Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WBBSE

সরকারি অনুদান ‘নেই’, টেস্টের প্রশ্ন স্কুলভিত্তিক হবে কী করে? প্রশ্ন শিক্ষামহলে

এখন‌ও রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রায় কোন‌ও স্কুলে আসেনি কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা। এর ফলে স্কুলের দৈনন্দিন কাজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ছোট এবং মাঝারি স্কুলগুলিকে।

সংগৃহীত চিত্র।

অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০০
Share: Save:

শেষ হতে চলেছে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ। সামনেই মাধ্যমিকের টেস্ট। পরীক্ষা পরিচালনা থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি— দায়িত্ব স্কুলগুলিরই। এমনই নির্দেশিকা দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আর এই নির্দেশ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

অভিযোগ, এখন‌ও রাজ্যের প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে প্রায় কোন‌ও স্কুলে আসেনি কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা। এর ফলে স্কুলের দৈনন্দিন কাজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ছোট এবং মাঝারি স্কুলগুলিকে। প্রধানশিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সরকারি অনুদান না আসায় স্কুলের চক-ডাস্টার কেনার খরচ, বিদ্যুৎ বিল, সামিটিভ পরীক্ষা পরিচালনার খরচ পর্যন্ত কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ফলে স্কুলগুলি মাধ্যমিকের টেস্টের জন্য খরচ কোন খাত থেকে করবে বলে প্রশ্ন তাদের।

পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধানশিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “প্রশ্ন তৈরি করা থেকে ছাপানো যথেষ্টই খরচসাপেক্ষ বিষয়। বেশ কয়েকটি স্কুল একসঙ্গে প্রশ্ন করলে খরচ বেঁচে যায়। এতে বহু স্কুল উপকৃত হয়। যদিও টেস্টের প্রশ্ন আমরা নিজেরাই তৈরি করি।”

শিক্ষকমহলের একাংশের বক্তব্য, বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশ দেওয়ার আগে স্কুলগুলির আর্থিক সচ্ছলতা-সহ কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। না হলে নির্দেশ মানতে গিয়ে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।

রাজ্যের প্রধানশিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “পরীক্ষার দায়িত্বে যখন স্কুলগুলিই, তখন কী ভাবে প্রশ্ন করা হবে তা পর্ষদ ঠিক করে দিতে পারে না। শিক্ষা কমিশনের গঠন থেকে এই ক্লাস্টার মডেল ব্যবস্থা রয়েছে। এতে ছোট বড় বহু স্কুল উপকৃত হয়ে থাকে। আমরা চাই আর্থিক ভার কমাতে পর্ষদের তরফ থেকে প্রশ্ন তৈরি করা হোক।”

আবার শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, ক্লাস্টার মডেলে প্রশ্নপত্র তৈরির সমস্যাও আছে। প্রত্যেকটি স্কুলের পড়াশোনার মান ভিন্ন। ক্লাস্টারভিত্তিক প্রশ্ন হলে, পড়ুয়াদের মেধা এবং মান বজায় রেখে প্রশ্ন করা সম্ভব হয় না।

এ প্রসঙ্গে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘ক্লাস্টার মডেলে অনেক সময় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সংগঠনের প্রশ্ন সামনে চলে আসে, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।’’

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ব্যাখ্যা, তারা বিধি মেনেই কাজ করে। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও সেই বিধি মেনেই। সমস্যায় পড়লে শিক্ষা দফতরের কমিশনারের কাছে জানানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

‘কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘এই বিষয়টি পর্ষদের দেখা দরকার। পাশাপাশি স্কুলগুলি যাতে আরও বেশি করে কম্পোজ়িট গ্রান্ট পায় এবং তাদের প্রশ্নপত্র ছাপাতে অর্থের সমস্যা না হয়, তা-ও দেখা দরকার।’’ পাশাপাশি, আর্থিক সঙ্গতির দোহাই দিয়ে যে স্কুলগুলি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের থেকে বার্ষিক ২৪০ টাকা সংগ্রহ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য স্কুলগুলিকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট বাবদ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে রাজ্য ৬০ শতাংশ এবং কেন্দ্র ৪০ শতাংশ অর্থ দেয়। পড়ুয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে স্কুলগুলি এই টাকা পেয়ে থাকে। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এক হাজারের বেশি পড়ুয়াসংখ্যার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলির বছরে এক লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা। যেখানে এই সংখ্যা হাজারের কম, কিন্তু ২৫০-এর বেশি, সে রকম স্কুলের প্রাপ্য ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও ৫০ ও ২৫ হাজার টাকার আরও দুই ধাপ রয়েছে। তবে, বেশির ভাগ স্কুল এই নির্ধারিত টাকা পায় না বলে অভিযোগ।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘পর্ষদ ক্লাস্টারের বিরোধিতা করছে কেন বোঝা যাচ্ছে না। সরকার এখন‌ও কম্পোজ়িট গ্রান্ট-এর টাকা দেয়নি। স্কুলগুলির আর্থিক অবস্থা করুণ। এই অবস্থায় প্রতিটি স্কুলকে আলাদা করে প্রশ্নপত্র ছাপাতে গেলে তাদের উপর আর্থিক চাপ পড়বে। আবার পড়ুয়াদের থেকে বেশি ফি-ও নেওয়া যাবে না। তবে, স্কুলগুলি চলবে কী করে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

WBBSE Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy