প্রতীকী ছবি।
চিকিৎসা পরিষেবায় কাজ করার স্বপ্ন বহু পড়ুয়াই দেখে থাকেন। সেই কারণে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই তাঁরা ব্যাচেলর অফ মেডিসিন, ব্যাচেলর অফ সার্জারি অর্থাৎ এমবিবিএস ডিগ্রির অধীনে স্নাতকস্তরে পড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ডিগ্রি কোর্সে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর কোন বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার পথে এগোবেন, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলতে থাকে।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি, স্নাতকস্তরেই ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান পড়ুয়ারা। কিন্তু পড়া চলাকালীন অনেক পড়ুয়াই এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে থাকেন। কেন এমবিবিএস ডিগ্রিতে পাঠরত পড়ুয়াদের ইন্টার্নশিপ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেই বিষয়ে রইল রাধা গোবিন্দ কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল (আরজিকর)-এর কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তথা চিকিৎসক সুমন চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ।
প্রশ্ন: কাজ শেখার সঙ্গে পাঠক্রম থেকে আহরণ করা জ্ঞানের সম্পর্কটা কেমন?
সুমন চট্টোপাধ্যায়: ক্লাসরুমে কিংবা গবেষনাগারে যে বিষয়গুলি শেখানো হচ্ছে, পাঠ্যবইয়ের সেই জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে কী ভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন কিংবা উচিত, সেই বিষয়ে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। হাতে কলমের কাজ করার মাধ্যমে কঠিন বিষয়গুলি যেমন সহজ হয়ে ওঠে, তেমনই রোগী সেবার ক্ষেত্রে বই থেকে শিখে নেওয়া কোন কোন নিয়মগুলি প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সেই বিষয়গুলি আয়ত্ত করা সম্ভব।
প্রশ্ন: দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কী ভাবে সাহায্য করে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ?
সুমন চট্টোপাধ্যায়: যে কোনও পেশায় প্রবেশের আগে দক্ষ হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষত, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তাই এ ক্ষেত্রে পড়াশোনা চলাকালীন ইন্টার্নশিপ করলে পড়ুয়াদের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার দক্ষতা বাড়বে। একইসঙ্গে ক্লাসরুমের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের বাইরে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞাপন অর্থাৎ কমিউকেশন আরও সরল করে তোলা সম্ভব। এক জন পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মী হওয়ার নেপথ্যে ইন্টার্নশিপ থেকে অর্জিত দক্ষতার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: যে কোনও একটি বিভাগেই কী প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকে?
সুমন চট্টোপাধ্যায়: নির্দিষ্ট বিষয়ের ঘেরাটোপের বাইরে স্পেশালাইজ়্ড ক্ষেত্রে ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করতে পারার বাড়তি সুবিধা রয়েছে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের সীমাবদ্ধতা থাকলে, কাজের ক্ষেত্রে তেমন প্রতিবন্ধকতা থাকে না। পেশাদার হিসাবে প্রশিক্ষণ চলাকালীন বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে কাজ করা, কিংবা বিভিন্ন ধরনের রোগীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রে উদাহরনস্বরূপ বলা যেতেই পারে, মেডিসিন বিভাগের পড়ুয়ারা ইন্টার্নশিপ চলাকালীন অনায়াসেই কার্ডিওভাসকুলার বিভাগের কর্মপদ্ধতি শিখে ফেলতে পারবেন। এতে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার সাহস যেমন বাড়বে, তেমনই নিজের পেশাদার জীবনকে আর দৃঢ় করে তোলা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে যোগাযোগ দৃঢ় করা কী প্রয়োজন?
সুমন চট্টোপাধ্যায়: স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে যোগাযোগ মজবুত করা ভীষণ প্রয়োজন। নির্দিষ্ট পরিসরে থেকে শুধুমাত্র নিজের কর্তব্যটুকু করলে পেশাদার হিসেবে দক্ষ হওয়া যথেষ্ট কঠিন। এ ক্ষেত্রে এমবিবিএস পড়ার সময়ই ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ, কর্মী কিংবা আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার অবকাশ রয়েছে। এতে কাজের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সুবিধে তো হয়েই থাকে, পাশাপাশি, পেশাদার হিসেবে রোগীদের কাছেও পরিচিতি বাড়ে।
প্রশ্ন: এই পেশায় মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক ইন্টার্নশিপ?
সুমন চট্টোপাধ্যায়: স্বাস্থ্য পরিষেবায় পেশাদার জীবনের উন্নতির পাশাপাশি, ভাবনা এবং চেতনার উন্নতি হওয়াটাও সমান ভাবে প্রয়োজন। কারণ বিভিন্ন আর্থ সামাজিক পরিসরের রোগীরা পরিষেবা নেওয়ার আশায় হাসপাতালে উপস্থিত হন, এবং স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিরপেক্ষ ভাবে পরিষেবা দেওয়াটা ভীষণ প্রয়োজন। এমবিবিএস চলাকালীন যে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাতে শিক্ষার্থী থেকে পেশাদার হয়ে ওঠার পাশাপাশি, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর ক্ষেত্রে অনেকটাই সহায়ক হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞের মতে, এমবিবিএস প্রোগ্রামের শিক্ষাবর্ষে ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের এক জন দক্ষ এবং সহানুভূতিশীল পেশাদার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। এই বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ, দক্ষতার উন্নতি ঘটে, যা তাঁদের সামগ্রিক ভাবে অভিজ্ঞ করে তোলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy