উচ্চমাধ্যমিকের পরেই বেছে নিন পছন্দের পেশার বিষয়। ছবি: সংগৃহীত
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পরে বহু পড়ুয়ারাই নিজেদের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে, তার একটা ছক কষে নিতে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই স্বপ্নের সঙ্গে কাঙ্খিত নম্বর মিলে না যাওয়ায় কিছু গতানুগতিক বিষয়ের পথ বেছে নেন তারা। ফলে পছন্দের পেশাতে তাঁদের কাজ করা হয়ে ওঠে না। আনন্দবাজার অনলাইন বলছে, এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাই নবীন কলেজ পড়ুয়াদের জন্য রইল বেশ কিছু ভিন্ন ধারার বিষয়ের নিয়ে তথ্য, যা তাদের স্বপ্নপূরণের পথ সুগম করে তুলতে পারে।
১. ভ্রমণ এবং পর্যটন ব্যবস্থাপনা
ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে পর্যটন শিল্পের প্রসার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাই ভ্রমণ এবং পর্যটন শুধুমাত্র মানুষের কাছে আর অবসরযাপনের পন্থা হিসেবে সীমিত নেই। বিনোদন এবং বাণিজ্যের একটা বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বিভিন্ন বহুজাতিক ট্রাভেল সংস্থায় ট্যুর গাইড, কনসাল্ট্যান্ট, এজেন্ট, পোর্টার, ফটোগ্রাফার, ম্যানেজারের মত পেশার চাহিদা রয়েছে দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমনের ভালো অভিজ্ঞতা দেওয়ার স্বার্থে। ঘুরতে ভালোবাসা, ভ্লগিং করা যদি আপনার পছন্দের বিষয় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার পছন্দের এই বিষয়টিকে পেশার রূপ দিতে পারেন। সাধারণতঃ তিন বছরের কোর্স হিসেবেই কলকাতা-সহ রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।
২. ফ্যাশন ডিজ়াইনিং
সাজপোশাকের বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই যদি আপনি সতর্কতা বজায় রেখে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজ়াইনিং নিয়ে পড়াশোনা আপনাকে পেশাদার করে তুলতে পারে। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোন পোশাকে কোন ডিজ়াইন ভালো হতে পারে, কোন নকশায় কোন রঙের ফ্রেবিক ফুটে উঠবে, সাধারণতঃ এই সমস্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ স্নাতকস্তরে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করতে হলে ফর্ম ফিলআপের পর একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়, যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেলে পড়ার সুযোগ। এনআইএফটি-র কলকাতা শাখায় এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। এছাড়া কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কিছু স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।
৩. অ্যানিমেশন ডিজ়াইনিং
অ্যানিমেশন বহু পড়ুয়ার অবসরযাপনের প্রিয় সঙ্গী। জীবজন্তু, প্রাণীজগৎ থেকে মানুষ, কত কী-ই না কার্টুনের মাধ্যমে উপভোগ করি আমরা। কিন্তু এর নেপথ্যের রহস্য জানতে, অনেকেই চান এই বিশেষ বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করতে। এই বিশেষ বিষয়টির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের শাখা রয়েছে কাজের চাহিদার নিরিখে। যাঁরা ‘এভেন্জারস’ সিরিজের ‘থানোস’ বা ‘মক্খি’ সিনেমার মাছিকে দেখে অবাক হয়েছেন, তাঁদের জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, যে ওই চরিত্রগুলি পূর্ণতা পেয়েছে সিজিআই-এর মাধ্যমে, যা আদতে অ্যানিমেশন ডিজাইনিংয়ের অঙ্গ। তাই যাঁরা অ্যানিমেশন নিয়ে জীবনে এগোতে আগ্রহী, তাঁদের কাছে পড়াশোনার পর বহুজাতিক সংস্থার পাশাপাশি, সিনেমার মত শিল্পের সঙ্গেও পেশাদার জীবন শুরু করার সুযোগ রয়েছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কিছু স্বীকৃত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।
৪. ডেটা অ্যানালিটিকস
বহু পড়ুয়াই পড়াশোনা সংক্রান্ত ডেটা সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেন। সেই ডেটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আরও ভালো ভাবে পড়াশোনা করার অভ্যাস রয়েছে তাঁদের। যে কোনও গতানুগতিক বিষয় নিয়ে পড়ার পাশাপাশি, সেই সমস্ত পড়ুয়ারা ডেটা অ্যানালিটিকসের কোর্স করে নিতেই পারেন স্নাতকস্তরে। কারণ এই বিশেষ বিষয়টি এখনও পর্যন্ত কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পড়ানো হয়ে থাকে না। তবে দেশজুড়ে আইআইটি-সহ কলকাতার বিভিন্ন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পড়া শেষ করে শংসাপত্র পাওয়ার পর বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থায় চাকরির পরীক্ষার জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কোর্স শেষে দ্রুত চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
৫. ফটোগ্রাফি
বহু পড়ুয়ার ছবি তোলার শখ থাকে। ভারতবর্ষে ফটোগ্রাফার তথা চিত্রগ্রাহকের চাহিদা রয়েছে বিভিন্ন স্তরের পেশায়। সিনেমা থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যম, প্রশাসনিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত পরিসর - সমস্ত ক্ষেত্রেই ছবি এবং ছবিওয়ালার চাহিদা তুঙ্গে। তাই ছবি তোলার প্রতি আগ্রহ থাকলে বা এই বিষয়টিকে নিয়ে পেশাদার জীবনে এগোতে চাই কলকাতা শহরের দু’টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখান থেকে ডিপ্লোমা এবং ডিগ্রি কোর্সে পড়াশোনা করে ফটোগ্রাফিকে পেশা করার সুযোগ রয়েছে। দ্য ইন্ডিয়ান ইন্সিটিটউট অফ ডিজিটাল আর্ট এন্ড অ্যানিমেশনের তরফে তিন বছরের বিএসসি ডিগ্রি এবং এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। অন্য দিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফটোগ্রাফির তরফে রয়েছে তিনটি আলাদা শাখায় ডিপ্লোমা করার সুযোগ। তবে এই পেশায় শুধুমাত্র শংসাপত্রের উপর ভিত্তি করে থাকলে চলবে না। নিজস্ব ভাবনার প্রসার ঘটাতে না পারলে, পেশাদার জীবনে সাফল্য পাওয়া বা টিকে থাকা বেশ মুশকিল।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্সের উত্থানের কারণে পড়ুয়াদের শুধুমাত্র পড়াশোনার উপর ভিত্তি করে পেশাদার জীবনে প্রবেশের পথ খুলে যাওয়ার অপেক্ষা করলে চলবে না। এর পাশাপাশি, পেশাদার কোনও বিষয়ে জ্ঞান এবং স্বীকৃতি থাকলে তাঁদের পেশায় ভবিষ্যতের পথ সুগম হবে। সেক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের পরবর্তী স্তর থেকে যখন পড়ুয়ারা ভিন্নধারার বিষয় নিয়ে চর্চা শুরু করতে থাকেন, তখন তাঁদের চাকরি নিয়ে আলাদা করে দুশ্চিন্তা থাকে না। তাই নবীন স্নাতকদের জন্য রইল আগাম শুভেচ্ছা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy