। কিন্তু, ফোনটি পাওয়ার পর দেখেন, ছেলে সত্যিই বাড়িতে নেই। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এ পাশ ও পাশ কোথাও যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পাশের ডোবায় সে পড়ে গিয়েছে কি না দেখতে সবাই সেখানে যান। ডোবার পাশের একটি টিউবওয়েলে তখন হাত-পা ধুচ্ছিল কাদের। তার সারা গায়ে তখন জল-কাদা-পানা। তাকে ওই অবস্থায় ওখানে দেখে সন্দেহ হয় সবার। জি়জ্ঞাসা করতেই সে আমতা আমতা করতে থাকে বলে অভিযোগ। তাকে সামান্য মারধর করতেই সে সব স্বীকার করে ফেলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এর পর ডোবা থেকে বস্তাবন্দি তৌফিকের দেহ উদ্ধার করে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সেখানে গেলে চিকিত্সকেরা তাকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।

নিহত শিশুটির পরিবারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কাদেরকে গ্রেফতার করে। তোফাজ্জেল যদিও পালিয়ে গিয়েছে। তার পরিবারের বেশ কয়েক জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কাদের মোল্লা নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় সে সব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে। তোফাজ্জেল হোসেন মণ্ডলের বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ এনে মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

murder police business basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy