সংগৃহীত চিত্র।
পাড়ার চায়ের দোকান, কলেজের ক্যান্টিন বা পাবলিক বাসে, কথাবার্তা বা আড্ডায় অনেক সময়েই ব্যবহার হয় ‘পিরিত’ বা ‘ইন্টুমিন্টু’, ‘জোশ’, ‘খাপ বসানো’-র মতো শব্দ বা শব্দবন্ধ। এ বার সেই সমস্ত চলতি শব্দগুলিকে এক জায়গায় এনে শব্দকোষ বা অভিধান তৈরির গবেষণা শুরু করল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।
১২ জন গবেষক এবং তিন জন অধ্যাপক মিলে খুঁজে আনছেন বাংলা ভাষার বিভিন্ন শব্দ, যা মুখে মুখে প্রচলিত এবং বাংলা ভাষার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সেই সমস্ত শব্দ একত্র করেই অভিধান তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এক বছরের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস বলেন, “আদর্শ চলতি ভাষা থেকে আমরা অনেকটাই সরে এসেছি। সে লেখা হোক বা বলা। বহু নিত্যনতুন শব্দ আমাদের সাহিত্যে এবং গণমাধ্যমে প্রবেশ করেছে। এই সমস্ত শব্দকে একত্রিত করে গবেষণার মাধ্যমে অভিধান তৈরি করা হবে। যার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এমন কিছু শব্দ আছে যা বিভিন্ন সময়ে প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু বাংলা অভিধানে সেই শব্দের কোনও উল্লেখ না থাকায় তার মানে আমরা জানি না।”
অধ্যাপক বিশ্বাস আরও বলেন, “ ‘লুল্লুড়ি’ শব্দটা ইদানীং তরুণ প্রজন্মের মুখে হামেশাই শোনা যায়। কাউকে কারও পছন্দ বোঝাতে হালকা চালে এ শব্দ ব্যবহার হয়। আমরা দুর্ধর্ষ, দারুণের মতো শব্দ শুনে এসেছি। অর্থের পরিবর্তন ঘটে বর্তমানে মুখে মুখে শোনা যায় ‘জোশ’ শব্দটি। আবার গণমাধ্যমের দৌলতে আমরা প্রায় একটা শব্দবন্ধ খুব শুনতে পাই, তা হচ্ছে খাপ বসানো। আসলে ‘খাপ’ শব্দের অর্থ প্রয়োগ। আর এই ‘খাপ’ এর সঙ্গে ‘বসানো’ শব্দটি যুক্ত হয়ে গিয়ে মানে হয়ে গিয়েছে স্বশাসিত বিচার সভা বসানো। রাজস্থানের খাপ পঞ্চায়েত থেকে এই শব্দবন্ধ বাংলায় ব্যবহার শুরু হয়েছে। পুরনো অভিধানে বাংলায় এই ধরনের কোনও শব্দ খুঁজে না পাওয়া গেলেও চলতি ভাষায় এই শব্দের ব্যবহার আমরা প্রায়ই মানুষের মুখে শুনে থাকি।”
এই বিভাগের এক গবেষক জানান, এমন কিছু শব্দ রয়েছে যা ব্যবহারিক প্রয়োগের ফলে তার মানে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন হয়েছে। যেমন, ‘মহাজন’, এই শব্দের অর্থ হল, ‘মহৎ যে জন’। এখন এই শব্দের অর্থ বদলে গিয়ে হয়েছে সুদখোর ব্যক্তি। একই ভাবে ‘গবেষণা’ বলতে বোঝায় ‘গরু খোঁজা।’ আর তার অর্থ বদলে গিয়ে এখন হয়েছে তথ্য -অনুসন্ধানী।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই মাসে প্রয়োগমূলক বাংলা ভাষার উপর তিন দিনের একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে যোগ দেন পবিত্র সরকার, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় -সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এই অভিধান তৈরির গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আরও দুই অধ্যাপক সঞ্জিৎ মণ্ডল ও শ্যামশ্রী বিশ্বাস সেনগুপ্ত বলেন, “কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ভাষার প্রয়োগ ব্যাপারটা পাল্টে যায়। নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়। যেমন, ‘চুলবুলি’ (সুন্দরী), ‘বাওয়াল’ (ঝামেলা), ‘আশিয়া’ (রসিক বন্ধু) ইত্যাদি।
প্রয়োগমূলক বাংলা ভাষা নিয়ে ইতিমধ্যে ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়েছে । খুব শীঘ্রই মউ স্বাক্ষর হবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy