সমাবর্তন নিয়ে উপাচার্যকেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু দিন এগিয়ে এলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি উপাচার্য। শেষ পর্যন্ত আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীই জানিয়ে দিলেন, যাদবপুরের সমাবর্তন হবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। উপাচার্যকেও সে কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
শুক্রবার সকালে রাজ্যপাল এ কথা জানানোর পরে এ দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “সমাবর্তন তো প্রত্যেক বছর হয়, এ বারও হবে। ক্যাম্পাসের ভিতরেই হবে। আমরা তো স্থির করেই রেখেছি।” যদিও সমাবর্তন কোথায় হবে সে কথা আচার্য-রাজ্যপাল মুখ খোলার আগে পর্যন্ত জানাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কোথায় হবে, তা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে হল রাজ্যপালকে এই ঘটনার সূত্র ধরে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশ। উপাচার্য অবশ্য কোনও কথাই বলছেন না।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বাইরের কোনও প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন আয়োজন করতে চেয়েছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসের বাইরে সমাবর্তন করার নজির যাদবপুরের ইতিহাসে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর অধিকাংশ সদস্য চান বরাবরের মতো এ বারও সমাবর্তন হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে। প্রত্যেক বছরের মতো এ বারও ২৪ ডিসেম্বর, প্রতিষ্ঠা দিবসে যাদবপুরের সমাবর্তন হওয়ার কথা।
শুক্রবার সকালে স্কটিশ চার্চ কলেজের এক অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হয়, ক্যাম্পাসের বাইরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে তিনি কি সমর্থন করেন? রাজ্যপাল বলেন, “আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলেছি, যাতে ক্যাম্পাসেই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।”
যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা ইতিমধ্যেই সমাবর্তন বয়কটের ডাক দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, সমাবর্তনের দিন বিক্ষোভ-কর্মসূচি নিতে পারেন তাঁরা। রাজ্যপাল এ দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “কেউ অনুষ্ঠান বয়কট করতে চাইলে, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে কেউ যদি কোনও রকম বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন, তা হলে আইনমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, সমাবর্তনের সময়ে কী কর্মসূচি নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে সেমেস্টার পরীক্ষা শেষে, ১৭ ডিসেম্বরের পরে। শিক্ষক সংগঠন জুটা জানিয়েছে, সমাবর্তনের দিন তাঁদের কর্মসূচি স্থির হবে আগামী ১১ ডিসেম্বরের বৈঠকে। সমাবর্তন যাঁদের জন্য, সেই ছাত্রছাত্রীরাই বয়কট করলে অনুষ্ঠান অনেকটাই বর্ণহীন হয়ে যাবে বলে মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-প্রাক্তন কর্তাদের অনেকে।
শুক্রবারই দুপুরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন অভিজিৎবাবু। পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে রাজভবন থেকে বেরোনোর সময় অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি। পরেও বারবার টেলিফোন করে যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে উপাচার্য জানিয়েছেন, রাজ্যপাল তাঁকে ক্যাম্পাসের ভিতরে সমাবর্তন আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে যান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজভবন থেকে বেরিয়ে পার্থবাবু জানান, সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। শুক্রবারেও তিনি বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। এখানে আমাদের কোনও ভূমিকা বা বক্তব্য নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy