Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB Madhyamik exam 2023

মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার উপায় কী? জানালেন অভিজ্ঞ শিক্ষিকা

মনে রাখতে হবে, বিষয় হিসেবে ভূগোল খুবই মনোগ্রাহী। আমাদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ভূগোলে আলোচনা করা হয়। তাই, পড়ার সময় একটু সচেতন হলে সহজেই আমরা বিষয়টিকে আত্মস্থ করতে পারব।

মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার উপায় জানালেন শিক্ষিকা।

মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার উপায় জানালেন শিক্ষিকা। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৯
Share: Save:

মাধ্যমিক ২০২৩ দরজায় কড়া নাড়ছে। এ বারের ভূগোল পরীক্ষা রয়েছে ২৫শে ফেব্রুয়ারি। অতিমারি কাটিয়ে আবার সেই পুরনো নিয়মে সম্পূর্ণ সিলেবাসের উপর পরীক্ষা হতে চলেছে। পরীক্ষায় বসার আগে এই ক’টা দিন কী ভাবে ভূগোল বিষয়টির প্রস্তুতি নিতে হবে, সেই নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যোধপুর পার্ক গার্লস হাই স্কুলের ভূগোলের শিক্ষিকা সুনীপা সরকার

•মাধ্যমিকে প্রশ্নের ধরন: মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র যথেষ্টই ছাত্রবান্ধব। সম্পূর্ণ বই খুঁটিয়ে পড়লে এবং সঠিক প্রশ্ন চয়ন করলে অনায়াসেই ৯০-এর বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। ভূগোল প্রশ্নপত্রে মোট ছ’টি বিভাগ থাকে। বিভাগ 'ক' এবং 'খ' নিয়ে এমসিকিউ যেখানে ১ নম্বরের ৩৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। পর্যায়ক্রমে সঠিক উত্তর নির্বাচন, শুদ্ধ অশুদ্ধ লেখ, শূন্যস্থান পূরণ, একটি বা দু’টি শব্দে উত্তর দাও এবং স্তম্ভ মেলাও শিরোনামে প্রশ্ন থাকে। পরবর্তী 'গ' বিভাগে ২ নম্বরের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ৬টি (বিকল্প সহ) এবং 'ঘ' বিভাগে ৩ নম্বরের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক ৪টি (বিকল্প সহ) প্রশ্ন থাকে। রচনাধর্মী 'ঙ' বিভাগ থেকে প্রাকৃতিক ভূগোলের ৪টি প্রশ্নের মধ্যে ২টি ও আঞ্চলিক ভূগোলের (ভারত) ৪টি প্রশ্নের মধ্যে ২টির উত্তর করতে হয়। সবশেষে 'চ' বিভাগের অন্তর্গত ১০ নম্বরের ম্যাপ পয়েন্টিং, যেখানে প্রত্যেকটি প্রশ্ন আবশ্যিক এবং উপযুক্ত স্থানে চিহ্নসহ নাম লেখা বাঞ্ছনীয়।

•সময় মেপে পরীক্ষা: পরীক্ষার উত্তরপত্রে লেখা শুরুর আগে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্নপত্র ভাল করে পড়ার জন্য হাতে ১৫ মিনিট সময় পাবে। এই সময়টির উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করতে হবে। যে সব প্রশ্নে বিকল্প থাকবে সে সব প্রশ্ন এই সময় বাছাই করে রাখতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে, যেটিতে বেশি নম্বর তোলা যায়, সেটিকে চিহ্নিত করে নিতে হবে এবং উত্তর লেখার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত হতে হবে। শুরুতে এমসিকিউ, এসএকিউ-এর জন্য ৩০ মিনিট বরাদ্দ করে ম্যাপ পয়েন্টিং এর জন্য ১৫ মিনিট দেওয়া যেতে পারে। পরবর্তী ৪৫ মিনিটে সংক্ষিপ্ত এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর শেষ করার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। রচনাধর্মী ৪টি প্রশ্নের প্রতিটির জন্য প্রায় ১৮ মিনিট সময় বরাদ্দ করা যেতে পারে। শেষ ১৫ মিনিট রাখতে হবে রিভিশনের জন্য। ভূগোলে রচনাধর্মী প্রশ্নের প্রাকৃতিক ভূগোল অংশে এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নে ডায়াগ্রাম আঁকার সুযোগ থাকে। ভাল নম্বর পেতে হলে পরিচ্ছন্ন ডায়াগ্রাম আঁকা জরুরি।

•যে ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে: যে হেতু অবজেক্টিভ প্রশ্নের ক্ষেত্রে কোনও সাজেশন হয় না, সে হেতু প্রতিটি অধ্যায় মন দিয়ে পড়তে হবে। পড়ার সময় বইতে বা নিজেদের লেখা নোটে বিশেষ জায়গাগুলি হাইলাইট করে রাখতে হবে, যাতে পরীক্ষার আগে রিভাইস করার সময় সেই বিষয়গুলি সহজেই চোখে পড়ে। ২০১১ থেকে ২০২০-এই ১০ বছরের মাধ্যমিকের প্রশ্ন সমাধান করে রাখলে এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের টেস্ট পেপার ও বাজারে কিছু ভাল প্রকাশকের মডেল কোয়েশ্চেন ব্যাঙ্ক সময় ধরে অভ্যাস করলে পরীক্ষার সময় দেখা যাবে বেশির ভাগ প্রশ্নেরই খুব ভাল ভাবে উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

•বিশেষ মনোযোগ: ২০২২-এর মাধ্যমিকের হ্রাসপ্রাপ্ত সিলেবাসে যে হেতু প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে শুধুমাত্র বহির্জাত প্রক্রিয়া ও উদ্ভূত ভূমিরূপ অধ্যায়টি ছিল, তাই ৫ নম্বরের ৪টি প্রশ্নই এখান থেকে এসেছিল। সে ক্ষেত্রে এবারে নদীর ক্ষয়, হিমবাহের ক্ষয় ও বায়ুর সঞ্চয় কাজের ফলে উদ্ভূত ভূমিরূপের উপর গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে, এক্ষেত্রে ডায়াগ্রাম আবশ্যিক। বায়ুমণ্ডল ও বারিমণ্ডল থেকে যে হেতু গত বার কোনও প্রশ্ন ছিল না তাই সবটাই ভাল করে পড়তে হবে। বিশেষত বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস, উষ্ণতার তারতম্যের কারণ, বায়ুচাপ বলয় ও নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, তাপ বলয়, বিশ্ব উষ্ণায়ন, বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাত, নিরক্ষীয়, মৌসুমী, ভূমধ্যসাগরীয় ও মরু জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বিষয়গুলি বড় প্রশ্নের জন্য বিশেষ ভাবে দেখতে হবে।

বারিমণ্ডল থেকে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণ ও তার প্রভাব, জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল, বিভিন্ন প্রকার জোয়ার-ভাটা ও সময়ের ব্যবধান এবং জোয়ার-ভাটা কী ভাবে সংঘটিত হয়— এ সব কিছুর প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। আঞ্চলিক ভূগোলেও ভারতের ভূপ্রকৃতি থেকে হিমালয়, উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের নদনদীর তুলনামূলক আলোচনা, প্রধান তিনটি নদীর গতিপথ, ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক, ভারতের চিরহরিৎ, পর্ণমোচী, মরু ও ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বণ্টনে জলবায়ুর প্রভাব, ভারতের প্রধান তিন প্রকার মাটির বিবরণের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তেমনই অর্থনৈতিক ভূগোল থেকে কৃষিকাজে ধান ছাড়া বাকি সব ক’টি ফসল চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ, ভারতীয় কৃষির বৈশিষ্ট্য, সমস্যা ও তার সমাধান, সবুজ বিপ্লব, কার্পাস শিল্প ও পেট্রোরসায়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ, মোটর গাড়ি ও তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা ;ভারতের অসম জনবণ্টনের কারণ, নগরায়ণের সমস্যা;পরিবহণের গুরুত্ব, বিভিন্ন প্রকার পরিবহণ মাধ্যমের তুলনামূলক আলোচনা এই বিষয়গুলি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নির্বাচন শুধুমাত্রই অভিজ্ঞতা ও অনুমান নির্ভর।

বিষয় নির্বাচন: ভাল নম্বর পেতে হলে সমগ্র পাঠ্য বই থেকে কয়েকটি বিষয় আলাদা করে নেওয়া যেতে পারে। কৃষিকাজ অধ্যায়টি একটু ছক করে বাড়িতে তৈরি করে ফেললেই পরীক্ষার খাতায় অনায়াসেই অল্প লিখে পুরো নম্বর পাওয়া যায় এবং সময়ও বাঁচে। ঠিক তেমনি তুলনামূলক প্রশ্ন অর্থাৎ উত্তর ভারতের নদী ও দক্ষিণ ভারতের নদীর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা, বার্খান ও সিফ, নদী ও হিমবাহ উপত্যকা, পলল ব্যজনী ও ব- দ্বীপ, ইয়ারদাং ও জিউগেন, উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্রের তুলনা এই ধরনের প্রশ্নে ৫ নম্বরের ক্ষেত্রে ৫টি পয়েন্ট ও ৩ নম্বরের ক্ষেত্রে ৩টি মূল পয়েন্ট লিখলে সহজেই পুরো নম্বর পাওয়া যায়।

সব শেষে মনে রাখতে হবে, বিষয় হিসেবে ভূগোল খুবই মনোগ্রাহী। আমাদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ভূগোলে আলোচনা করা হয়। তাই পড়ার সময় একটু সচেতন হলে সহজেই আমরা বিষয়টিকে আত্মস্থ করতে পারব। ৩৬ নম্বরের এমসিকিউ, এসএকিউ এবং ১০ নম্বরের ম্যাপ পয়েন্টিং— এই বিষয়গুলি থেকে অবজেক্টিভ প্রশ্নের সঠিক ভাবে উত্তর দিলে ভূগোলে অনেক নম্বর তোলা সম্ভব।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy