দুই নেট-এ বিভ্রান্তি? সংগৃহীত ছবি
স্কুলের থেকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বাদ একেবারেই অন্যরকম। প্রিয়ধ্যাপকের মতো কী ভাবে কোর্সের দুরূহ পাঠ্য বিষয়গুলি আরো সহজ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের বোঝানো যায়, কী ভাবে তাঁদের মধ্যে আরও অনুসন্ধিৎসু মন তৈরী করা যায়, তারই নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে হয় অধ্যাপকদের। তাই এ ক্ষেত্রে পড়ানোর কাজটি আরও বেশ খানিকটা কঠিনই বলা চলে। তবে তা সত্ত্বেও কাজটি যে খুবই আকর্ষণীয়, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার ও বেশ কিছু এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করার প্রয়োজনীয়তা থাকে।
আমাদের দেশে যাঁরা কলা ও বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক/ স্নাতকোত্তর এবং যাঁরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় স্নাতক/ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দু'টি পৃথক যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা দিতে হয় কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য। দু'টিই জাতীয় স্তরের পরীক্ষা। পরীক্ষা দু'টির নামও প্রায় এক-- একটি হল ইউজিসি নেট, অপরটি হল সিএসআইআর নেট। একই ধরনের নাম শুনে অনেকের মনেই নানা বিভ্রান্তি জাগে। তাঁদের সেই বিভ্রান্তি দূর করতেই এই প্রতিবেদনের অবতারণা। দু'টি পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই লেখায়।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ইউজিসি নেট পরীক্ষাটি কি?
নেট পরীক্ষাটি হল ভারতবর্ষের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে নিয়োজিত 'অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' ও 'জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' পদের জন্য যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা। এটি একটি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যেটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ। প্রতি বছর নেট পরীক্ষাটি গোটা দেশে আয়োজনের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এনটিএ-র হাতে তুলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে নেট পরীক্ষাটি একটি কম্পিউটার বেসড টেস্ট অর্থাৎ পরীক্ষাটি কম্পিউটারে অনলাইন মাধ্যমেই নেওয়া হয়।
এই পরীক্ষাটি সাধারণ ভাবে প্রতি বছর দু'বার করে নেওয়া হয়। কিন্তু অতিমারির কারণে ২০২১-এর ডিসেম্বরের নেট পরীক্ষাটি পিছিয়ে যায় এবং তার ফলে ২০২২-এর জুনের নেট পরীক্ষাটির সময়ও আরও পিছোতে হয়। এর ফলে বছরের দু'বার নেট পরীক্ষার যে ব্যবস্থা ছিল, সেটিকে আবার সঠিক ভাবে চালু করতে এই বছর চলতি মাসেই একটি সম্মিলিত নেট পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই বারের সম্মিলিত নেট পরীক্ষাটি গোটা দেশের মোট ৫৪১টি পরীক্ষাকেন্দ্রে নেওয়া হবে। এ ছাড়াও এই বারের পরীক্ষায় মোট ৮২টি বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এবার আসা যাক সিএসআইআর নেট পরীক্ষার বিষয়ে। জেনে নেওয়া যাক এই পরীক্ষাটি ঠিক কীরকম।
কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্থাৎ সিএসআইআর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সুপরিচিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শাখার প্রায় সমস্ত বিষয়ই, যেমন-- সমুদ্রবিজ্ঞান, ভূপদার্থবিদ্যা, রাসায়নিক,ওষুধ, জেনোমিক্স, জৈব প্রযুক্তি, ন্যানো প্রযুক্তি, খননবিদ্যা, এরোনোটিক্স, ইন্সট্রুমেন্টেশন, পরিবেশ সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি সিএসআইআর-এর অধীনস্থ। সিএসআইআর সমাজের যে কোনও ক্ষেত্রে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, খাদ্য, বাসস্থান, বিদ্যুৎ, কৃষিজাত দ্রব্য বা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে যদি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়, তা হলে এগিয়ে আসে।
এই জন্য সিএসআইআর ইউজিসির সঙ্গে যৌথ ভাবে বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বা বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে নানারকম গবেষণার জন্য রিসার্চ ফেলোশিপের ব্যবস্থা করে। সিএসআইআর ইউজিসি নেট ফেলোশিপটিও সে রকমই একটি কার্যক্রম, যার দ্বারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে মানুষের উন্নয়নের চেষ্টা চালানো হয়। প্রতি বছরই এই পরীক্ষাটি বছরে দু'বার করে অনুষ্ঠিত হয়। জুন ও ডিসেম্বরে আয়োজিত এই পরীক্ষায় বহু ছাত্রছাত্রী পাশ করে জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপও অর্জন করেন। এটিও একটি যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ' ও 'লেকচারশিপ/ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' পদে নিয়োগ করা হয়। এই পরীক্ষাটিও অনলাইনে কম্পিউটারের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এই বছর ২২৫টি শহরের পরীক্ষাকেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে মোট পাঁচটি বিষয়ের উপর।
এ বার আসা যাক, এই দু'টি পরীক্ষার মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায় সেই প্রসঙ্গে।
ইউজিসি নেট ও সিএসআইআর নেট-এর পার্থক্য
ইউজিসি নেট পরীক্ষাটি মূলত যাঁরা কলা বা বাণিজ্য বিভাগের কোনও বিষয় নিয়ে পড়েছেন, তাঁদের মূল্যায়নের একটি পরীক্ষা। এই যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষার মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা ভারতের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে 'অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' ও 'জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' পদে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পান।
অন্য দিকে সিএসআইআর নেট পরীক্ষাটি নেওয়া হয় মূলত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য। এই পরীক্ষাটিও একটি যোগ্যতা নির্ণায়ক জাতীয় স্তরের পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য প্রার্থীদের 'অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' ও 'জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর' পদে নিযুক্ত করা হয়।
এ ছাড়াও এদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আছে। সেগুলি হল--
১. ইউজিসি নেট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের শুধু গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি থাকলেই হয় না, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পড়াশুনো করলে বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ হলে এই পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা অর্জন করা যায়। অন্য দিকে সিএসআইআর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের শুধু মাত্র এমএসসি বা সমতুল ডিগ্রি থাকলেও চলে। না হলে চার বছরের বিএস ডিগ্রি/ বিএস এমএস ইন্টিগ্রেটেড ডিগ্রি/ বিই/ বিটেক/ বিফার্ম/ এমবিবিএস ডিগ্রি থাকলেও পরীক্ষা দেওয়া যায়।
২. ইউজিসি নেট জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পদের জন্য পরীক্ষার বয়স ধার্য করেছে সর্বনিম্ন ৩১ বছর। অন্য দিকে সিএসআইআর নেট জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পদের জন্য পরীক্ষার্থীদের বয়স সর্বনিম্ন ২৮ বছর ধার্য করেছে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই লেকচারশিপ/ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের জন্য বয়সের কোনও ঊর্ধ্বসীমা ধার্য করা হয়নি।
৩. ইউজিসি নেট পরীক্ষায় দু'টি পেপারের জন্য পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু সিএসআইআর নেট পরীক্ষায় শুধু একটিই পেপার থাকে, যাতে 'এ', 'বি', ও 'সি' তিনটি ভাগ থাকে।
দু'টি পরীক্ষার কোনটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ও সমস্ত তথ্য জেনে নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy