সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর। এর প্রভাব পড়ছে স্কুলগুলির পঠনপাঠনে। রাজ্যের একাধিক সরকারি স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের পঠনপাঠন চলবে কী ভাবে, তা নিয়ে চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আশু সমাধান খুঁজতে প্রধানশিক্ষকদের তরফ থেকে ফোন যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে। সংসদ সূত্রে খবর, বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধ না-করে অস্থায়ী সমাধান হিসাবে কাছাকাছি এলাকায় থাকা তিন-চারটি স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের একত্র করে ক্লাস নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছে।
সংসদ সূত্রে খবর, অস্থায়ী এই পদ্ধতিতে কাছাকাছি এলাকার কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের একটি বড় শ্রেণিকক্ষে বসানো হবে। যে স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন, সেই স্কুলের কেউ পড়ুয়াদের পড়াবেন। প্রয়োজনে ক্লাস নেবেন অবসরপ্রাপ্ত বা স্বেচ্ছাব্রতী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে এই ভাবে পঠনপাঠন কত দিন চালানো সম্ভব, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের নিরিখে পঠনপাঠনের যে গুণগত মান, তা বজায় রাখা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
যদিও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে মুখ খোলেনি সংসদ। তবে ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রধানশিক্ষকদের বলা হচ্ছে, স্থায়ী সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত আপাতত এই ভাবেই পঠনপাঠন চালিয়ে যেতে। এই প্রসঙ্গে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধানশিক্ষক রাজা দে বলেন, “আমাদের স্কুলে বহু দিন ধরে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কম। আর তাই ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হওয়ার পর আরও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ক্লাস্টার মডেল, অর্থাৎ তিন-চারটি স্কুলের পড়ুয়াদের একত্র করে ক্লাস করাতে বলছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য স্কুলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন কি না, তা জানা নেই।”
পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আওতায় থাকা স্কুলগুলিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মাত্র ১৪ শতাংশ পড়ুয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছে। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকের অভাবে এই সংখ্যাটা আগামী দিনে আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
প্রধানশিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। শিক্ষকের অভাব ছিলই। তার উপর ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের ফলে বিজ্ঞান বিভাগ চালু রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্কুলগুলিকে। কারণ চাকরি বাতিলের খবর পাওয়ার পর বহু শিক্ষক আর ক্লাস নিতে যাননি। এই পরিস্থিতিতে অনেক স্কুল নিজস্ব তহবিল থেকে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করার কথা ভাবছে। কিন্তু এই ভাবে কত দিন সামাল দেওয়া যাবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও।
কলা কিংবা বাণিজ্য বিভাগের তুলনায় বিজ্ঞান বিভাগে ‘কোর সাবজেক্ট’ বা মৌলিক বিষয়ের সংখ্যা বেশি। গত কয়েক বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো বিষয়ও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই বিষয়গুলি পড়ানোর জন্য সেই বিষয়ের উপর দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন। স্কুলগুলির তরফে জানা গিয়েছে, অন্য দুই বিভাগের পঠনপাঠন কোনও রকমে চালানো গেলেও বিজ্ঞান বিভাগের পঠনপাঠন চালাতে অসুবিধার মুখে পড়েছে স্কুলগুলি।