Advertisement
১৬ অক্টোবর ২০২৪
Stress management advice

ত্বকের যত্ন নিন! গবেষণার সঙ্গে নিজের খেয়াল রাখবেন কী ভাবে?

ছোট ছোট সাফল্যের জন্য অন্যের প্রশংসার অপেক্ষায় না থেকে নিজের পিঠটা নিজেকেই চাপড়াতে হবে।

Self-care.

প্রতীকী চিত্র।

ইন্দ্রনীল সামন্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৩৮
Share: Save:

নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন কী ভাবে? এই প্রশ্নের নানা রকম জবাব হতে পারে। তবে এই বিষয়ে নিজের মতামত লিখতে বসেই একটি বিখ্যাত গানের কয়েকটি লাইন মনে পড়ে গেল।

“কুচিকুচি করে কেটে শসা

বেসন দুধেতে নিন গুলে,

ফিরে যাবে চামড়ার দশা

রাত্রে লাগিয়ে গালে শুলে।”

এই গানে গায়ক বাহ্যিক রূপের যত্ন নেওয়ার কথা বললেও গবেষকদের ক্ষেত্রে মনের যত্ন নেওয়াটাও ভীষণ ভাবে প্রয়োজন। গবেষণা ম্যারাথনের মতো, শেষ করতে লাগে প্রচুর এনার্জি। সঙ্গে পদে পদে ধাওয়া করতে থাকে ব্যর্থতার আশঙ্কাও। এ হেন পরিস্থিতিতে ভাঙা মন জোড়া দিতেও দরকার পজিটিভ এনার্জি বা ‘শক্তি’। এই ‘শক্তি’ না থাকলে কিন্তু গবেষণার কাজ করতে গিয়ে প্রতি পদেই উৎসাহ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। কিন্তু এই ‘শক্তি’ কী ভাবে তৈরি করা যেতে পারে? কী ভাবে হাজারটা কাজের মাঝে নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব?

যোগাযোগ রাখতে হবে সবার সঙ্গে:

নেটিজেনদের ভাষায় ‘স্টে কানেক্টেড’ নামক একটি শব্দবন্ধনী এ প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক। গবেষকদের স্ট্রেস নিয়ে প্রকাশিত গবেষণায় এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যোগাযোগের জন্য সবার আগে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা খুব প্রয়োজন, যাতে যে কোনও ধরনের ব্যর্থতার কষ্টে উপশম সহজেই মেলে। এ ছাড়া চাই ভাল বন্ধু কিংবা সহকর্মী, যাঁরা কাজের প্রশংসার পাশাপাশি কোনও ভুল হলেও ধরিয়ে দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে এই ধরনের সমালোচনা গবেষকদের মানসিক দিক থেকে সুস্থ রাখে।

Self Care.

হালকা ব্যায়াম করা ভাল। ছবি: সংগৃহীত।

শরীরচর্চা খুব প্রয়োজন:

‘ব্যায়ামবীর বা অভিনেতাদের কাজের প্রয়োজনে ব্যয়াম করতে হয়, আমাদের তো মাথার কাজ, ব্যায়াম করার কী দরকার?’ এই ধারণা ভ্রান্ত। নিজেকে সুস্থ এবং সবল রাখতে প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটতে হবে। প্রয়োজনে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে হবে। কারণ শারীরিক কসরতের কারণে শরীরে এমন কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসৃত হয়, যা মস্তিস্কের কোষগুলিকে সজীব ও সজাগ রাখে। স্মৃতিশক্তির উন্নতিতেও ব্যায়ামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

শখের কাজে ব্যস্ত থাকুন:

এর আগে কী ভাবে সময় বাঁচাতে হবে, তা নিয়ে লিখেছিলাম। এ বার সেই বেঁচে যাওয়া সময়কে কী ভাবে কাজে লাগাতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা দরকার। গবেষকদের শখের কাজ করাও প্রয়োজন। এর মধ্যে বাগান করা (ছাদ বাগানও হতে পারে), পোষ্যের সঙ্গে খেলা, গবেষণা জগতের বাইরের বন্ধুর সাথে নির্ভেজাল আড্ডা, কাজের বইপত্র সরিয়ে রেখে অন্য কোনও বই পড়া, গান শোনা (মেটালিক রক থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত— যেটা আপনার পছন্দ), মন খুলে হাসাহাসি, মাঝে মাঝে কাছে-দূরে ঘুরতে যাওয়ার মতো কাজও পড়ে।

ফোন নৈব নৈব চ:

এই ধরনের অভ্যাসই গবেষণার অতিরিক্ত স্ট্রেস দূর করতে এবং ‘শক্তি’ ফিরিয়ে আনতে আনতে সাহায্য করবে। যখন শখের সময় কাটাচ্ছেন, সেই সময়ে ফোনের নেট বন্ধ রাখুন, প্রয়োজনে ফ্লাইট মোডে রাখা যেতে পারে। তবে, মিসড কল এলার্টের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে, যাতে কোনও জরুরি ফোন এলে সে বিষয়টি চট করে জানা যাবে।

Self Care.

ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য ব্যবহার না করাই ভাল। ছবি: সংগৃহীত।

খাবারে বিশেষ নজর:

তবে, শখের কাজে সময় কাটালেই চলবে না। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের একটি রুটিন মেনে চলতে হবে। উৎসবে কিংবা আড্ডায় নিশ্চয়ই অল্পবিস্তর ফাস্ট ফুড চলতেই পারে। তবে, প্রতিদিনের তালিকায় ঘরে তৈরি খাবার থাকতেই হবে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া এবং ঘুম সম্পূর্ণ করতেই হবে। যতই কাজের চাপ থাক, এই রুটিন মেনে চলা জরুরি।

তবে, পৃথিবীর অন্য প্রান্তে গেলে প্রথম এক-দুই দিন ভাল করে বিশ্রাম নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। নতুন সময়ের সারণীতে শরীরকে ধাতস্থ করতে সময় লাগে। আলাদা সময় সারণীতে থাকার সময় গবেষকের সাথে প্রতিদিন বৈঠক করতে হয় অনেক ক্ষেত্রেই। তাতে ঘুমের ক্ষেত্রে অনিয়ম হতে পারে। তাই, সেই ঘাটতি কাজের ফাঁকেই মিটিয়ে নিতে হবে সময় অনুযায়ী।

নিজেকে ভালবাসুন:

নিজেকে বাহবা দিতে হবে। ছোট ছোট সাফল্যের জন্য অন্যের প্রশংসার অপেক্ষায় না থেকে নিজের পিঠটা নিজেকেই চাপড়াতে হবে। ভাল কাজের ফলস্বরূপ এক দিন সিনেমা দেখা কিংবা নিজেকে উপহার দেওয়া যেতেই পারে। সোলো ডেট-ও চলতেই পারে।

ইতিবাচক ‘শক্তি’ সঞ্চয় করতে অনেকটা সময় লাগলেও এর ফলাফল কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি। নিজেকে সুস্থ এবং সবল রাখতে এই ‘শক্তি’ই পরবর্তীতে অনেকটা সাহায্য করে থাকে। তাই ত্বকের তো বটেই, নিজের যত্নে এই ‘শক্তি’-র প্রভাব অপরিহার্য।

[লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান]

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE