প্রতীকী চিত্র।
‘বৃষ্টি আমার ভাল বন্ধু, কারণ বৃষ্টি অন্যদের আমার কান্না দেখতে দেয় না।’
অবসাদ নিয়ে আলোচনা হয় কম। প্রায় সবটাই থাকে আড়ালে। বাইরে থেকে হাসিখুশি দেখতে লাগে যাঁদের, বই-খাতার আড়ালে তাঁরাই হয়তো গুমরে গুমরে কাটান। যাঁরা একনাগাড়ে গবেষণার কাজ করে থাকেন, তাঁদেরও অবসাদের ঝক্কি পোহাতে হয়। কারণ, এতেও ব্যর্থতার ঝুঁকি রয়েছে। আর ব্যর্থতার হাতে হাত রেখেই হতাশা, অবসাদের পথ চলা। কিন্তু এতে শারীরিক ভাবে তো বটেই, মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েন অনেকে।
বিশ্বজুড়ে ৬ নভেম্বর দিনটি পালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রেস অ্যাওয়ারনেস ডে হিসাবে। এই দিনটিতে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। অথচ প্রতি বছরই বিশ্বজুড়ে কাজের জন্য মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা লক্ষের অঙ্ক ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাসঙ্গিকতা এখানেই। তাই ব্যর্থতা এবং হতাশার অশুভ আঁতাত ভেঙে দেওয়া যায় কী ভাবে, তা নিয়ে একটু আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
মনের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে গবেষকদের যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরি:
১) গবেষণায় ব্যর্থতা থাকবেই এবং সেটাই স্বাভাবিক। এই প্রক্রিয়া এক বার শুরু হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল আশাতীত হয় না। তবে এই ব্যর্থতাই অনেক কিছু শেখার সুযোগ করে দেয়। তাই ভুল হলে ভেঙে না পড়ে বরং কেন হল, কী ভাবে হল- সেটা খুঁজে দেখতে হবে। এই পদ্ধতিকে ‘সট অ্যানালিসিস’ও বলে। অভিজ্ঞ গবেষক কিংবা গাইডের সঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিতে হবে, পরীক্ষা করতে গিয়ে কোন ধাপে কী ভুল হয়েছিল। প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে, কারণ সেটাই গবেষণায় সাফল্যের চাবিকাঠি। কথায় বলে, ‘একবারে না পারিলে দেখো শতবার’। তা নীতিকথার মতো মেনে নিয়ে চলুন। সাফল্য ঠিক আসবে।
২) বারবার ব্যর্থতার শেষে সফল হওয়ার পরে নিজেকেও পুরস্কৃত করুন। এর আগেও এই বিষয়টি বলেছি, নিজের পিঠ নিজেকেই চাপড়াতে হবে। ছোটখাটো সাফল্য উপভোগ করতে কোনও দ্বিধা বোধ করলে চলবে না।
৩) তবে, ব্যর্থতার শিক্ষা পাওয়ার পরে সেটা শুধু নিজের মধ্যে রাখলে চলবে না। নিজের জুনিয়র বা অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গেও সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া অভ্যাস করুন। এতে তাঁরা যেমন নতুন কিছু শিখবেন, তেমনই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গবেষণার বিষয়ে নতুন কিছু আপনিও জানার সুযোগ পেতে পারেন। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক অপ্রত্যাশিত ফলাফলই যুগান্তকারী আবিষ্কারের নেপথ্য কারিগর হিসাবে পরিচিত হয়েছে। তবে, এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। জার্নালে সাধারণত গবেষণার ব্যর্থতা কিংবা তার নেতিবাচক ফলাফল ছাপতে উৎসাহ বোধ করে না। তাই অনেক সম্ভাবনাময় বিষয় আলোচনার আড়ালেই থেকে যায়।
৪) কাঙ্খিত ফলাফল না পেলে মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেটাকে আকঁড়ে ধরে থাকলে চলবে না। বরং সেই সময়ে একটা ভাল মুহূর্তের কথা চিন্তা করুন। কোনও একটি সময়ের কথা, যখন আপনি খুব আনন্দে ছিলেন, তার কথা ভাবতে থাকুন। দেখবেন অনেকটা ভাল লাগবে। এ ক্ষেত্রে কিছুক্ষণ সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেও ক্ষতি নেই।
৫) কাজের ক্ষেত্রে অন্যকে অনুসরণ করুন। অনুকরণের প্রবণতা থেকেই বেরিয়ে আসুন। হাতের ছাপের মতো প্রত্যেকের ভাবনাও আলাদা। তাই যে ভাবে কাজটি করে অন্য কেউ সফল হচ্ছেন, তাতে আপনি ব্যর্থও হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে সেই সমস্যাগুলির সমাধান করুন। তাতেই দেখবেন কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারছেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যর্থ হওয়া বহু মানুষই পরে চরম সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিদেশের বিজ্ঞানী নিউটন, এডিসন, ফিনম্যান থেকে শুরু করে এই দেশের রামানুজন— এমন অনেক স্বনামধন্য বিজ্ঞানীই স্কুলের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল থাকায় পরবর্তীকালে এঁরাই বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে সুনাম অর্জন করেছেন।
[লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান]
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy