গত ১৪ এপ্রিল তিনশোর বেশি মেয়ে নাইজেরিয়ার চিবোক শহরে এক বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহৃত হয়, কারণ তারা পড়তে চেয়েছিল। ৫৩ জন পালাতে পারে, ২৭৬ জন এখনও ইসলামি জঙ্গিদের কবলে। ওই মেয়েদের বয়স ১১ থেকে ১৮। এ ঘটনা নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বে বোর্নো রাজ্যের, যেখানে ‘বোকো হারাম’ জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি। স্থানীয় হাউসা গোষ্ঠীর ভাষায় বোকো মানে পশ্চিমি শিক্ষা; হারাম মানে পাপ। ওদের ভয়ে এ অঞ্চলের প্রায় সব স্কুল বন্ধ। এই স্কুলও বন্ধ ছিল, সে দিন মেয়েরা বোর্ডের পরীক্ষা দিতে এসেছিল। তাদের অপহরণ করে বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে একটি ভিডিয়োতে জানিয়েছে বোকো হারামের পান্ডা আবুবকর শেকাউ। সেটি প্রকাশের পরে পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মালয়েশিয়ার বিমান ৩৭০ জন নিয়ে হারিয়ে গেলে বা দক্ষিণ কোরিয়ার ফেরি ৩০০ জনকে নিয়ে ডুবে গেলে তৎক্ষণাৎ শিরোনাম হয়, নাইজেরিয়ার মানুষের গায়ের রং কালো বলেই কি ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে অপহরণের খবর প্রথমে পশ্চিমি কাগজে ঠিক ভাবে ঠাঁই পেল? এ প্রশ্ন স্থানীয়দের। নিজেদের প্রশাসনকেও ছেড়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন প্রথমে ঘটনা স্বীকারই করেননি। পরে বলেন, ৮ জন বাদে বাকিরা উদ্ধার হয়েছে। তাঁর স্ত্রী পেশেন্সের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এক অপহৃতার মা গ্রেফতার হন, কারণ ৬ থেকে ৮ মে রাজধানী আবুজায় ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সভা ছিল, যেখানে আসেন বহু রাষ্ট্রপ্রধান, তাঁদের সামনে মুখরক্ষা প্রেসিডেন্টের পক্ষে খুব জরুরি।
বোকো হারাম দেশে কঠোর শরিয়তি বিধান চালু করতে চায়। তাদের হাতে আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরক, যা পুলিশ বা সেনার কাছেও নেই। ২০০৯ সালে পুলিশ তাদের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ ইউসুফকে গ্রেফতার করে হত্যা করে। নতুন যে প্রধান, সে আরও কট্টর। সে ঘোষণা করেছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সমস্ত খ্রিস্টানকে চলে যেতে হবে, নয়তো ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। চার্চে আগুন লাগানো, জবাই করা, মেয়েদের অপহরণ করে ইসলাম নিতে বাধ্য করে জঙ্গিদের যৌনদাসীতে পরিণত করা, এত সব সন্ত্রাসের পর এই সবে তারা মার্কিনি তালিকায় জঙ্গি হিসেবে প্রবেশ করেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি সহশিক্ষার স্কুলে হস্টেলের মেয়েদের ছেড়ে দেয় তারা। বলে, বাড়ি গিয়ে ভাল বউ হতে। আর গলা কেটে, গুলি করে, ঘরে আটকে, সেই ঘরে আগুন আর বিস্ফোরক লাগিয়ে খুন করে ৫৯ জন ছাত্রকে। যে সব মুসলমান তাদের পথের সমালোচক, তাদেরও নির্মম ভাবে হত্যা করে। এই মেয়েদের খোঁজার জন্য সেনাবাহিনীকে সাহায্য করার অভিযোগে গত ৫ মে একটি বাজারে হানা দিয়ে লুটতরাজ করে ৩১০ জনকে হত্যা করেছে ওরা।
বাইরের চাপে নাইজেরিয়া এখন অপহরণ বিষয়ে খবর দিলে পুরস্কার ঘোষণা করছে, কিন্তু স্থানীয় মানুষরা বলছেন: অপহরণের ঠিক পরেই খবর দেওয়া হলেও সরকার গা করেনি, এখনও কোনও নজরদারি বা সেনার উপস্থিতি তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না। ১৯ দিন বাদে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল তৈরি করে সরকার। ‘ব্রিংব্যাকআওয়ারগার্লস’ বলে সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রচার শুরু হলে তবে তা পশ্চিম দুনিয়ার চোখে পড়েছে, তার পর তারা চাপ দিয়েছে, গুডলাক জোনাথনের সরকার তার পরেই কোনও উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী ও জনবহুল দেশটিতে অলিখিত প্রকরণ অনুযায়ী উত্তর ও দক্ষিণ থেকে পালা করে এক জন মুসলিম ও এক জন খ্রিস্টান প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসেন। সে প্রথা ভেঙে জোনাথন আগামী বছরে পুনর্নির্বাচিত হতে চান। সে জন্য তাঁর প্রচুর অর্থের দরকার, কারণ তিনিও অর্থের বিনিময়েই এই সব জঙ্গিগোষ্ঠীর আনুগত্য কেনেন। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তেলের মূল্যবাবদে ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থ বেপাত্তা। ব্যাঙ্কের গভর্নর পদচ্যুত। এর দায় থেকে জোনাথনও মুক্ত নন। তাই তিনি দেশের এই সংকটে আদৌ কোনও পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চিন সম্ভাব্য স্থানের সন্ধান, অপহৃতদের ছাড়ানো নিয়ে মধ্যস্থতা ইত্যাদির আশ্বাস দিয়েছে, জোনাথন তা নেবেন বলে জানিয়েছেন। অপহৃত মেয়েরা বেশির ভাগই মুসলিম, তাই কি জোনাথনের এই অনাগ্রহ? আর, পোপই বা কোথায়? ইসলামিক দেশগুলির সংগঠন ও ইসলামের ধর্মীয় নেতারাই বা কোথায়?
ওই মেয়েদের ফিরিয়ে আনার দায় গোটা পৃথিবীর। সে দায় অগ্রাহ্য করলে শুধু একটি মালালা নয়, সারা পৃথিবীই বোকো হারামদের কাছে নতিস্বীকারে বাধ্য হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy