প্রতীকী ছবি।
মা বাবার সঙ্গে সন্তানের মুখের মিল রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে জানতে চান অনেকেই। কিন্তু কেন মিল থাকে, বা থাকে না, তা জানতে চান কত জন? এই বিষয়ে জানতে হলে পড়তে হবে আধুনিক বংশগতিবিজ্ঞান, যার পোশাকি নাম জেনেটিক্স। মানবশরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জৈবিক পদার্থ জিন, যা এক একজন মানুষকে শারীরিক, মানসিক ভাবে একক করে তোলে, সেই জিন নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে পড়তে হবে জেনেটিক্স।
জীববিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে এই জেনেটিক্সকে। মানুষ অন্যান্য প্রাণীর থেকে কতটা উন্নত, কিংবা কী ভাবে বংশপরম্পরায় জিনগত পরিবর্তন হয়ে চলে একই পরিবারের কিছু সদস্যদের মধ্যে — এই সমস্ত কিছুর রহস্য লুকিয়ে এই ‘বিশেষ’ বিষয়ে।
এবার রহস্যের পর্দা সরিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাইলে গোড়া থেকে কিছু বিষয় জেনে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার, এই জেনেটিক্স তথা বংশগতি বিজ্ঞানের উদ্ভাবক কে ছিলেন? কে প্রথম প্রশ্নটি করেছিলেন, যে সবাই একরকম কেন নয়?
আবিষ্কারকদের কথা:
উত্তরটা একটি মাত্র শব্দে দেওয়া মুশকিল। কারণ আবিষ্কার কখনও কোনও একক বিজ্ঞানী বা গবেষকের প্রচেষ্টায় হয় না। তবে মূল ভাবনাটি প্রথম ধরা পড়েছিল অস্ট্রিয়ান সাধু তথা বিজ্ঞানী গ্রেগর মেন্ডেলের গবেষণায়। তিনি মটরশুটির জৈবিক পরিবর্তনের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে বংশগতির অস্তিত্ব সম্পর্কে সিলমোহর দিয়েছিলেন।
যদিও এই পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল উনিশ শতকের গোড়ায় প্রকাশিত হলেও বিংশ শতক পর্যন্ত গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেনি। এর পরবর্তী সময়ে মেন্ডেলের গবেষণাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর পর বিজ্ঞানী থমাস হান্ট মর্গান জিন এবং ক্রোমোজোমের সংযোগের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এর পরই আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার পরিকাঠামো শুরু হয় ধীরে ধীরে।
পড়াশোনার ইতিবৃত্ত:
বংশগতি নিয়ে বিগত কুড়ি বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে অনেক যুগান্তকারী বিষয় প্রকাশিত হয়েছে। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। দ্বাদশ শ্রেণি পরবর্তী পর্যায় থেকেই জেনেটিক্স নিয়ে যাতে পড়ার সুযোগ পান, সেই বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। তাই স্নাতকস্তরেই বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে জেনেটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন আগ্রহী শিক্ষার্থীরা।
তবে এই ক্ষেত্রে তাঁদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিদ্যা থাকা প্রয়োজন। কিছু কিছু কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জেনেটিক্সে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষারও ব্যবস্থা করে থাকে, সেই পরীক্ষাতে পড়ুয়াদের উত্তীর্ণ হওয়াও প্রয়োজন রয়েছে।
যাঁরা এর পর স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করতে চান, সেক্ষেত্রে স্নাতকস্তরের পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬০ শতাংশ নম্বর থাকা প্রয়োজন। জেনেটিক্স ছাড়া জীববিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, ‘প্যারা মেডিক্যাল সায়েন্সেস’, ‘কেমিক্যাল সায়েন্সেস’, ‘ম্যাথামেটিক্যাল সায়েন্সেস’, ‘ফিজিক্যাল সায়েন্সেস’ এবং ‘ফার্মাকোলজি’ বিষয়ে স্নাতকোত্তীর্ণ পড়ুয়ারাও এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী ধাপে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।
কাজের সুযোগ?
বংশগতি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি জীবন বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে শুরু হতে পারে। খুব সহজে বোঝাতে, এটা বলা যেতে পারে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিল্পে এই বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরদের বিপুল চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন সংরক্ষিত অরণ্য, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পশু প্রজননকারী তথা অ্যানিমেল ব্রিডার হিসেবে কাজের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই কোনও স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা, শিক্ষকতার পেশাতেও চাকরি পেতে পারেন। পাশাপাশি, জেনেটিক কাউন্সেলর হিসেবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় থেকে পরিষেবা দেওয়ার কাজও মিলতে পারে।
তাই বংশগতি সম্পর্কে যদি আগ্রহ থেকে থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষানবিশি বা ইন্টার্নশিপ করে বিষয়ের গভীরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া যেতেই পারে। এতে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য, কৃষিব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশায় প্রবেশের সুযোগ সহজেই পাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy