পরীক্ষা একেবারে দোরগোড়ায়। অতিমারির ভয়াবহতা কাটিয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা এসে উপস্থিত। পরীক্ষার প্রস্তুতিও তাই শেষ পর্বেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি রয়েছে মাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা। কিন্তু এখনও জীবন বিজ্ঞানের ঠিক কোন জিনিসগুলি আরও খুঁটিয়ে পড়তে হবে, কী ভাবে প্রশ্নের উত্তর করলে আরও বেশি নম্বর উঠবে-- এগুলি হয়তো অনেকেরই অজানা। এই সব বিষয় নিয়েই যোধপুর পার্ক গার্লস হাই স্কুলের সহকারী প্রধানশিক্ষিকা তথা জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা, অজন্তা চৌধুরী তাঁর মতামত জানিয়েছেন।
প্রশ্নের ধরন: মাধ্যমিকের জীবন বিজ্ঞান প্রশ্নপত্রে মোট চারটি বিভাগ থাকে, যথা-- ক, খ,গ এবং ঘ। ক বিভাগে ১৫টি এমসিকিউ ও খ বিভাগে ২৬টি অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ( শূন্যস্থান পূরণ, সত্য-মিথ্যা, স্তম্ভ মেলানো ও একটি শব্দ /বাক্যে উত্তর) থেকে ২১টির উত্তর করতে হয়। এতে মোট ১৫ + ২১=৩৬ নম্বর থাকে । বিভাগ গ-তে ১৭ টি প্রশ্ন থেকে ১২টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতি প্রশ্নে থাকে ২ নম্বর। বিভাগ ঘ-তে ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, প্রতি প্রশ্নে থাকে ৫ নম্বর করে। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হল অঙ্কনধর্মী অর্থাৎ ছবি এঁকে উত্তর দিতে হয় পরীক্ষার্থীদের।
সময় বিভাজন: ক বিভাগে ১৫টি এমসিকিউ ১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ করে দেওয়া ভাল। খ বিভাগে চারটি উপবিভাগ মিলিয়ে ২৬টি অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে ২১টি করতে হয় । তবে প্রতি উপবিভাগ থেকে ১টি করে বাড়তি উত্তর লিখলে ভাল হয়। এর জন্য ২৫ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা ভাল। গ বিভাগে ১৭টি প্রশ্ন থেকে ১২টি করতে হয়। একটি বা দু'টি অতিরিক্ত উত্তর লিখতে পারলে ভাল। এ ক্ষেত্রে, ৩৫ মিনিট সময় রাখলে ভাল। ঘ বিভাগে ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় । এ ক্ষেত্রে, পরীক্ষার্থীরা ৯০ মিনিট সময় নিতে পারে। এর পর হাতে রইল ১৫ মিনিট। এই সময় ঠান্ডা মাথায় রিভিশন দিয়ে নিতে হবে।
যে ভাবে পড়বে: সাজেশনের ভিত্তিতে না পড়ে সায়েন্টিফিক ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন টেস্ট পেপার ও বিগত বছরের মাধ্যমিকের প্রশ্নের সমাধান করতে হবে। সারা দিনে অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা জীবন বিজ্ঞান পড়তে হবে । সর্বোপরি, সারা বছর স্কুলে শিক্ষক যে ভাবে তোমাদের পড়িয়েছেন, যা গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন, তা মাথায় রেখে পড়াশোনা করতে হবে।
বিষয় নির্বাচন: সমস্ত অধ্যায় সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ২০২২ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায় বাদ ছিল। তাই এই অধ্যায়গুলি ভাল ভাবে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন:
গুরুত্ব যেখানে:
- পরীক্ষার খাতা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হবে।
- প্রশ্নপত্র মন দিয়ে পড়তে হবে। পার্ট কোয়েশ্চেন যেন চোখ এড়িয়ে না হয়ে যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- বিভাগ গ ও ঘ-এর প্রতি প্রশ্নের শেষে একটি করে 'এন্ডিং লাইন' দিলে ভাল হয় ।
- উত্তর এলোমেলো ভাবে না লিখে ক্রমানুসারে লেখা উচিত।
- ছবি আঁকার দিকে নজর দিতে হবে। খাতার বাঁদিক ঘেষে ছবি এঁকে ডানদিকে চিহ্নিত করলে ভাল । মানব চক্ষুর লম্বছেদ, উদ্ভিদ বা প্রাণী কোষবিভাজন এর বিভিন্ন দশা, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ইত্যাদির ছবি আঁকা ভাল করে অভ্যাস করবে ।
- যদি 'ফুল ফর্ম' লিখতে বলা হয়, তা হলে তা ইংরেজিতে লিখলেই ভাল।
- বংশগতি থেকে ক্রসিং-এর অথবা রোগ সম্পর্কে প্রশ্ন এলে প্রতিটি জনু, গ্যামেট বা ব্যবহৃত চিহ্নকে সুস্পষ্ট করে নির্দেশ করতে হবে ।
- অভিযোজনের প্রশ্নে অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য লিখতে বললে তার সঙ্গে অভিযোজনগত গুরুত্বও লিখতে হবে।
- কোন দু'টি বিষয়ের মধ্যে দু'টি বা তিনটি পার্থক্য লিখতে বলা হলে তার মধ্যে উদাহরণ লিখলে হবে না। কারণ উদাহরণ দিয়ে পার্থক্য হয় না । উদাহরণকে অতিরিক্ত পয়েন্ট হিসেবে লিখতে পারে পরীক্ষার্থীরা।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি: কোন অধ্যায়কে বাদ দেওয়া যাবে না। পঞ্চম অধ্যায় থেকে সবথেকে বেশি প্রশ্ন আসে। অনেকেই এই অধ্যায়টিকে সোজা ভেবে মন দিয়ে পড়ে না । ফলে পরীক্ষায় নম্বর কমে যায়। বংশগতির সুত্র , ক্রসিং, শতাংশ নির্ণয় ইত্যাদি যত্ন নিয়ে করতে হবে। ছবি য়াঁকা অভ্যাস করতে হবে। কোনও উত্তরের সঙ্গে প্রয়োজন পড়লে প্রাসঙ্গিক ছবি আঁকতে হবে।
পরীক্ষা যে হেতু একেবারে দরজায় কড়া নাড়ছে, তাই এই সময় নিজের শরীরের যত্ন নিতে হবে,পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম যাতে হয়, সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে। সর্বোপরি, নিজের উপর ভরসা হারালে চলবে না।