আয়ুর্বেদ কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ থেকে। সময়ের সঙ্গে উন্নত হয়েছে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ক্যানসারের মতো মারণব্যাধিও এখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার সাহায্যে নির্মূল করা যাচ্ছে। স্বভাবতই এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ঝোঁকও বাড়ছে। ভারতীয় আয়ুষ মন্ত্রালয়ের তরফ থেকে এই বছর সপ্তম আয়ুর্বেদিক দিবস পালন করা হচ্ছে ২৩ অক্টোবর।

একনজরে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিদ্যা
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হতে প্রথমে এক জন শিক্ষার্থীকে বিএএমএস (ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদ মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি) পাশ করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিএএমএস পড়ানো হয়:
- জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল, কলকাতা।
- রঘুনাথ আয়ুর্বেদিক মহাবিদ্যালয় ও হসপিটাল মেদিনীপুর।
- রাজীব গান্ধী মেমোরিয়াল আয়ুর্বেদ কলেজ ও হসপিটাল, বেলি শঙ্করপুর।
এ ছাড়াও, আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে আয়ুর্বেদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি পড়ানো হয়।

প্রতীকী ছবি
একনজরে দেখে নিন, বিএএমএস পড়তে কী যোগ্যতা প্রয়োজন:
- শিক্ষার্থীর দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়গুলি থাকতে হবে।
- শিক্ষার্থীকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
- শিক্ষার্থীকে বিএএমএস পড়ার জন্য নিট ইউজি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতেহয়। এবং পরীক্ষার পর মেধা তালিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াযায়।
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়সের পরিমাপ কাঠি নির্ধারিত না থাকলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়ঃসীমা নির্ধারিত করা থাকে বিএএমএস পড়ার জন্য।
বিএএমএস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া:
বিএএমএস পড়ার জন্য অতি অবশ্যই শিক্ষার্থীকে নিট প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশকরতে হয়। এর পর মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে মেধার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধাপে শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়ে থাকে।
বিএএমএস কোর্সে মূলত কী কী বিষয় পড়তে হয়:
এক বছরের ইন্টার্নশিপ সহযোগে মোট সাড়ে পাঁচ বছরের বিএএমএস কোর্স হয়। ইন্টার্নশিপ ছাড়া সাড়ে চার বছরের এই কোর্স বিভক্ত থাকে তিন ভাগে। প্রতিটি ভাগের সময়সীমা দেড় বছর করে ধার্য।
প্রথম বর্ষে যে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে, সেগুলি হল:
- আয়ুর্বেদ পদ্ধতির ইতিহাস (হিস্ট্রি অফ আয়ুর্বেদিক সিস্টেম)
- আয়ুর্বেদের মৌলিক নীতি (বেসিক প্রিন্সিপ্যালস অফ আয়ুর্বেদ)
- অ্যানাটমি
- ফিজিওলজি
দ্বিতীয় বর্ষে যে বিষয়গুলি থাকে:
- টক্সিকোলজি
- ফার্মাকোলজি
- আয়ুর্বেদিক ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স
তৃতীয় বর্ষে যে বিষয়গুলি থাকে:
এটি শেষ বর্ষ। এরপর শিক্ষার্থীদের এক বছরের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। তৃতীয়বর্ষে মূলত আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
- মডার্ন অ্যানাটমি
- অস্ত্রোপচারের নীতি (প্রিন্সিপ্যাল অফ সার্জারি)
- ইএনটি
- স্কিন
- প্রসূতিবিদ্যা (অবস্ট্রেট্রিক)
- স্ত্রীরোগবিদ্যা (গায়েনোকলোজি)
- পেডিয়াট্রিক্স
- অভ্যন্তরীণ ঔষধ (ইন্টারনাল মেডিসিন)
বিএএমএস পাশের পর কাজের কী কী ক্ষেত্র রয়েছে:
আগে বিএমএমএস স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র দু’টি ক্ষেত্র ছিল। শিক্ষার্থীকে নয় বিএমএমএস পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার আবেদন করতে হত, আর নাহলে, নিজস্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলে অনুশীলন শুরু করতে পারতেন। তবে, এখন বিএমএমএস পাশের পর আয়ুর্বেদ স্নাতকদের কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই বেড়েছে বিএমএমএস পাশ শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ। যে সকল সরকারি এবং বেসরকারি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থীরা আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিশেষজ্ঞ পদে নিযুক্ত হতে পারেন। সাস্থ্য সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে নিযুক্ত যে সকল শিল্প সংস্থাগুলি রয়েছে, সেই সংস্থাগুলিতেও এক জন শিক্ষার্থী বিএমএমএস কোর্স সম্পূর্ণ করে কাজে নিযুক্ত হতে পারেন। বিএমএমএস স্নাতক শিক্ষার্থীরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, মেডিক্যাল এক্সিকিউটিভ, ফার্মাসিস্ট এর মতো পদে নিযুক্ত হয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।