আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে হুমকি মোতাবেক আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ। শুক্রবার ভোরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ দাবি করেন, তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁকে সিসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। তবে বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। তিনি কথাও বলেছেন। তাঁর চিকিত্সার জন্য তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিন দিন আগে নগর দায়রা আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে কুণালবাবু হুমকি দিয়েছিলেন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা না হলে তিনি আত্মহত্যা করবেন। তার পরেও তাঁর হাতে কী ভাবে ঘুমের ওষুধ পৌঁছল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কুণালবাবুর আত্মহত্যার চেষ্টার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। জেল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিবিআই। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাসপেন্ড করা হয়েছে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের সুপার এবং মেডিক্যাল অফিসারকে। সাসপেন্ড হয়েছেন সংশোধনাগারের কুণালের সেলের বাইরে প্রহরারত কারারক্ষীরাও।
কুণালবাবু ভর্তি আছেন এসএসকেএম-এর সিসিইউ-র ৬ নম্বর বেডে। সিসিইউ-র ভিতরে ও বাইরে এখন কড়া পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই রকম একজন হাই প্রোফাইল বন্দিকে কি যথেষ্ট নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কুণালের আইনজীবী দাবি করেছেন, মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন সারদা কাণ্ডে অন্যতম মূল এই অভিযুক্ত। তবে জেলের মধ্যে এত পরিমাণে ঘুমের ওষুধ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সবাই। বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মতে, “আরও ধৈর্য ধরা উচিত ছিল কুণালের। এই ভাবে বললেই কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। কুণালের উচিত সঠিক তথ্য দিয়ে সিবিআইকে তদন্তে আরও সাহায্য করা। জেলের মধ্যে এত ওষুধ কী ভাবে এল তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত।” তদন্তে কুণালের আরও সহায্য করা উচিত বলেও জেল কর্তৃপক্ষের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান। তাঁর কথায়, “এই ঘটনা জেল কর্তৃপক্ষের অসতর্কতা না ইচ্ছাকৃত তা খতিয়ে দেখা উচিত। আগেই খুন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কুণাল। নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই প্রকৃত সত্য জানা যাবে। সুস্থ হয়ে উঠে প্রকৃত অপরাধীদের নাম জানিয়ে তদন্তে সাহায্য করুক কুণাল।”
তবে নিরাপত্তা বা সতর্কতার অভাবের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ। কারা দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত দু’দিন ধরে কড়া নজরে রাখা হয়েছিল কুণালকে। ঘুমোতে যাওয়ার আগেও তাঁকে পরীক্ষা করা হয়। তখনও তাঁর কাছ থেকে কোনও ঘুমের ওষুধ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত বছর ২৩ নভেম্বর সারদা কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কুণালকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রভাবশালীদের নিয়ে আগেও বারবার সরব হয়েছেন তিনি। কখনও বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পর্ক নিয়ে নথি দাখিল করেছেন, কখনও বা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সারদার সংবাদমাধ্যম থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার আদালতে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত দুই শীর্ষ পুলিশকর্তার নামও তুলেছেন তিনি। ফের গোপন জবাববন্দি দেওয়ার আবেদনও জানান। তিনি দাবি করেন, যারা সুদীপ্ত সেনকে পনজি স্কিমের ব্যবসায় নামিয়েছিল এবং বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থা খুলিয়েছিল তাদের কিছু বলা হচ্ছে না। ওই দিন বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়েই হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বার বার বলতে থাকেন তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতেই কাঠগড়া থেকে নেমে লকআপে ঢুকে পড়েন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy